চাঁদিপুর ও সিমলিপাল

চাঁদিপুর ও সিমলিপাল

১২/০২/২০২২ তারিখ আমারা দুজন হাওড়া থেকে ১ টা ২৫ মিনিটে জন শতাব্দী ধরে আবার ৩৫ বছর পর উড়িষ্যার বালাসোর পৌছালাম বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ ।স্টেশনের বাইরে বেড়তেই বাঁদিকে দেখলাম সারি দিয়ে অনেক অটো দাঁড়িয়ে আছে আর সামনে রয়েছে প্রাইভেট গাড়ির সারি । আমরা অটো নিয়ে চললাম বালাসোর থেকে ১৬ কিমি দূরে চাঁদিপুর। আগে থেকেই হোটেল ঠিক করা ছিল।তাই তাড়াতাড়ি হোটেলে জিনিসপত্র রেখে দু মিনিটের দুরত্বে বীচে পৌঁছে গেলাম । বিশাল চওড়া বীচ কারন সমুদ্র তখন অনেক দূরে চলে গেছে । শুনলাম দিনে দুবার জোয়ারের সময় সমুদ্র ধীরে ধীরে কাছে আসে, দু ঘণ্টা মত থেকে আবার ভাটার টানে ধীরে ধীরে দূরে চলে যায় । এরকম অদ্ভুত Hide & Seek সমুদ্র পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না । এখানকার সমুদ্র দিঘা বা পুরীর মত উত্তাল না । শান্ত ও  নম্র স্বভাবের কিন্তু অনেক দূর থেকে সমুদ্রের গর্জন শোনা যায় ।এখানকার সমুদ্রে অনেক দূর পর্যন্ত নির্ভয়ে যাওয়া যায় । চাঁদিপুরের বীচের খুব কাছেই রয়েছে বুড়িবালাম নদী বা বুঢ়াবালাঙ্গ  নদীর মোহনা যেখানে বাঘাযতিনের লড়াইয়ের ইতিহাস স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলিকে মনে  করিয়ে দেয় । এছাড়া বেশ কটা মন্দিরের মাঝে আছে নীলগিরি পাহাড়ের কোলে রাজবাড়ি ও পাহাড়ের উপর পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দির । চাঁদিপুর থেকে বালাসোর যাওয়ার রাস্তার বাঁদিকে পরে DRDO ( Defence Research and Development Organisation ) যার জন্য চাঁদিপুর সমুদ্রতট ভারতীয় সেনাবাহিনীদের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ । ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ-এর অনেকগুলি ক্ষেপণাস্ত্র (আকাশ, সূর্য, অগ্নি, পৃথ্বী ও ব্যালিস্টিক) চাঁদিপুর সমুদ্রতট থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছে। চাঁদিপুর পৌছানোর পরেরদিন এসব দেখে নিলাম । তারপরের দিন অর্থাৎ ১৪/০২/২০২২ ভোর ভোর থাকতে বেড়িয়ে পরলাম ১০০ কিমি দূরে সিমলিপাল বা বাংরিপোসি জঙ্গল দেখতে । পাহাড়ের উপর ২৭৫০ স্কোয়ার কিমি ব্যাপী বিশাল ঘন জঙ্গল । অনেকে জঙ্গলকে ভালমতো উপভোগ করতে জঙ্গলের ভিতরের গেস্টহাউসে রাত্রিবাস করে । জঙ্গলের গেটেই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অফিস । ওখান থেকেই জঙ্গলে প্রবেশ করার গেটপাস বানাতে হয় । ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া মানা । তাই ওখানেই আমাদের ভিডিও ক্যামেরা রেখে যেতে হল । মোবাইলে যতটুকু পারলাম ভিডিও করলাম । জবরদস্তি একজন গাইড আমাদের সাথে দিল যার জঙ্গল সন্মন্ধে কোন নলেজ নেই।ছোট গাড়িতে জঙ্গলের  ভিতর যাওয়া মানা ।তাই আমাদের বড় গাড়ি নিয়েই জঙ্গল ঘুরতে যেতে হোল ।  আমরা সকালে গিয়ে সারাদিন ধরে জঙ্গলের মধ্যে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরলাম ।জঙ্গলের ভিতরে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে । গাড়ি নিয়ে জঙ্গল ঘুরতে প্রায় ৭/৮ ঘণ্টা লাগে । বাঘ,হাতি সহ অনেক জন্তুর বাস এখানে । আমরা অনেক হরিণ , ময়ূর , বন্য শুয়োর , বন মুরগি , হনুমান দেখলাম । বরেহপানি(৩৯৯ মি বা ১৩০৯ ফিট) ও ঝরোন্দা নামে অসাধারণ দুটো জলপ্রপাত দেখলাম । পাহাড়ের অনেক উপর থেকে জল নিচে নেমে আসছে । সারা বছরই এই দুই জলপ্রপাত দেখা যায় । জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে ডান  দিকে ১ কিমি মত এগিয়ে দেখতে পেলাম আরেকটা জলপ্রপাত সীতাকুণ্ড । দারুন সুন্দর একটা পিকনিক স্পট ।

১. বালাসোর থেকে চাঁদিপুর অটোতে ৩০০ টাকা ভাড়া ।

২. চাঁদিপুর গাড়িতে sightseeing করতে ভাড়া লাগে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা ।

৩. চাঁদিপুর থেকে সিমলিপাল বা বাংরিপোসি জঙ্গল গাড়িতে ঘুরে আসতে ভাড়া লাগে ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা ।

৪. গেটপাস করতে ৩০০ টাকা লাগে । এছাড়া I Card দেখাতে হবে ।

৫. ৩০ টাকা নেয় একটা ব্যাগের জন্য যাতে জঙ্গল কেউ ময়লা না ফেলে ।

৬. ৩০০ টাকা নেয় গাইডের জন্য ।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s