দরজা খুলতেই সাথী দেখলো সার্থক ক্লান্ত শরীরটাকে জোর করে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসছে । জামা কাপড় গরমে একদম ভিজে গেছে । বৃষ্টি নেই অনেকদিন । চারিদিকে ভ্যাপসা গরম । পাখার হাওয়াতেও শরীর জুড়াচ্ছে না । পাখা চলছে সেটা দেখেই শান্তি । সার্থকের অফিস ধর্মতলাতে । অফিস ছুটির পর ও বড়বাজারে পার্ট টাইম কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সেই নটা – সাড়ে নটা । সকাল আটটার মধ্যেই আবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে হয় তা নাহলে বাসে বসার জায়গা পাবে না । বাসে জায়গা পাবার জন্য লম্বা লাইন পরে । কোনরকমে ঘরে ঢুকে সার্থক সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিল । সাথে সাথেই সাথী জল এনে দিল আর পাখাটা চালিয়ে দিয়ে বললো – ‘ অনেক হয়েছে , এবার পার্ট টাইম কাজটা ছাড় । যবে থেকে বাবু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছে তবে থেকে দেখছি তুমিও এই পার্ট টাইম কাজ নিয়েছো ।আমি খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছি যে তোমার শরীরের উপর দিয়ে কিরকম ধকল যাচ্ছে ।‘
- আর তো একটা বছর । দেখতে দেখতে বাবু বি টেক পাশ করে এম টেক পাশ করতে চললো । ও পাশ করে গেলে আমিও পার্ট টাইম কাজটা ছেড়ে দেব ।’
সার্থক উঠে পড়ল সোফার থেকে । ঘরে চলল জামা কাপড় বদল করতে । এদিকে সাথীও রাত্রের খাবারের আয়োজন করতে লাগলো । তাড়াতাড়ি সব শেষ করে আবার সকাল সকাল উঠতে হবে সার্থকের জন্য খাবার তৈরি করতে । সার্থক বেড়িয়ে গেলে তারপর চলবে বাবুর জন্য সবকিছু প্রস্তুত করা । বাবু ওদের একমাত্র ছেলে । পড়াশুনায় বরাবরই ভাল । মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিকে খুব ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করেছে । যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে বি টেক পাশ করার পর এখন ওখানেই এম টেক পড়ছে । আর একটা বছর । বি টেক পাশ করার পর ও চাকরী পেয়েছিল এবং চাকরী করতেও চাইছিল । কিন্তু সার্থক ও সাথী জানতো বাবু মনে মনে আরও পড়তে চায় । তাই যতই অসুবিধা হোক ওরা বাবুকে ভর্তি করে দিয়েছিল এম টেক পড়ার জন্য । সার্থক একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে । যা মাইনে পায় কোনরকমে কষ্টেসৃষ্টে চলে যায় । কিন্তু বাবুর ইঞ্জিনিয়ারিঙের পড়ার খরচার জন্য বাধ্য হয়ে আরেকটা পার্ট টাইম কাজ নিয়েছে । আর সাথী বাড়িতে কাজের লোক ছাড়িয়ে দিয়েছে । সংসার ঠিকমতো চালাতে সার্থক আর সাথী সারাদিন যন্ত্রের মতো কাজ করে যায় । ওদের দুজনের একমাত্র লক্ষ্য বাবুর পড়াশুনার যেন কোনরকম অসুবিধা না হয় । পড়াশুনার ব্যাপারে কোনরকম কার্পণ্য ওরা করতে চায় না । সার্থকের নিজের মোবাইলটা খুবই সাধারণ কিন্তু বাবুকে একটা ভাল মোবাইল কিনে দিয়েছে, ভাল ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে । বাড়িতে wifi নিয়েছে বাবুর জন্য । সংসারের কোন অভাব ওরা বাবুকে বুঝতেই দেয় না । পড়াশুনার জন্য বাবুকে কোনদিনই কিছু বলতে হয়নি । পড়াশুনাটা ও ভালবেসেই করে । ছোটবেলা থেকে বাবু একটা জিনিস খুব ভালভাবে বুঝতে পেরেছে যে ভালমতো বাঁচতে হলে ওদের মতো সংসারে পড়াশুনাটা খুব ভালভাবে করা দরকার । আর যা করতে হবে নিজের চেষ্টাতে ।
সময় দ্রুত এগিয়ে চললো । বাবু এম টেক পাশ করে একটা বড় মালটিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী পেল । তবে থাকতে হবে মুম্বাইতে । বাবু চাকরী পাওয়াতে একদিকে যেমন সার্থক আর সাথীর আনন্দ আবার আরেকদিকে খুব খারাপ লাগছে বাবুকে ওদের ছেড়ে অনেকটা দূর চলে যেতে হবে বলে । কিছু করার নেই ছেলের উন্নতির জন্য এটা মেনে নিতেই হবে ।
প্রায় দুবছর হোল বাবু মুম্বাইয়ের আন্ধেরির সাত বাংলোয় বাড়ি ভাড়া নিয়েছে ।খুব সুন্দর জায়গায় বাড়ি । পিছনেই রয়েছে বিশাল আরব সাগর । ঘরের বারান্দা থেকে সমুদ্রটা খুব সুন্দর দেখা যায় । সার্থক আর সাথীর এই বারান্দাটা খুব ভাল লাগে । কিছুদিন হোল ওরা ছেলের কাছে বেড়াতে এসেছে । সার্থক আর সাথীর দুজনেরই ছোটবেলা কেটেছে গ্রামে । কারোরই বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল ছিল না , তাই কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি । নদী দেখেছে কিন্তু কোনদিন সমুদ্র দেখেনি । তাই বাবুর কাছে এসে দুজনেই দুচোখ ভরে সমুদ্র দেখে ।সেদিনও বিকালে দুজনে চা খেতে খেতে বারান্দায় বসে সমুদ্র দেখছিল । সাথী মনে করিয়ে দিল যে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে রেডি হতে হবে । বাবু এসে ওদেরকে বাবুদের অফিসের ফ্যামিলি পার্টিতে নিয়ে যাবে । ওদের একদম যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না । খুব সঙ্কোচ বোধ হচ্ছিল । বাবু ওর অফিসের লোকদের সাথে পরিচয় করালে ওরা কথা বলবে কেমন করে । ওরা তো বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কথা বলতে পারে না । আর জীবনে কোনদিন বড় হোটেলে যায়নি । বড় হোটেলের আদব কায়দা কিছুই জানে না ।তাই যেতে চাইছিল না । কিন্তু বাবু নাছোড়বান্দা । ওর বাবা মাকে ও ওর অফিসের সবাইকে দেখাতে চায় । ওর কথা, নিজের মাতৃভাষাটা ভালভাবে না জানাটা লজ্জার , অন্য ভাষা না জানা কোন লজ্জার নয় । আর ও তো আছে কোন অসুবিধা হবে না । অগত্যা যেতেই হোল ।
গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার উল্টোদিকে এক বিশাল হোটেলে হচ্ছে পার্টি । সার্থক আর সাথী ভয়ে ভয়ে বাবুর সাথে হোটেলে প্রবেশ করলো । বাবু ওদের নিয়ে গেল একটা বড় হলে । আলোয় আলোয় ঝলমল করছে হলঘরটা । চারপাশ দিয়ে গোল করে সোফা পাতা । অনেকে বসে আছে । হোটেলের লোকজন হাতে ট্রে নিয়ে নানারকম খাবার ও পানীয় নিয়ে ঘুরছে । সবাই কি সুন্দর করে সেজে এসেছে । কোট প্যান্ট পরে বাবুকেও অন্যদের মতো লাগছে । হলে প্রবেশ করতেই বেশ কজন হাসতে হাসতে সার্থকদের দিকে এগিয়ে আসলো । সার্থক ভয়ে ভয়ে ওদের দিকে তাকাল । বাবু ওদের দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে গেল । ওরা বাবুর সাথে ইংরাজিতে কথা বলছিল । হটাৎ বাবু সার্থকদের দিকে তাকিয়ে ওদের কিছু বললো ।আর সাথে সাথে ওরা এগিয়ে এসে বললো –‘ নমস্তে আঙ্কেল , নমস্তে আনটি , আইয়ে অন্দর আইয়ে ।’ সার্থক আর সাথী ভয়ে ভয়ে হাত তুলে নমস্কার জানালো । বাবু এগিয়ে এসে সার্থক আর সাথীকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো । ধীরে ধীরে সব সোফা ভরে গেল । এইবার শুরু হোল পরিচয়পর্ব । এক এক করে মাইক হাতে নিয়ে সবাই তার পরিবারের সাথে উপস্থিত সবার পরিচয় করানো শুরু করলো । ইংরাজি ও হিন্দিতে সবাই বলছিল ঠিকই তবুও সার্থক আর সাথী মোটামুটি বুঝতে পারছিল । এই নতুন পরিবেশে ভালই লাগছিল । ভয়টাও অনেকটা কেটে গেছিল । এইবার বাবুর পালা । বাবু মাইক হাতে ইংরাজিতে বলতে শুরু করলো । কি আশ্চর্য প্রতিটা কথা সার্থক আর সাথীর বুঝতে কোন অসুবিধাই হচ্ছিল না । মনে হচ্ছিল বাবু যেন বাংলায় বলছে । এটাই বোধহয় অন্তরের টান । বাবুর কথা বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় – ‘ এনারা আমার বাবা,মা । এনাদের অকৃত্রিম ভালবাসা ও পরিশ্রম আমাকে আজ এখানে পৌঁছে দিয়েছে ।যবে থেকে বুঝতে শিখেছি তবে থেকে দেখছি এনারা এনাদের সব সাধ আহ্লাদ ত্যাগ করে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন আমাকে ভাল রাখার জন্য । আমার বাবা খুব সাধারণ চাকরী করতেন । কিন্তু ওনারা আমাকে কক্ষন অভাবটা টের পেতে দেননি। হয়ত ওনাদের পোশাক , আদব কায়দা দেখতে আধুনিক নয় কিন্তু আমি উপলব্দি করেছি ওনারা দুজনেই মন থেকে দারুন আধুনিক মনস্কা । আমার জীবনে আমার সবচেয়ে প্রিয় এই দুটি মানুষ ।’ বাবুর কথা শেষ হতেই উপস্থিত সকলে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকলো । সার্থক আর সাথীর গর্বে বুকটা ভরে উঠছিল আর চোখ দিয়ে অবিরাম জলের ধারা নেমে আসছিল । আনন্দেও যে কান্না পায় এই প্রথম ওরা উপলব্ধি করলো ।
Arpita Sengupta
খুব সুন্দর, মনের মতো লেখা পড়লাম দাদা।
Bani Paul
Bah,mon chhue galo,khub bhalo.
Tapashi Banerjee
Bah.khub sunder.Mon vore. Galo.er Madhya I ache purnnata
Tapash Banerjee
খুব খুব সুন্দর হয়েছে।
Manatosh Baroi
Great post!
Kanti S
Khub sundar galpo
Sudhir Bagchi
বা: বা: খুব সুন্দর খুব সুন্দর। খুব ভাল লাগল ভাই। তোমার লেখার হাতও তো চমৎকার সুপ্রিয়। চালিয়ে যাও ভাই। ভাল থাকো।
Chanchal Bhattacharya
খুব সুন্দর লেখা।
মন ছুঁয়ে গেল।
গল্পের শেষটা খুব-ই সদর্থক — তাই খুব ভালো লাগলো।।
Anirban Seema Chowdhury
Really nice
Tapas Sarkar
উপস্থাপন অপূর্ব সুন্দর ! Congrats
Biplab Dey
Khub sundar
Robin Das
খুব সুন্দর
Anupam Banerjee
খুব সুন্দর প্রতিবেদন।
Dalia Deb
Really nice…🌹🌹🌹🌹
Reena Dasgupta
Ki darun laglo pore👌👌👌
Rupa Bhattacharjee
দাদা গল্পটা পড়ে খুব ভালো লাগলো . দারুণ লেখা একেবারে মনকে ছুঁয়ে গেল
Swapnesh Ghosh
Darun laglo pore.monta vore gelo
Krishnasis Chatterjee
Really nice
Subhasis Dasgupta
খুবই ভাল লাগল। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত বাবা মা তাঁদের সন্তানদের জন্য নিজেদের সব সাধ আহ্লাদ ভুলে যায়- এটা প্রায় কমন। কিন্তু ডিগ্রি অর্জন করার সঙ্গেই শিক্ষিত মানুষ হওয়ার গল্পটা খুব সুন্দর।
Naru Mahato
Excellent
Amal Nath
Pore mon bhore gelo, Tilak Abhinandan janai.
Ranjan Goswami
Excellent!!
Biswanath Mondal
Excellent!!.The title of the presentation is absolutely synonymous
Priyanka Barman
কি সুন্দর! 👏💜
Mohan Lal Ghose
Excellent !
Tanima Goswami
Darun laglo pore monta vore gelo
Mamata Sengupta
খুব ই শিক্ষা মূলক প্রতিবেদন। পড়ে চোখে জল এসে গেল। “পূর্ণতা” নামের সার্থকতা খুঁজে পেলাম।
Kunal Mitra
Darun darun darun
LikeLike