১০/১২/২০১৯ আমেরিকা যাত্রা

একটু যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকে শুনে আসছি আমেরিকা একটা সাম্রাজ্যবাদী দেশ । ছোটবেলা থেকে সামন্ত্রতন্ত্র বা সামন্ত্রবাদ দেখে বড় হয়েছি । ইউরোপ গিয়ে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের ছোঁয়াও পেয়েছি । সাম্যবাদ দেখেনি বা এ জীবনে দেখতে পাবো কিনা সন্দেহ আছে । তাই যখন আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ আসলো , লাফিয়ে উঠলাম এই মনে করে যে একটা বড় সাম্রাজ্যবাদী দেশকে সামনে থেকে দেখতে পারবো বলে । আমার ছোট ছেলে এখন আমেরিকাতে কর্মরত । টিকিট কেটে আমাদের পাঠিয়ে দিল । আমাদেরকে শুধু ভিসার জন্য DS -160 form fill up করতে হবে । বড় ছেলে ফিনল্যান্ডে বসে আমাদের জন্য DS -160 form fill up করে জমা করে দিল । সাথে সাথেই Appointment confirmation letter চলে আসলো । প্রথমে একদিন যেতে হবে সেক্সপিয়ার সরণির অফিসে ও আরেকদিন যেতে হবে হো চি মিন সরণির অফিসে । অনেকেই বলল যে মিস্টার ট্রাম আসার পর আমিরিকার ভিসা পাওয়া খুব কঠিন হয়ে গেছে ।সুতরাং ছেলের প্রচুর ডকুমেন্ট এবং আমাদের প্রচুর ডকুমেন্ট ও আমাদের দুজনের দুটো করে ভিসার জন্য আলাদাভাবে তোলা ফটো নিয়ে আমাদের জন্য রাখা নিদিষ্ট সময়ে পৌঁছে গেলাম সেক্সপিয়ার সরণির অফিসে । অনেকেই বলল যে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না । গিয়ে শুনলাম মোবাইল ফোন আনা যায় তবে ভিতরে যাওয়ার আগে সেটা সাইলেন্ট বা বন্ধ করে নিয়ে যেতে হয় । লাগবে শুধু Appointment confirmation letter , DS -160 আর Passport । এই তিনটে ডকুমেন্ট নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম । মেশিনে হাতের ছাপ আর ছবি তুলে ছেড়ে দিল । খুব বেশি হলে পাঁচ মিনিট লাগলো । তারপর American Consulate office , Ho chi Min Sarani তে যে সময় এবং যেদিন যাওয়ার কথা ছিল সেদিন ঠিক সময়ে সব কাগজপত্র নিয়ে পৌঁছে গেলাম । এখানে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া মানা । সেই তিনটে জিনিস Appointment confirmation letter , DS -160 আর Passport হাতে নিয়ে আর বাকী কাগজপত্র একটা transparent file এর ভিতরে নিয়ে অফিসে ঢুকলাম । ফর্মালিটি সেরে পৌছালাম ইন্টারভিউের ঘরে । একজন আমেরিকান লেডি আমাদের ইন্টারভিউ নিচ্ছিল । মাত্র কটা প্রশ্ন – কার কাছে যাচ্ছ ? , ছেলে কি করে এবং কোথায় কাজ করে? কয় ছেলে ? বড় ছেলে কোথায় ? ওর কাছে গেছ ? তুমি কি রিটায়ার করেছো ? ব্যাস । বলল তোমাদের ভিসা approve হয়ে গেছে । আমি জানতে চাইলাম কবে ভিসা পাবো । একটা কাগজ দিল । তার মধ্যে লেখা আছে যে আমাদের ভিসা approve হয়ে গেছে এবং কোথার থেকে পাবো , কি নিয়ে যেতে হবে – এই সব । কি সুন্দর ব্যবহার । ভিসা অফিসে যাওয়ার আগে আমাদের কত টেনশন ছিল , কত ডকুমেন্ট নিয়ে গেছি । কিন্তু কিচ্ছু দেখল না । এর আগে দুবার ইউরোপ ও একবার UK এর জন্য ভিসার interview দিয়েছি । অমেরিকার ভিসা সবচেয়ে সহজ লাগলো । চারদিনের মাথায় ভিসা পেয়ে গেলাম । ১০ বছরের ভিসা ।
রাত্রি ৩ টে ১৫ মিনিটে আমাদের যাত্রা শুরু হল দমদম থেকে । বাড়িতে থাকলে ঘুম হবে না , তাই একটু আগেই পৌঁছে গেলাম দমদম এয়ার পোর্ট । আগেভাগে সব জিনিসপত্র জমা দিয়ে , ইমিগ্রেশন সেরে , সিকিউরিটি চেক করিয়ে আমাদের নিদিষ্ট গেটের সামনে গিয়ে বসলাম একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার জন্য । কেননা অনেক সময় বাকী প্লেনে ওঠার । কিন্তু ঘুমাব কি ? মশা কানের কাছে গান গেয়ে বেড়ালে এবং শরীরের খালি জায়গা দেখতে পেয়ে বসে পড়লে , কি ঘুম আসে ? অগ্যতা বসেই রইলাম । আমরা এখান থেকে যাব দোহা – লসএঞ্জেলেস – সল্টলেক সিটি । রাত্রি ৩ টে ১৫ মিনিটে আমাদের প্লেন ছাড়ল দমদম থেকে । ৬ ঘণ্টা জার্নি করে সকাল ৬ টা ৪৫ মিনিটে (ওখানকার সময় ) পৌছালাম দোহা । বিশাল এয়ারপোর্ট । আমাদের অনেকটা দূরে গিয়ে আবার সিকিউরিটি চেক সেরে লসএঞ্জেলেসের জন্য প্লেন ধরতে হবে । চলমান রাস্তা , চলমান সিঁড়ি ও কিছুটা পায়ে হেঁটে পৌছালাম এয়ারপোর্টের ভিতরেই ট্রেন ধরতে । তারপর ট্রেনে করে নিদিষ্ট টার্মিনালে । অনেকটা রাস্তা । তাই ট্রেন । ট্রেনে করে কোনদিন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ভিতরে এক টার্মিনাল থেকে অন্য টার্মিনালে যাইনি । ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে গেছি বাসে করে । তাহলেই বোঝা যাছে যে দোহা এয়ারপোর্ট কত বড় । দোহা থেকে সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে ( ওখানকার সময় ) যাত্রা শুরু করে ১৬ ঘণ্টা ২৫ মিনিট জার্নি করে লসএঞ্জেলেস পৌছালাম দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে (ওখানকার সময় ) । এই প্রথম দেখলাম কাস্টম চেক হওয়ার আগে মেশিনে একটা ফর্ম ফিলাপ করতে হল , আর মেশিনে হাতের ছাপ , চোখের ছবি ও ভিসার ছবি তুলতেই ছবি সহ একটা কাগজ বেড়িয়ে আসলো । ওটা নিয়ে কাস্টম অফিসারের কাছে যেতে হয় । কিছুই দেখল না , শুধু একটু জিজ্ঞেস করলো । ইমিগ্রেশন ও কাস্টম চেক এত সহজভাবে হবে আগে ভাবিনি । এরপর আমরা লসএঞ্জেলেসের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে টার্মিনাল ১ এ যাব । শুনলাম বাইরে বেড়িয়ে বাসে বাঁ ট্যাক্সিতে যাওয়া যায় বা এয়ারপোর্টের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা গেছে সেটা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় । ১৫ মিনিট মতো লাগবে বলল । আমরা দুজনেই হাঁটতে ভালবাসি আর বাইরের তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি , হাতে সময়ও প্রচুর , দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে , যেখানে খুশী দাঁড়ানো যাবে , তাই ঠিক করলাম হেঁটেই যাব । ওখান থেকে আমাদের রাত্রি ৯ টা ১৫ মিনিটে যাত্রা । ঘুরে ঘুরে এয়ারপোর্ট দেখতে লাগলাম । তারপর ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট জার্নি করে রাত্রি ১২ টা ৫ মিনিট নাগাদ (ওখানকার সময় ) পৌছালাম সল্টলেক সিটি।এত ঘণ্টা সময় কাটিয়েও তারিখ কিন্তু বাড়ল না । যেদিন কোলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিলাম সেই তারিখেই ওখানে পৌছালাম । সময়ের তারতম্যের জন্য এখানে আমরা একদিন বেশী পেলাম । এয়ারপোর্টের ভিতরেই ছেলে অপেক্ষা করছিলো । জিনিসপত্র নিয়ে ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম ওর বাড়ি । প্রথমেই একটা চমক । গাড়ি থেকে বোতাম টিপে গ্যারেজের লোহার গেট তুলে আমরা গাড়ি নিয়ে গ্যারেজে ঢুকে পড়লাম । কোন সিকিউরিটি গার্ড নেই । অনেক রাত । ওকেও কাল অফিস যেতে হবে তাই সবাই একটু কথাবার্তা বলে শুতে চললাম । কিন্তু ঘুম আর আসে না । কেননা আমাদের দেশে এই সময় তো দুপুর বেলা । এখানে রাত্রি , তাই ঘুমাতে হবে । কিন্তু ঘুম আর আসে না । এক দুদিন সময় লাগবে এখানকার সময়ের সাথে মিলিয়ে নিতে । ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পরেছিলাম । ঘুম ভাঙল সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ । দিনের আলো ফুটছে । জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম । দেখি কাছেই একটা পাহাড় আমাদের হাফ সার্কেল করে ঘিরে রেখেছে । যেদিকে তাকাই সেদিকই সাদা । সারা পাহাড় জুড়ে বরফ । যেখানে সূর্যের আলো পরছে সে জায়গাটা মনে হচ্ছে সোনার গয়না পরে আছে । ব্যাস আর ঘুমানোর চেষ্টাও করতে পারলাম না । দুচোখ দিয়ে প্রাণভরে শুধু দেখলাম । মনের ক্যামেরায় আর মোবাইলের ক্যামেরায় অনেক ছবি তুলে রাখলাম ।
সল্টলেক সিটি , ইউটা, আমেরিকা / SALT LAKE CITY , UTAH , AMERICA

তিনদিক পাহাড়ে ঘেরা খুবই ছিমছাম সুন্দর একটা শহর এই সল্টলেক সিটি । দূষণ মুক্ত আকাশ । এটি আমেরিকার ইউটা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী । লোকসংখ্যা ১২ লাখের একটু বেশি । উচ্চতা খুব বেশি না , ৪২২৬ ফুট কিন্তু শীতকালে মাঝে মাঝেই বরফ পরে । বিভিন্ন জায়গা থেকে শীতকালে এখানে অনেকে স্কিয়িং করতে আসে । ব্রেকফাস্ট সেরে এই সাড়ে এগারটা নাগাদ প্রথমেই গেলাম সল্ট লেক দেখতে । শহর থেকে ১৬ মাইল দূরে ১৭০০ বর্গ মাইল জুড়ে এক বিশাল লবণের লেক । লবণের ঘনত্ব যে কোন সমুদ্রের থেকে ১০ গুন বেশী যার ফলে এখানে কেউ জলে ঢুববে না । চারিদিকে পাহাড় সাদা হয়ে আছে বরফে , আর তারই মাঝে এই বিশাল লেক, সিকিমের ছাঙ্গু লেককে মনে করিয়ে দেয় । তবে ছাঙ্গু লেক থেকে এই লেক অনেক অনেক বড় । ওখান থেকে গেলাম পৃথিবীর প্রথম KFC দেখতে । ১৯৫২ সালে এই রেস্টুরেন্ট চালু হয় । প্রথমে এর নাম ছিল Harman’s Cafe , পরে হয় KFC । এখনও ভাল মতই চলছে । খিদেও পেয়ে গেছিল কিন্তু ওখানে না খেয়ে আমরা প্রথম দিন ভারতীয় রেস্টুরেন্টে গেলাম । নাম Bawarchi /Indian Cuisine । ভালই লাগলো খাবার । শুনলাম আরও কয়েকটা ভারতীয় রেস্তরা আছে যেখানে অন্য খাবারের সাথে দক্ষিণ ভারতীয় সব খাবারই পাওয়া যায় । তারপর চললাম পাহাড়ের ওপর । চারিদিকে বরফ , মধ্যে পরিষ্কার রাস্তা । অনেকটা উপরে উঠে দেখলাম চারিদিক সাদা হয়ে আছে । আর সেই সাদা পাহাড়ের মাঝে আরেকটা ছোট লেক কিন্তু লবণ হ্রদ নয় । তাপমাত্রা দেখলাম -২ ডিগ্রি । এই সল্টলেক সিটি যেহেতু পাহাড়ে ঘেরা তাই এখানে ঠাণ্ডা হাওয়ার উপদ্রপ নেই । ওখান থেকে Stadium ও University দেখে ফিরে আসলাম শহরে । সোজা চলে গেলাম Capital House যেটা আমাদের বিধানসভা ভবন । আলো দিয়ে সাজানো খুব সুন্দর এক বিশাল বাড়ি । ভিতরটা ঘুরে ঘুরে সব দেখলাম । কোন জায়গায় কোন নিরাপত্তা রক্ষী নেই । আমাদের দেশে আমরা ভাবতেই পারিনা । কেননা আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধিদের জন্য অনেক টাকা ব্যয় করে নিরাপত্তা রক্ষী রাখতে হয় । একটা জিনিষ লক্ষ্য করলাম এখানে কারখানা কম , অফিস বেশি আর চওড়া চওড়া রাস্থা যেখানে অনায়েসে একটা প্লেন নামতে পারবে । শহরের জনসাধারনের জন্য যানবাহন বলতে বাস , ট্রেন ও Uber । ট্রেনগুলো দেখতে আমাদের দেশের ট্রামের মতো তবে কামরা বেশী । এখানে একটা ভারতীয় দোকান আছে যেটার মালিক একজন নেপালি ভদ্রলোক । সরষের তেল থেকে আরম্ভ করে পাঁচফোড়ন অবধি সবই পাওয়া যায় । এখন পর্যন্ত যতটা দেখেছি আর মিশেছি এখানকার লোকজন খুবই ভদ্র , আলাপি ও হেল্পফুল ।
১৯/১২/২০১৯ সল্ট লেক সিটি থেকে লস এঞ্জেলেস

আজ রাত্রে আমার বড় ছেলে আর আমার বৌমা হেলসেঙ্কি থেকে লস এঞ্জেলেস পৌছাবে রাত্রে । তাই সকাল ১০টা নাগাদ আমরা তিনজন মানে আমি , আমার স্ত্রী ও আমার ছোট ছেলে গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম সল্ট লেক সিটি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস । প্রায় ১১ ঘণ্টার পথ । তারপর ওদের নিয়ে আমরা পাঁচজন আমেরিকা ভ্রমনে বেড়বো । দুছেলেই লেফট হ্যান্ড ড্রাইভে অভস্ত এবং গাড়ি ভালই চালায় তাই আমরা গাড়ি নিয়েই সব জায়গায় ঘুড়বো বলে ঠিক করেছি । সল্ট লেক সিটি থেকে লস এঞ্জেলেস দারুন রাস্তা । যেমনি চওড়া তেমনি সুন্দর । ১০০ থেকে ১২০ কিমি বেগে গাড়ি চালানো এখানে কোন ব্যাপারই না । সবাই চলছে দ্রুত গতিতে । এখানে ধীরে কেউ চলতে জানে না । রাস্তাটা অনেকটাই সোজা গেছে । প্রথম দিকে রাস্তার দুপাশে পেয়েছি পাহাড় আর বরফ । কোন সময় দেখেছি দুধারে ধুধু করছে পরিত্যক্ত জমি । কিছু আগাছা , ফনি মনষা আর ঝাউ গাছ এদিক ওদিক মাথা চারা দিয়ে উঠেছে । লাসভেগাসের কাছাকাছি পৌঁছে আর বরফ দেখতে পাইনি । রাস্তায় বেশ কটা শহর পেয়েছি কিন্তু আমরা শহরের পাশ দিয়েই চলে গেছি আমাদের গন্তব্যে ।একজায়গায় তো মনে হচ্ছিল চম্বলের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি । দুপাশে ছোট ছোট টিলা আর তার মধ্যে দিয়ে রাস্তা ।দূর দূরান্তরে কোন বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে না ।মনে হচ্ছিল এই বুঝি ঘোড়ায় করে ডাকাতরা নেমে আসলো । ‘শোলে’ সিনেমার কথা খুব মনে হচ্ছিল । কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার – কোন ভয় লাগছিলনা । ভালই লাগছিল । গোলাপি রঙের সব টিলা একটার পর একটা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে । অনেকটা বাঁকুড়ার মন্দিরের রঙের । দুপাশ দিয়ে রাস্তাটাকে ঘিরে রেখেছে । । এই সারা রাস্তায় অনেক ট্রাক দেখেছি কিন্তু কোন ট্রাকেরই চারিদিক খোলা নয় , কভার দেওয়া । সুতরাং কোন ট্রাকই ইচ্ছা থাকলেও পারবে না ওভার লোডেড হতে । অবশেষে রাত্রি ৯ টা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম লস এঞ্জেলেস । সোজা হোটেল। তারপর যখন রাত্রি ১১ টা নাগাদ Air port যাই তখন হাওড়া স্টেশন যাওয়ার আগে ব্রিজের ওপর গাড়ি, আগে যে গতিতে এগতো ঠিক সেমনি করেই আমরা এগিয়ে চললাম । আমেরিকাতে জ্যাম পাবো এটা আমরা ভাবিনি । যাইহোক বড় ছেলে আর বৌমা ঠিক সময়েই এসে পৌছালো । আবার অনেকদিন পর আমরা একসাথে পাঁচজন হলাম ।
২০/১২/২০১৯ লস এঞ্জেলেসে

আমরা জানি লস এঞ্জেলেস ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বড় শহর এবং হলিউড ও চলচ্চিত্রের জন্য বিখ্যাত। সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা প্রথমেই গাড়ি নিয়ে ছুটলাম Griffith Observatory tower এ । যার উচ্চতা: ১,১৩৫ ফুট (346 মিটার) এবং নির্মাণ শুরু হয়েছে: ২০ জুন, ১৯৩৩ যেখান থেকে হলিউড সাইন খুব ভাল দেখা যায় । শহর থেকে অনেকটা উপর । যেহেতু আমাদের মোবাইলে সবসময় ইন্টারনেট আছে , তাই কোন জায়গায় যেতে কাউকে না জিজ্ঞেস করেই পৌঁছে যেতে পারছি ।আমরাও পৌঁছে গেলাম Griffith Observatory tower এ । এই Observatory tower অবধি গাড়ি যায় ।তাই আর হেঁটে উঁচুতে উঠতে হয় না । অনেকটা জায়গা নিয়ে এই Observatory tower । সামনে তাকালেই একটা পাহাড় তার উপরে বড়বড় করে লেখা “HOLLYWOOD” । এই টাওয়ারের উপর থেকে লস এঞ্জেলেস শহরের অনেকটাই দেখা যায় । DOWNTOWN এর বড় বড় বাড়িগুলো তো পরিষ্কার ভাবে দেখা যায় । আকাশ খুব পরিষ্কার ছিল তাই সব ভাল মতোই দেখা যাচ্ছিল । ওখান থেকে আমরা আসলাম পৃথিবী বিখ্যাত স্টুডিও Warner Brothers দেখতে । সব ফর্মালিটি সেরে পৌঁছে গেলাম স্টুডিওর ভিতরে । একটা টোটোর মতো কিন্তু আর কিছুটা বড় একটা ব্যাটারি চালিত গাড়িতে আমাদের সাথে আরও কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের গাইড নিজেই গাড়ি চালিয়ে আমাদের নিয়ে চলল সব দেখাতে । প্রথমেই দেখলাম স্টুডিওর ভিতরে একটা কৃত্রিম শহর বানানো আছে । যেখানে অনেক সিনেমার ও সিরিয়ালের শুটিং হয়েছে এবং হয় । এছাড়া আরও নামকরা বিভিন্ন সিরিয়াল ও সিনেমার শুটিঙের জায়গায় আমাদের নিয়ে গেল আর সাথে চলছিলো ধারা বিবরণী গাইড মহাশয়ের । একটা বাড়ির ভিতর দেখলাম লস এঞ্জেলেস পুলিশ স্টেশন বানানো আছে সেখানে একটা রিসেন্ট ইংরাজি সিরিয়ালের শুটিং চলছিলো ।এরপর নিয়ে গেল স্টুডিওর ষ্টোরে । বিশাল ষ্টোর । কি নেই ? একটা সিনেমা বা সিরিয়াল করতে যা যা লাগে তার সব আছে। তা সেটা যে ধরনেরই সিনেমা বা সিরিয়াল হোক না কেন । তারপর নিয়ে গেল আরেকটা বাড়ির ভিতর যেখানে Harry potter , Batman এদের শুটিং কেমন করে হয়েছে দেখানোর জন্য । খুবই মজার । পর্যটকদের দিয়েও এই সব মজার মজার ভিডিও , ফটো তুলে দিচ্ছে । ক্যামেরার মাধ্যমে একজন মাটিতে দাঁড়ানো মানুষকে শূন্যে ভাসিয়ে ভিডিও করে দিচ্ছে । বিশাল স্টুডিও । প্রায় সারাদিন লাগে ঘুরতে ।টিকিট ৭০ ডলার একজনের ।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এল । এরপর আমরা গেলাম Hollywood Boulevard । ঝলমল করছে সারা মার্কেট । স্ট্রীট ফুডও বিক্রি হচ্ছে । খুবই জমজমাট ।একটা মজার জিনিষ দেখলাম । ফুটপাতের ওপরে অনেকটা জায়গা জুড়ে একটা একটা তাঁরার ছবি আঁকা এক একটা খোপে , আর তার ওপরে এক একটা খোপে এক একজন বিখ্যাত লোকদের নাম লেখা আছে । লোকে তার উপর দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে । অনেককে দেখলাম ওর উপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে । ওখানেই রাত্রের খাবার সেরে হোটেলে ফিরলাম ।
পরেরদিন গেলাম Universal Studio দেখতে । Warner Brothers স্টুডিও থেকে এটা আরও বড় । সারাদিনের বিনোদনের জন্য দারুন জায়গা । স্টুডিওর ভিতর ভাল ভাল খাবারের দোকান , সিনেমা হল আর আমোদনের সবরকম ব্যবস্থা আছে । টিকিট জন প্রতি ১২৫ ডলার । মুম্বাইয়ের এসেল ওয়ার্ল্ড , কোলকাতার নিকো পার্কে যে সব রাইড আছে এখানে তার থেকে আরও অনেক বেশী ও উন্নত মানের রাইড আছে । এবং প্রত্যেকটা রাইডই বিভিন্ন সিনেমার থিমের উপর যেমন জুরাসিক পার্ক, হ্যারি পটার ইত্যাদি । সব রাইড ফ্রী মানে দামটা টিকিটেই নেওয়া আছে ।আমাদের ছেলেরা আর বৌমা প্রায় সব রাইডই করলো । আমরা বেছে বেছে । Water world লেখা একটা stadium ভিতর ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম । জলের মধ্যে একটা নাটক হচ্ছিল । কি নিখুত অভিনয় , জলের মধ্যে কামান নিয়ে লড়াই । জলের মধ্যে জলদস্যুদের হাত থেকে নায়কের , রানীকে উদ্ধার করার লড়াই এক কথায় অনবদ্য । মনে হচ্ছিল সিনেমা দেখছি ।পুরো প্রোগ্রামটা আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট মত । কিন্তু সারা জীবন মনে থাকবে । এরপর স্টুডিয়োর ভিতরেই আরেক জায়গায় গেলাম যেখানে দেখাচ্ছিল খুবই সামান্য ঘটনা, শব্দের প্রয়োগে কিভাবে সিনেমাকে আরও কত সুন্দর করা যায় । লাল কেল্লায় যেমন light & sound programme হয়, তেমনি প্রোগ্রাম এখানে দেখলাম হ্যারি পটারকে নিয়ে । হ্যারি পটারকে নিয়ে একটা দারুন মজার রাইড উপভোগ করলাম । বিশাল স্টুডিও , সারা দিনেও সব দেখে শেষ করা যায় না । আমাদেরও বেশ রাত হয়ে গেছিল । তাই খাওয়া দাওয়া সেরে হোটেলে ফিরে আসলাম ।

পরেরদিন সকালবেলা ব্রেকফাস্ট সেরে গেলাম সান্টামনিকা বীচ । নীলাভ প্রশান্ত মহাসাগর শহরের গায়ে এসে ধাক্কা মারছে । শুনেছিলাম প্রশান্ত মহাসাগর নাকি খুবই শান্ত । দেখি ভালই ঢেউ আছে তবে আমাদের বঙ্গোপসাগরের থেকে কম । এই প্রশান্ত মহাসাগরই তো এশিয়াকে , আমেরিকার থেকে আলাদা করে রেখেছে। বেশ কিছুক্ষণ সমুদ্রের ধারে আমরা সবাই কাটিয়ে রওনা দিলাম সান দিয়াগো ( San Diego) ।
২২/১২ /২০১৯ সান ডিয়েগোতে ( San Diego)

সান ডিয়েগো , ক্যালিফোর্নিয়ার আর একটা বড় শহর, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী এবং লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ১২০ মাইল দূরে মেক্সিকো সীমান্তে অবস্থিত। লস এঞ্জেলেস থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগলো সান ডিয়েগো পৌছাতে । হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল । তাই সরাসরি হোটেলে পৌছালাম । হোটেলে ঘরে ঢুকে আমাদের আবাক হওয়ার পালা ।দেশে – বিদেশে এত হোটেলে থেকেছি কক্ষনও এমন হয়নি । আমাদের ঘরের টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে দেখি একটা গীতা রাখা রয়েছে । পরে জানলাম ওই হোটেলের মালিক একজন ভারতীয়। তবে আজ পর্যন্ত কোনদিন কোথাও হোটেলের ঘরে কোন ধর্মগ্রন্থ দেখিনি । বড়দিনটা এবার আমেরিকাতেই কাটালাম কিন্তু কোথাও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখিনি । আমার মনে হয় কোন উন্নত দেশই তা করে না । যাকগে এবার এখানকার কথায় আসি । এখানে একটা রেস্তরেন্টে খুব ভাল সামুদ্রিক মাছ খেলাম। সমুদ্রের পাশেই রেস্তরেন্ট , স্রিগাল গুলো কাছেই এসে বসছে । একটা ছোট বন্দর। নানা ধরনের নৌকা জলে ভাসছে । বীচে লোকজন কম । এখানে অনেক্ কটা সমুদ্রের বীচ আছে । আমরা একটার পর একটা বীচ ঘুরে বেড়াচ্ছি । একটা বীচে দেখলাম নাম লেখা রয়েছে Dog Beach । দেখলাম অনেকেই তাদের কুকুরকে নিয়ে বীচে ঘুরে বেড়াচ্ছে । একটা বীচে গিয়ে প্রচুর সি লায়ন ( Sea lion ) দেখতে পেলাম ।

শীল মাছের থেকে বেশ বড় আর মুখ দিয়ে ঘর ঘর আওয়াজ করে । কাছে গেলে তেড়ে আসে । তবে যেহেতু ওদের পা নেই তাই স্থলে জোরে যেতে পারে না । এটা আমাদের একটা উপরি পাওনা হোল ।রাত্র খেতে বেড়িয়েছি , শহরের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখি Royal India নামে একটা ভারতীয় রেস্তারা । ব্যাস ঢুকে পড়লাম। রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়েই সামনেই দেখি একটা ব্যাটারি চালিত রিক্সা নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে । আমাদের মতনই রিক্সা তবে একটু আলো দিয়ে সাজানো । গাড়ি ছিল তাই আর রিক্সা চড়া হলো না । খাওয়া দাওয়া সেরে রাত্রিবেলা শহরের মধ্যে এমন একটা জায়গায় গেলাম যেখানে সমুদ্রের জল কিছুটা শহরের মধ্যে ঢুকেছে আর ওখান থেকে শহরের ডাউনটাউন দেখার মতো । মনের আনন্দে ছবি তুললাম । ভালই রাত্রি হয়ে গেছিল তাই হোটেলে ফিরে আসলাম । পরেরদিন সকালে গেলাম কিছুটা দূরে পুরানো শহর দেখতে । সুন্দর সাজানো গোছানো শহর । একটা মিউজিয়াম দেখে ঢুকে পড়লাম । পুরানো দিনের ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে । প্রচুর খাবারের আর সুভেনিরের দোকান । মেক্সিকান সংস্কৃতির একটা ছাপ আছে । আমরা একটা মেক্সিকান রেস্তরেন্টে বসে আমাদের আহার সারলাম । মেক্সিকান খাবার যে এত ভাল লাগবে তা আগে বুঝিনি ।
২৩/১২/২০১৯ লাসভেগাস ( Las Vegas )

দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা রওনা হলাম লাস ভেগাসের উদ্দেশে । ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো থেকে নেভাডার লাস ভেগাস ৩৩১ মাইল । Jashua Tree National Park হয়ে প্রায় ৭ ঘণ্টা লাগলো আমাদের, লাস ভেগাস পৌছাতে । একদম শুনশান রাস্তা দিয়ে অনেকটা যাচ্ছিলাম কিন্তু মনে একটুও ভয় দেখা দেয়নি ।অথচ নিজেদের দেশে আমরা ভয় পাই । যাইহোক অন্ধকার হয়ে এসেছিল তাই Jashua Tree National Park খুব ভাল দেখতে পাইনি ।লাস ভেগাস আমেরিকার দক্ষিণ নেভাদা মরুভূমিতে অবস্থিত এবং বিশ্বের গ্যাম্বলিং রাজধানী হিসেবে খ্যাত। লাস ভেগাস শহরের যে সমস্ত রাস্তা জুড়ে বড় বড় হোটেল, জুয়া খেলার আখড়া বা ক্যাসিনো গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সে জায়গাটুকুকে বলা হয় লাস ভেগাস স্ট্রিপ। লাস ভেগাসের বড় বড় হোটেলগুলো তৈরি হয়েছে বিভিন্ন থিমকে ঘিরে। যেমন – কোনটা প্যারিস, কোনটা আলাদীন, কোনটা ট্রেজার আইল্যান্ড, কোনটা সিজার সম্রাট, গ্রীস, আফ্রিকা, মিশরের ফারাও রাজাদের কেন্দ্র করে তৈরি । তবে, শুধু হোটেল বা ক্যাসিনো নয়, এই শহরের এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে সুপার মার্কেট, গ্যাস স্টেশন, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি সব জায়গাতেই সাজানো থাকে জুয়া খেলার স্লট মেশিন।পৌছে প্রথমেই আমরা গেলাম হোটেলে । ১৪ তলায় আমরা ঘর পেলেম । উপর থেকে শহরটাকে খুব সুন্দর লাগছিল । আমাদের দেশে যেমন 14 th floor মানে ১৫ তলা , কিন্তু এখানে ১৪ তলা মানে 14 th floor । এখানে ground floor নেই , ground floor কে ১ ধরা হয় । হোটেলে সব জিনিষ পত্র রেখে প্রথমেই সোজা চলে গেলাম এখানকার প্রধান আকর্ষণ জুয়া খেলার আখড়া বা ক্যাসিনোতে । দারুন সাজানো জুয়ার আড্ডা । পৃথিবীর নানা জায়গার লোক বসে জুয়া খেলছে । এখানে এধরনের জুয়া খেলা আইন সিদ্দ। অনেকটা জায়গা জুড়ে নানা রকম মেশিনে জুয়া খেলা হয় এই ক্যাসিনোতে । পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ এখানে খেলার , উপার্জন নয় । অনেকটা নেপালের কাটমণ্ডর মতো । পরেরদিন সকালে গেলাম হুভার ড্যাম ( Hoover dam) দেখতে । পাহাড়ের উপর অনেকটা জায়গা জুড়ে এই ড্যাম । দুটো পাহাড়ের মধ্যে যোগাযোগ রাখছে একটা ব্রিজ । অনেকটা আমাদের শিলিগুড়ির সেভকের করনেশন ব্রিজের মতো , তবে এটা পাহাড়ের অনেক উপরে আর অনেকটা বড় । হুভার ড্যাম দেখা শেষ করে আমরা আসলাম অনেকটা লন্ডন আই এর মতো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় observation wheel বা High Roller চড়তে । পুরো ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘুরছে । একটা গোল কাচের ঘরে আমরা ঢুকলাম । তারপর সেটাকে নিয়ে নাগরদোলার মতো উপরে উটতে লাগলো ।৫৫০ ফুট । উপর থেকে পুরো শহরটাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল । গাড়িগুলোকে খেলনা মনে হচ্ছিল । আধা ঘণ্টার রাইড । দারুন অভিজ্ঞতা হল । ওর পাশেই Linq promenade স্ট্রীট ,দেখার মতো । ঝলমলে সব দোকান । তারপর আমরা গেলাম Fremont street ।আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক । রাস্তায় কেউ ম্যাজিক দেখচ্ছে, কেউ ছবি আঁকছে , কেউ গান গাইছে , আবার একদল ছেলে মেয়ে নাচ করছে । জীবন্ত রাস্তা ।ক্যাসিনো , নানা ধরনের দোকানে দোকানে ছয়লাপ । আমাদের ছেলে মেয়েরা zipline করলো । একটা উঁচু জায়গা থেকে চেয়ারে বসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দ্রত যাওয়া । ওরা zipline করতে গেল আর আমরা ঘুরে বেড়াতে লাগলাম । হটাৎ হাঁটতে হাঁটতে চোখ পড়ল একটা বড় পর্দার উপর । দেখি আমি রয়েছি স্ক্রিনে । Running video চলছিল । তাড়াতাড়ি ছবি তুলে নিলাম। অনেক্ষণ ওখানে কাটিয়ে আমরা চললাম Bellagio fountain দেখতে । অনেকটা জায়গা জুড়ে ফোয়ারা । প্রচুর ভিড় কিন্তু সবাই খুব ভদ্রভাবে আনন্দ করছে । এরকম ফোয়ারা আগেও দেখেছি । তবে এখানকার পরিবেশ অন্যরকম । চারিদিকে নানারকম দেখতে বিশাল বিশাল বাড়ি তারমধ্যে গানের সাথে চলছে ফোয়ারা । পাশেই রাস্তা প্রচুর গাড়ি যাচ্ছে কিন্তু কোন আওয়াজ নেই । তাই পরিবেশটা চমৎকার । ওখান থেকে গেলাম Hotel Venetian যেখানে ইতালির ভেনিসকে তুলে ধরা হয়েছে । মনে হচ্ছিল ভেনিসে ঘুরে বেড়াচ্ছি । একটু বেশি রাত্রি হয়ে গেছিল তাই গণ্ডলা বা নৌকায় করে ঘোরাটা বন্ধ হয়ে গেছিল । লাস ভেগাস, পর্যটকদের জন্য বিনোদনের সবরকম ব্যবস্থা করে রেখেছে ।এখন মনে হচ্ছে ক্যাপিটালিস্ট দুনিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছি ।
২৫/১২/২০১৯ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ানে ( Grand Canyon )

লস ভেগাস থেকে অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান ২৭৫ মাইল । গ্র্যান্ড ক্যানিয়ানের এই গিরিখাতটি পৃথিবীর ২০০ কোটি বছরের এক নীরব সাক্ষী যেটা দৈর্ঘ্যে ২৭৭ মাইল এবং প্রস্থে সর্বোচ্চ ১৮ মাইল এবং গভীরতায় প্রায় ১৮০০ মিটার।ঐখান দিয়ে কলোরাডো নদী কোটি কোটি বছর আগে প্রবাহিত হতো । এখন প্রায় লুপ্ত । আমরা হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিলাম অ্যারিজোনা । আকাশ মেঘলা ছিল । গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান দেখে আমরা অ্যারিজোনার আরেকটা ছোট শহর পেজে রাত কাটাবো এই ঠিক ছিল । কিন্তু রাস্তায় প্রথমে বরফের বৃষ্টি ও তারপর বরফের ঝড় পেলাম । তার ফলে আমাদের গতিবেগ কমে আসলো । বুঝতে পারছিলাম ক্যানিয়ান ভাল করে দেখা হবে না । রাস্তাতেই ঠিক হল দু একটা হোটেলের কাছকাছি টুরিস্ট স্পট দেখে সোজা চলে যাব পেজে,হোটেলে । পরেরদিন সকাল সকাল বেড়িয়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান দেখে নেবো । ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে আমরা এসে পৌছালাম Horseshoe bend এ যেটা ক্যানিয়ানেরই একটা অংশ । বড় গোলাপি পাথর কেটে যেন Horseshoe bend বানানো হয়েছে । কিন্তু আসলে এটা প্রাকিতিক নিয়মেই হয়েছে । এটা দেখতে বেশ কিছুটা হাঁটতে হয় । এরপর আমরা গেলাম Glen Canyon Dam দেখতে । অন্ধকার হয়ে আসছিল তাই আমরা পেজে হোটেলে চলে আসলাম । এখানে চিন দেশীয় লোকের বাস ভালই মনে হচ্ছিল । আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেখানেও চিনা ভাষায় নিয়মাবলী লেখা ছিল । পরেরদিন সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান ন্যাশনাল পার্কের রাস্তায় । রাস্তাটা শুধু পরিষ্কার করা কিন্তু রাস্তার দুধারে প্রচুর বরফ আর মনে হচ্ছে বরফের রাজ্যে আমরা প্রবেশ করেছি । ভালই ঠাণ্ডা । যেতে যেতে হটাৎ দেখি একটা গাড়ি বরফের মধ্যে আটকে আছে । কিছুতেই বেড় করতে পারছে না । বেড় করতে গেলেই বরফে স্লিপ করে যাছে । আমি ও আমার দুই ছেলে ঠাণ্ডার মধ্যেই নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে । দেখি একজন চিন দেশীয় ভদ্রলোক গাড়ি চালাচ্ছেন সঙ্গে রয়েছে ওনার স্ত্রী আর মেয়ে । খুবই অসুবিধায় পরেছেন । আমাদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে মনে কিছুটা জোড় পেলেন বলে মনে হল । আমরা খুব চেষ্টা করতে লাগলাম বরফের মধ্যে থেকে গাড়িটাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় তুলতে । কিন্তু পারছিলাম না । একটু পরেই আরও দুটো গাড়ি এসে পৌছাল । সবার চেষ্টাতে আমরা সফল হলাম । ওদের বিপদ কাটল । সবাই সবাইকে হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে যে যার রাস্তায় এগিয়ে চললাম । আর হয়তো কোনদিন ওদের সাথে দেখা হবে না কিন্তু ঘটনাটা সারাজীবন মনে থাকবে । অনেকটা ছড়িয়ে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান ন্যাশনাল পার্ক । অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে এনে দিয়েছে আমেরিকায় আগত পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ । প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ছুটে আসেন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বাহারি রংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।না দেখলে এটা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন । গোলাপি পাথর অনন্তকাল ধরে প্রাকিতিকভাবে এক একরকম চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । দুপাশে গোলাপি পাহাড় আর মধ্যেখান দিয়ে গেছে গিরিখাত । আমাদের মেদিনীপুরের গড়বেতাতে এর ছোট একটা অংশ দেখা যায় । তবে দুটোর মধ্যে তুলনা করা বৃথা । সারাদিন ধরে আমরা দেখলাম Grand Canyon , Marbel Canyon, Vermillion Cliff আরও কত কি যার নাম জানিনা । তারপর প্রায় ৬ ঘণ্টা জার্নি করে অনেক রাত্রে এসে পৌছালাম সল্টলেক সিটি ।
29/12/2019 সল্টলেক সিটি থেকে আরচিস ন্যাশনাল পার্ক (Arches National Park)

প্রায় ৪ ঘণ্টার পথ গাড়িতে । অনেকটা এরিয়া নিয়ে পাহাড়ের উপর গোলাপি পাথরের প্রাকৃতিক নানা রকম মূর্তি ।অবাক লাগে যখন দেখি বিরাট একটা গোলাপি পাথর আরেকটা পাথরের উপর ভর দিয়ে শূন্যে দাঁড়িয়ে আছে । আবার কোথাও মনে হচ্ছে একটা হাতি বসে আছে । নানা রকমের আকৃতি হয়ে অনন্তকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে । আর এই সব অপূর্ব শোভা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটক ছুটে আসছে । আর বাকী অঞ্চল বরফে সাদা হয়ে আছে । ওখান থেকে বেশ কটা বরফের চুড়াও দেখা যাচ্ছিল । এই সব দেখতে দেখতে কখন যে সময় চলে যায় বোঝাই যায় না । ভালই কাটল সারাদিন ।
৩০/১২/২০১৯ সল্টলেক সিটি থেকে পার্ক সিটি (Park City)

এক ঘণ্টার পথ গাড়িতে । চারিদিকে শুধু বরফ থিক থিক করছে । আর সবাই মেতে উঠেছে বরফের খেলায় । বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ মেতে উঠছে স্কিয়িং করতে । বাচ্চারা স্কিয়িং ও করছে আবার বরফের ওপর স্কেটিং ও করছে । রোপ ওয়েতে করে উপরে উঁচু পাহাড়ে নিয়ে যাচ্ছে তারপর ওখান থেকে স্কিয়িং করে সব নামছে । পার্ক সিটির সমস্ত বাড়ি ঢেকে গেছে বরফে । যাতায়াতের রাস্তা পরিষ্কার করে রাখছে সবসময় যাতে বাইরে থেকে মানুষদের আসতে কোন অসুবিধা না হয় । পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উৎসাহী মানুষজন এখানে আসে স্কিয়িং এর জন্য । অনেকে হোটেল ভাড়া করে থাকে কদিন ধরে আনন্দ করার জন্য । প্রচুর থাকার ও খাবার রেস্তোরাও আছে । দারুণ এক অভিজ্ঞতা হল । ওখান থেকে আসলাম factory outlet যেখানে বিভিন্ন factoryএর show room আছে । ওদের জিনিসের উপর ভাল discount দিচ্ছে । কিছু কেনাকাঁটা করা হল ।
৩১/১২/২০১৯ আমেরিকার সল্ট লেক সিটিতে বছরের শেষ দিনের অভিজ্ঞতা

আমরা কোলকাতা থেকে সাড়ে ১১ ঘণ্টা পিছিয়ে আছি। তাই কাল রাত্রে ছিল আমাদের বছরের শেষ দিন । কাছেই একটা পাহাড় আছে । আমরা সবাই ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে (বাইরে তখন -৩ ) , অজানাকে জানবার জন্য , গাড়ি নিয়ে চলে গেছিলাম পাহাড়ে – সমগ্র সল্ট লেক সিটিটাকে রাত ১২ টায় উপর থেকে দেখব বলে । একটা ভাল জায়গা দেখে আমরা গাড়ীর থেকে নামলাম যেখান থেকে সমগ্র সল্ট লেক সিটি আমাদের সামনে হাট করে খোলা । পুরো শহর আলোয় ঝলমল করছে । প্রতিটা বাড়ি সেজে উঠেছে আলোকসজ্জায় । চারিদিক নিশ্তব্দ । ঠিক ১২ টার সময় চার্চের ঘড়িতে বেজে উঠলো ঘণ্টা আর তার সাথে সাথেই চারিদিক থেকে ফাটতে লাগলো নানারকমের শব্দ বাজি । যেন সমস্ত সল্ট লেক সিটি আমাদের সাথে চীৎকার করে বলছে HAPPY NEW YEAR . আগামী বছর খুব ভাল থেকো তোমরা ।Best wishes for a new year filled with health & happiness.
সল্টলেক সিটি থেকে এন্তিলোপ দ্বীপ ( Antelope island )

প্রায় দু ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে পৌঁছে গেলাম Antelope island । সারা পাহাড় সাদা হয়ে আছে । তাপমাত্রা ছিল -৩ । যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই আমরা বেড়িয়েছিলাম । আমার ছেলেদের আর বৌমার এই রকম ঠাণ্ডার অভ্যাস আছে , শুধু আমাদের একটু বেশী প্রস্তুতি নিতে হয়েছে । কয়েকটা লেয়ার বাড়িয়েছি । খুব মোটা লাগছে আমাদের দুজনকেই । সল্টলেক ঘিরে রেখছে এই দ্বীপকে । কিন্তু মনে হয় সমুদ্র ঘিরে রেখেছে । অনেক জায়গায় জলের রঙ সাদা হয়ে আছে । বোঝাই যাচ্ছে না ওটা লবণ না বরফ । অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা । বেশ লম্বা বীচ । ফেরার পথে সারং বা এন্তিলোপের দেখা মিলল । হরিণের মতো , শিংটা বাঁকা ।একদল বাইসন দেখলাম ঘুরে বেড়াচ্ছে । হঠাৎ মাথায় একটু দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো । একটু এগিয়ে আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম । গাড়ি থেকে নেমে সবাই বাঁদিকে দূরে দেখতে লাগলাম । আমাদের দেখাদেখি আরও অনেক গাড়ি আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে গেল । সবাই নেমে আমরা যেদিকে দেখছি সেদিকেই তাকাতে লাগলো । কিছুই দেখতে পারছে না অথচ কেউ জিজ্ঞেসও করবে না । মজাই লাগছিল । ভাবছিলাম পৃথিবীর সব মানুষের নেচার এক । তবে পার্থক্য একটাই আমাদের দেশে লোকে জানতে চাইত কি দেখছি । আমরাও আর দেরী না করে রওনা দিলাম ।
নিউ ইয়র্ক (New York)

সেদিন ছিল ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারী , আমাদের জন্য খুবই স্পেশাল দিন । না , না , ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন’স ডের জন্য নয় । ওদিন ছিল আমাদের বিয়ের দিন । তাই ওদিনই ছোট ছেলে প্রোগ্রাম করলো নিউ ইয়র্ক ঘুরতে যাওয়ার জন্য। রাত্রি ১২ টায় সল্ট লেক সিটি থেকে আকাশপথে রওনা হয়ে ওখানকার সময়(এখান থেকে ২ ঘণ্টা এগিয়ে) ৬ টায় পৌছালাম উত্তর আমেরিকার ব্যস্ততম বিমানবন্দর জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে । বিমানবন্দরেই ফ্রেস হয়ে এবং বেশি করে প্রাতরাশ সেরে একটা ক্যাব নিয়ে রওনা হলাম মেট্রো স্টেশন । মেট্রো করে যাব ফেরী ধরতে উদ্দেশ্য স্টেটেন দ্বীপ (Staten Island)। ১৮৮৯ সালে ব্রুকলিন (Brooklyn), কুইন্স (Queens), ম্যানহাটন (Manhattan), ব্রঙ্ক্স (The Bronx), and স্টেটেন (Staten Island) এই পাঁচটি দ্বীপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী মহানগরী নিউ ইয়র্কের পত্তন হয় ।প্রথমেই চমক মেট্রো রেলে । দেখি ট্রেনের ভিতর একটা নোটিশ দেওয়া আছে ছটি ভাষায় । তার মধ্যে বাংলা একটি । স্বভাবতই বাংলায় লেখা দেখে ভাল লাগলো । ফেরী ঘাট থেকে স্টিমারে করে রওনা হলাম হাডসন নদীর (Hudson River)উপর দিয়ে । নিউ ইয়র্ক শহরটাকে খুব সুন্দর দেখা যায় এই নদীর উপর থেকে । তারপর চোখের সামনে দেখলাম ১৮৮৬ সালে তৈরি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি নামক বিশালাকার তাম্রমূর্তিটি। মন ভরে গেল । এরপর ফেরী করেই আসলাম ম্যানহাটন দ্বীপে । ম্যানহাটনই মূলত নিউইয়র্ক শহরের প্রাণ। পা রাখতেই চোখের সামনে ফুটে ওঠে ম্যানহাটনের গগনচুম্বী সব দালান বা স্কাইস্ক্রাপারের চিত্র। এম্পায়ার স্টেট, ক্রিস্লার, সিটিকর্প সেন্টার,ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার কাকে ছাড়া কাকে দেখবো । সবকটি বাড়িই মনে হচ্ছে আকাশ ছুয়ে আছে । এম্পায়ার স্টেটের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল কিংকং সিনেমার কথা । এম্পায়ার স্টেটের মাথার উপরে কিংকং বসে আছে । আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার দেখে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ৯/১১ র ধংসের সব ছবি চোখের সামনে ফুটে উঠচ্ছিল । ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনেই আছে দুটি বিশাল স্মৃতি কুম্ভ যার মধ্যে সকলের নাম লেখা আছে যারা ঐ আঘাতে মারা গেছেন ।তারপর টিকিট কেটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নতুন বাড়ির ১০২ তলা অবধি উঠে গেলাম লিফটে করে মুহূর্তের মধ্যে । চারিপাশে কাঁচ দিয়ে ঘেরা তাই উপর থেকে পরিষ্কার দেখা যায় সারা শহরটাকে । একে একে শহরের মধ্যেই দেখলাম ওয়াল স্ট্রিট(ব্যবসা-বাণিজ্য) , ব্রডওয়ে (মঞ্চনাটক), ফিফথ অ্যাভিনিউ(কেনাকাটা ) , ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ (বিজ্ঞাপন শিল্প) , গ্রিনিচ ভিলেজ ( বোহেমীয় জীবনযাপনের ধারা) , সেভেনথ অ্যাভিনিউ ( পোশাকশৈলী) , ট্যামানি হল ( কূটনীতি রাজনীতি) আর হারলেম ( জ্যাজ সঙ্গীতের আদিযুগ ও আফ্রিকান-মার্কিনীদের জীবনাকাঙ্খার ছবি ) । একটা চিনা মার্কেট দেখলাম যেখানে প্রায় বেশীরভাগ সাইন বোর্ড চিনা ভাষাতেও লেখা । আবার দেখলাম একটা ইতালি মার্কেট । কুইন্স দ্বীপে দেখলাম একটা জায়গা নাম জ্যাক্সন হাইট (Jackson Heights) প্রচুর বাঙালির দোকান এবং বাংলায় সাইনবোর্ড ।নেপালি দোকানও আছে ওখানে । পান – সিগারেটের দোকানেরও অভাব নেই । নিউ ইয়র্কে হাডসন নদীর উপর আছে বেশকটি দারুণ সুন্দর ব্রিজ যারা দুই দ্বীপকে জোড়া লাগিয়ে রেখেছে । সব কটি ব্রিজই দেখলাম কিন্তু সবচেয়ে ভাল লাগলো ব্রুকলিন ব্রিজ যেটা ১৮৮৩ সালে তৈরি । শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা বেশ ভালই দেখলাম । এখানে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ে নামে বিশ্বের বৃহত্তম দ্রুতগামী এই পাতাল রেল ব্যবস্থাটি ৪৭২টি স্টেশন নিয়ে গঠিত। গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল রেল স্টেশন দেখে মনে হয় সেভেন স্টার হোটেল এবং তার সাথে চারিদিক ঝলমল করছে একটা বিশাল মল । রাতের আলোয় টাইমস স্কোয়ার চত্ত্বর দেখে মনে হয় মেলা বসেছে । রাস্তায় দোকান , বিভিন্ন সাজে সজ্জিত মানুষজন নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে সবাইকে আনন্দ দিচ্ছে । আমেরিকার প্রায় প্রত্যেক বড় বড় শহরেই দেখতে পারছি এইরকম জমজমাট আলোকজ্জ্বল মার্কেট । নিউ ইয়র্ক টুর শেষ করলাম নিউজার্সির আটলান্টিক সিটি (Atlantic City) দেখে । আটলান্টিক সাগরের ধারে এক সুন্দর সাজানো গোছানো লাস ভেগাসের মতো ২৪ ঘণ্টা জমজমাট ক্যাসিনোর শহর এই নিউজার্সির আটলান্টিক সিটি ।সমুদ্রের পারে রয়েছে প্রচুর বিনোদনের ব্যবস্থা । আছে হাই রোলার , আছে অনেক ঝা চকচকে হোটেল আর শহরে আছে গগনচুম্বী অত্যাধুনিক বাড়ি । মনের ক্যামেরায় প্রতিটা মুহূর্তকে ধরে নিয়ে আমরা ফিলাডেলফিয়া (Philadelphia), বালটিমোড় ( Baltimore ) হয়ে রওনা দিলাম ওয়াশিংটন, ডি.সি ( Washington, D. C)।
ওয়াশিংটন, ডি.সি ( Washington, D. C)

নিউ ইয়র্ক থেকে নিউজার্সির আটলান্টিক সিটি , পেন্সিল্ভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া , ম্যারিল্যান্ডর বাল্টিমোর হয়ে রাতের আলোয় ওয়াশিংটন ডি.সি তে একটা চক্কর লাগিয়ে আমরা পৌছালাম ম্যারিল্যান্ডর Gaithersburg এ আমাদের এক নিকট আত্মীয়র বাড়ি । পরেরদিন প্রাতরাশ সেরে আমরা সবাই মিলে রওনা দিলাম আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন, ডি.সি। প্রথমেই গেলাম United States Capitol and Capitol Hill যেটা আমেরিকার সমস্ত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু । খুবই সুন্দর দেখতে । চারিপাশের পরিবেশও খুবই মনোরম । অনেকটা আমার দেখতে লাগছিল দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেটের মতো । এখানে দিল্লীর মতো শহীদ স্তম্ভ ইন্ডিয়া গেট নেই আছে স্মৃতি স্তম্ভ ৫৫৫ ফুট উচ্চতার সাদা রঙের The Washington Monument । আর United States Capitol এর চারিপাশে আছে বিভিন্ন সরকারী অফিস ও মিউজিয়াম । প্রত্যেকটা বাড়িই বিশাল আয়তনের এবং অসাধারণ তার স্তাপত্য । আমেরিকাতে বেশীরভাগ সরকারী বাড়ির রঙ দেখছি সাদা । একটু দুরেই আছে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি যেখানে থাকে সেই বিখ্যাত The White House । অনেক দূর থেকে দেখতে হয় এই বাড়ি । সামনে যাওয়ার উপায় নেই । পর্যটকদের দেখার প্রায় সবকিছুই আছে আশে পাশে । আমরা তো হেঁটে হেঁটেই সব দেখলাম । Thomas Jefferson Memorial, Smithsonian National Air and Space Museum, Vietnam Veterans Memorial, National Mall, International Spy Museum, Washington National Cathedral দেখে সব শেষে আমরা পৌছালাম Lincoln Memorial । ডুবন্ত সূর্যের আলোয় Lincoln Memorialএর পরিবেশ সারা জীবন মনে থাকবে । Lincoln Memorialএর ভিতরেই আছে একটা ছোট দীঘি , যেখানে দেখলাম হাস ঘুরে বেড়াচ্ছে । উঁচু Memorial থেকে অনেকটা দূর দেখা যায় । অস্তগামী সূর্যের আলোয় ওখান থেকে দারুণ দেখতে লাগে The Washington Monument এবং United States Capitol and Capitol Hill । বাইরে থেকে খুবই ছিমছাম শান্ত শহর এই ওয়াশিংটন, ডি.সি ।গনপরিবহনও যথেষ্ট ভাল । দ্বিতল মেট্রো রেল Washington metropolitan area , states of Maryland and Virginia এর মধ্যে যাতায়াত করে ।বড় বড় রাস্তা , পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সব জায়গা , প্রাসাদের মতো চারপাশে বাড়ি ঘর কিন্তু বেশী উঁচু না , বেশির ভাগ বাড়ির রঙ সাদা আর আমরা পেলাম নীলাভ আকাশ – এককথায় শহরটাকে ভালবাসে ফেললাম । যেহেতু সাথে গাড়ি ছিল তাই ফেরার পথে ওয়াশিংটন, ডি.সি পেড়িয়ে ঢুকে পড়লাম মেরিল্যান্ডের National Harbor এ । Potomac নদীর পাশেই এই হারবার । এখানেও নদীর পারে দেখলাম হাই রোলার । দেখলাম প্রচুর সুন্দর সুন্দর হোটেল । চোখ জুরিয়ে যায় । শেষ করার আগে একটা কথা না বলে পারছি না যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মত । নিউ ইয়র্ককে যদি বাণিজ্যিক ছবির সাথে তুলনা করি তাহলে ওয়াশিংটন, ডি.সি হল Art film ।
আমেরিকা মেতে চাই এবং সেখানে কাজ করতে চাই, কিভাবে যাবো, আমার শূধুমাত্র Indianপাসপোর্ট রয়েছে , কোনো টাকা নেই আমার কাছে তাই
LikeLike