Social Media বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে ইংরাজি হরফের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি, সেটা ইংরাজি ভাষা লিখতেই হোক বা অন্য ভাষায় যোগাযোগ করতেই হোক । তার অবশ্য কয়েকটি কারন আছে ।যেমন আমার মনে হয় ঃ-
- ইংরাজি ভাষা লেখা সহজ
- বানান ভুলের চান্স থাকে না(অবশ্য ইংরাজিটা বাংলায় লেখলেও তাই হয়)
- (আ , ই ,উ , ঊ ) -কার, রেফ এবং যুক্তাক্ষর ইংরাজি ভাষায় থাকে না
- ইংরাজি ভাষা অনেক তাড়াতাড়ি লেখা যায়
- বাংলা ভাষা অনেকে বলতে জানে কিন্তু লেখার অভ্যাস নেই
- বাংলা ভাষা অনেকে বলতে জানে কিন্তু লিখতে জানে না
যদিও একটা কথা আশাকরি সবাই মানবে যে , যোগাযোগের মাধ্যম যে ভাষায় হচ্ছে সেই ভাষার হরফ ব্যবহার করলে ভাষাটা বুঝতে অনেক বেশি সুবিধা হয় এবং ভাষাটাকে সন্মান জানানো হয় । যেহেতু বাংলা ভাষার অনেক শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে এবং বানানের অনেক নিয়ম সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে এসেছে তাই অনেক সময়ই বানান লেখতে ভুল হয়ে যায় । Social Media বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা সব ভাষার ভুল বানানের ব্যবহার দেখে দেখে অভ্যস্ত ।তাই আমার মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলাভাষার প্রতি সন্মান দেখাতে বাংলাভাষার বানানের কিছু সহজ নিয়ম বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে নিজের ভাষায় তুলে ধরছি যাতে Social Media তে বাংলা ভাষার ব্যবহারে আরও শুদ্ধতা আসে ।
- কোন শব্দের শেষে অনুস্বার (ং) উচ্চারণ হলে অনুস্বারই ব্যবহৃত হয় যেমন: পালং, রং , সং ইত্যাদি । কিন্তু অনুস্বারের সঙ্গে যদি কোন স্বর যুক্ত হয় তাহলে অনুস্বারের বদলে তা ‘ঙ’ হবে। যেমন: বাঙালি ( বাং + আলি ) , বাঙাল , ভাঙা(ভাং + আ ) ইত্যাদি । তবে ব্যাতিক্রম হচ্ছে – বাংলা ও বাংলাদেশ । বাংলা ও বাংলাদেশ কখনই বাঙলা বা বাঙলাদেশ হবে না । এছাড়া যেমন— কিংবদন্তী, সংজ্ঞা, সংক্রামণ, সংক্রান্ত, সংক্ষিপ্ত, সংখ্যা, সংগঠন, সংগ্রাম, সংগ্রহ, সংগৃহীত।
- দূরত্ব বোঝায় না এমন শব্দে ‘দ’ এর সাথে সবসময় ‘উ’ কার হবে । যেমন – দুরবস্থা, দুরন্ত, দুরাকাঙ্ক্ষা, দুরারোগ্য, দুরূহ, দুর্গা, দুর্গতি, দুর্গ, দুর্দান্ত, দুর্নীতি, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুর্নাম, দুর্ভোগ, দুর্দিন, দুর্বল, দুর্জয় ইত্যাদি।
- দূরত্ব বোঝায় এমন শব্দে ‘দ’ এর সাথে সবসময় ‘ঊ’ কার হবে । যেমন – দূর, দূরবর্তী, দূর-দূরান্ত, দূরীকরণ, অদূর, দূরত্ব, দূরবীক্ষণ ইত্যাদি।
- শব্দ বা পদের শেষে ‘জীব’ বা ‘-জীবী’ থাকলে সবসময় ঈ-কার হবে।
যেমন— সজীব, রাজীব, নির্জীব চাকরিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী ইত্যাদি। - আবার পদের শেষে ‘-বলি’ থাকলে সবসময় ই-কার হবে।
যেমন— কার্যাবলি, শর্তাবলি, ব্যাখ্যাবলি, নিয়মাবলি, তথ্যাবলি ইত্যাদি। - ইংরাজি শব্দে যেখানে st আছে যেমন Post, Station সেখানে st এর জায়গায় বাংলায় ‘স্ট’(স +ট ) ব্যবহার হবে। যেমন—পোস্ট, স্টার, স্টাফ, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, স্ট্যাটাস, মাস্টার, ডাস্টার, পোস্টার, স্টুডিও, ফাস্ট, লাস্ট, বেস্ট ইত্যাদি। এছাড়া ট-বর্গীয় বর্ণে ‘ষ্ট’( ষ +ট ) ব্যবহার হবে। যেমন— বৃষ্টি, কৃষ্টি, সৃষ্টি, দৃষ্টি, মিষ্টি, নষ্ট, কষ্ট, তুষ্ট, সন্তুষ্ট ইত্যাদি।
- পূর্ণ শব্দটি যেখানেই থাক ‘প’ এর সাথে ‘ঊ’ আর ‘ণ’ এর সারে ‘রেফ’ হবে । যেমন – পূর্ণরূপ, পূর্ণমান, সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ ইত্যাদি।
- কিন্তু পুন শব্দটি থাকলে ‘প’ এর সাথে ‘উ’ আর ‘ন’ হবে । যেমন – পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পুনঃপুন,পুনর্জীবিত, পুনর্নিয়োগ, পুনর্নির্মাণ, পুনর্মিলন, পুনর্লাভ, পুনর্মুদ্রিত, পুনরুদ্ধার, পুনর্বিচার, পুনর্বিবেচনা, পুনর্গঠন, পুনর্বাসন ইত্যাদি।
- পদের শেষে ‘-গ্রস্থ’(স+থ) নয় ‘-গ্রস্ত’(স+ত) হবে।যেমন— বাধাগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত ইত্যাদি।
- যে শব্দে অঞ্জলি আছে সেখানে ‘ই’ কার যোগ হবে । যেমন – অঞ্জলি, গীতাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি ইত্যাদি।
- বিদেশি শব্দ বাংলায় প্রকাশ করার সময় ‘ণ’, ‘ছ’, ‘ষ’ এর ব্যবহার হবে না। যেমন— হর্ন, কর্নার, সমিল (করাতকল), স্টার, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি।
- ইংরেজি ‘S’ বর্ণের জায়গায় বাংলা প্রতিবর্ণ হবে ‘স’ এবং sh, -sion, -tion শব্দগুচ্ছে ‘শ’ হবে।যেমন— সিট (Seat/Sit), শিট, (Sheet), রেজিস্ট্রেশন (Registration), মিশন (Mission) ইত্যাদি।
- বিদেশি শব্দে ‘ই-কার’ ব্যবহার হবে। যেমন— আইসক্রিম, স্টিমার, জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারি, ডিগ্রি, চিফ, শিট, শিপ, নমিনি, কিডনি, ফ্রি, ফি, ফিস, স্কিন, স্ক্রিন, স্কলারশিপ, পার্টনারশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, লটারি, সেক্রেটারি, টেরিটরি, ক্যাটাগরি, ট্রেজারি, ব্রিজ, প্রাইমারি, মার্কশিট, গ্রেডশিট ইত্যাদি।
- বিশেষণবাচক কোন শব্দের সাথে ‘আলি’ যোগ হলে শব্দে ‘ই-কার’ হবে।
যেমন— সোনালি, রুপালি, বর্ণালি, হেঁয়ালি, খেয়ালি, মিতালি ইত্যাদি। - অদ্ভুত, ভুতুড়ে বানানে ‘উ-কার’ হবে। এ ছাড়া সকল ভূতে ‘ঊ-কার’ হবে।
যেমন— ভূত, ভস্মীভূত, বহির্ভূত, ভূতপূর্ব ইত্যাদি। - হীরা ও নীল অর্থে সকল বানানে ‘ঈ-কার’ হবে।যেমন— হীরা, হীরক, নীল, সুনীল, নীলক, নীলিমা ইত্যাদি।
- যেকোন ভাষা ও যেকোন জাতি বোঝাতে ‘ই-কার’ ব্যবহৃত হবে। যেমন— বাঙালি/বাঙ্গালি, জাপানি, ইংরেজি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি।
- কোন শব্দের সাথে ‘-কারী’ বা ‘আরী’ যোগ করলে যদি কোন ব্যক্তিকে বোঝায় তাহলে ‘ঈ-কার’ ব্যবহৃত হবে।যেমন— সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি।কিন্তু যদি কোন ব্যক্তিকে না বোঝায় তাহলে ‘ই-কার’ হবে । যেমন— সরকারি, দরকারি ইত্যাদি।
- কোন শব্দের সাথে ‘-কারী’ বা ‘আরী’ যোগ করলে যদি একের বেশি ব্যক্তিকে বোঝায় তাহলে ‘ই-কার’ ব্যবহৃত হবে। যেমন— সহকারী>সহকারিগণ, কর্মচারী>কর্মচারিগণ,কর্মী>কর্মিগণ, আবেদনকারী>আবেদনকারিগণ ইত্যাদি।
- বহু বা অনেক অর্থে ব্যবহৃত হবে ‘ বেশি’ আর শব্দের শেষে ব্যবহৃত হলে হবে ‘বেশী’ । যেমন – ছদ্মবেশী, প্রতিবেশী ইত্যাদি ।
- রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্ত হলে সেটা কখনই দ্বিত্ব হবে না৷
যেমন— অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য৷ - ‘ঈ-কার’ যুক্ত শব্দের শেষে “ ত্ব, তা, নী, ণী, সভা, পরিষদ, জগৎ, বিদ্যা, তত্ত্ব ” যোগ হলে ঈ-কারটা ‘ই-কার’ হয়ে যাবে । যেমন— দায়ী/ দায়িত্ব, প্রতিদ্বন্দ্বী/ প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রার্থী/প্রার্থিতা , দুঃখী/দুঃখিনী, অধিকারী/অধিকারিণী, সহযোগী/সহযোগিতা, মন্ত্রী/মন্ত্রিত্ব, মন্ত্রিসভা, মন্ত্রিপরিষদ, প্রাণী/প্রাণিবিদ্যা, প্রাণিতত্ত্ব, প্রাণিজগৎ, প্রাণিসম্পদ ইত্যাদি।
- আবার ‘ই-কার’ যুক্ত শব্দের সাথে “ ঈ, ঈয়, অনীয় ” যোগ হলে ‘ই-কার’ ‘ঈ-কার’ হয়ে যাবে । যেমন— জাতি/জাতীয়, দেশি/দেশীয়, পানি/পানীয়, জলীয়, স্থানীয়, স্মরণীয়, বরণীয়, গোপনীয়, ভারতীয়, মাননীয়, বায়বীয়, প্রয়োজনীয়, পালনীয়, তুলনীয়, শোচনীয়, রাজকীয়, লক্ষণীয়, করণীয়।
- ‘ৎ’-এর সাথে স্বরচিহ্ন যোগ হলে ‘ত’ হবে। যেমন— জগৎ>জগতে জাগতিক, বিদ্যুৎ>বিদ্যুতে বৈদ্যুতিক, ভবিষ্যৎ>ভবিষ্যতে, আত্মসাৎ>আত্মসাতে , সাক্ষাৎ>সাক্ষাতে ইত্যাদি।
- ‘অ-কারের’ সাথে ‘ইক’ প্রত্যয় যুক্ত হলে ‘অ-কার’ , ‘আ-কার’ হয়ে যাবে । যেমন— অঙ্গ>আঙ্গিক, বর্ষ>বার্ষিক,পরস্পর>পারস্পরিক, সংস্কৃত>সাংস্কৃতিক, অর্থ>আর্থিক, পরলোক>পারলৌকিক, প্রকৃত>প্রাকৃতিক, প্রসঙ্গ>প্রাসঙ্গিক, সংসার>সাংসারিক, সপ্তাহ>সাপ্তাহিক, সময়>সাময়িক, সংবাদ>সাংবাদিক, প্রদেশ>প্রাদেশিক, সম্প্রদায়>সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি।
Partha Pratim Dasgupta
হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মাতৃভাষার সঠিক মূল্যায়ন এবং শিক্ষামূলক প্রচেষ্টা উৎসাহ-জনক ও ধন্যবাদ যোগ্য।
Soma Dasgupta
খুব সহজ ভাবে খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছো। ভীষণ ভালো লাগলো।
Chanchal Bhattacharya
নি:সন্দেহে খুব-ই প্রাসঙ্গিক এবং শুভ উদ্যোগ।।
Gautam Chaki
সুন্দর প্রচেষ্টা।
LikeLike
Bangla banam। Shikho akti book লিখুন অন্তত যাদের হাতে মোবাইল নেই তারা উপকৃত হবেন
LikeLiked by 1 person
Thank you
LikeLike
দারুণ দারুণ ভাই। কি আর বলব। তুমি সত্যি বিশাল গুণী লোক। কত পড়াশুনা তুমি কর সে সব তোমার এই সব কাজের থেকেই বোঝা যায়। খুব ভাল লাগল ভাই। নানা ঝামেলায় সময় কোথা দিয়ে চলে যায় বুঝতে পারি না। তাই এত সুন্দর তোমার কাজ গুলো খেয়াল করতে পারিনি। আর এতটা বেখেয়াল হবো না। ভাল থাকো ভাই।
LikeLiked by 1 person
খুব ভাল লাগলো আপনার মন্তব্য । খুব উৎসাহিত হলাম । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
LikeLike
আমি তো তোমাদের সব কাজের-ই প্রশংসক ও শুভার্থি। এবারের টা তো আমার নিজেরই অনেক ভুল ঠিক করতে কাজে লাগছে। সেজন্য এবার একটু বেশি প্রশংসা করি। ভালো থেকো। শুভেচ্ছা নিও।
LikeLiked by 1 person
অনেক অনেক ধন্যবাদ
LikeLike