প্রকৃতি আমাদের উত্তরবঙ্গকে অকৃত্রিমভাবে সাজিয়ে দিয়েছে । সমুদ্র ছাড়া সব আছে । বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে হিমালয় , বেশ কটা গভীর জঙ্গল, অনেকগুলো পাহাড়ি নদী , সুন্দর সুন্দর লেক আর প্রানভরা বিশুদ্ধ বাতাস । অনেকদিন বুকভরা বিশুদ্ধ বাতাস সেবন করা থেকে বঞ্চিত ছিলাম । তাই যেহেতু অনেকদিন পর শিলিগুড়ি আসলাম , আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না । একদিকে করোনার চাপ আর আরেকদিকে
প্রকৃতির তীব্র আকর্ষণ । ভাবছিলাম খাবার নিয়ে নিজের গাড়ি করে সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে যদি কোন ফাঁকা জায়গায় প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আসা যায় তাহলে কেমন হয় । তাই ঠিক করলাম সকাল সকাল বেড়িয়ে পরবো মিরিকের উদ্দেশ্যে । যদি পর্যটক কম থাকে তাহলে ঘুরবো নাহলে এগিয়ে যাব সীমানার দিকে । শালবাড়ি হয়ে, সুকনার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে , বালাসন নদীর তীরে একটা দারুন পিকনিক স্পট দুধিয়া পেড়িয়ে পৌঁছে গেলাম মিরিক । শিলিগুড়ির আমাদের বাড়ি থেকে মিরিকের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার মতো । পাহাড়ি রাস্তা তাই দুঘণ্টা মতো লাগে । তবে আমরা বিভিন্ন ফাঁকা সুন্দর জায়গায় থামতে থামতে গেছি তাই আমাদের আরেকটু বেশি সময় লেগেছে । কিছুটা পাহাড়ে উঠেই গাড়ির কাচ খুলে দিতেই প্রবেশ করলাম প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনের মধ্যে । অনেক চা বাগান দেখেছি কিন্তু মিরিকের রাস্তায় পাহাড় জুড়ে বিভিন্ন আকারের চা বাগান মন ভরিয়ে দেয় । আর নাকে ভেসে আসছিল কচি চা পাতার গন্ধ । মনে হচ্ছিল সমস্ত পাহাড় জুড়ে কেউ যেন সবুজ কার্পেট পেতে রেখেছে । মিরিক পৌঁছে দেখি পর্যটকের সংখ্যা নিতান্তই কম । বোটে ভ্রমণ বন্ধ ছিল আর লেকের জলে সেরকম মাছ দেখতে পেলাম না । মিরিকে যতবারই গেছি ততবারিই দেখেছি সারাক্ষণ রোদ আর মেঘের খেলা চলে । ব্রিজের উপরদিয়ে ওপারে গেলেই প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করা যায় । প্রতিটা গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর রোদ আর মেঘ গাছগুলোর মধ্য দিয়ে লুকোচুরি খেলচ্ছে । মিরিক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলার ছবির মতো সুন্দর একটা পর্যটন ক্ষেত্র । মিরিক নামটা এসেছে লেপচা কথা মির-ইওক থেকে যার অর্থ অগ্নিদগ্ধ স্থান ।মিরিকে যে লেকটা দেখা যায় সামনে যে লেকটা দেখতে পাচ্ছি তার নাম সুমেন্দু লেক । লেকের একদিকে আছে সুন্দর একটা বাগান আর আরেকদিকে আছে পাইন গাছের জঙ্গল । এই দুটো দিককে যুক্ত করেছে একটা ব্রিজ যার নাম ইন্দ্রেনি পুল । বেশকিছুক্ষন মিরিকে কাটিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম নেপালের বর্ডার পশুপতি ছাড়িয়ে সীমানার দিকে । মিরিক থেকে পশুপতির দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার আর ওখান থেকে সীমানা আরও ৫ কিলোমিটার । মিরিক ছাড়িয়ে পশুপতির দিকে যেতে রাস্তায় পড়লো আরও সুন্দর সুন্দর চা বাগান। এরকম চা বাগানের দৃশ্য বোধহয় পৃথিবীর কোথাও দেখা যাবে না । শিলিগুড়ি থেকে সীমানা এই ৭০ কিলোমিটার রাস্তা দারুণ সুন্দর । কোথাও খারাপ রাস্তা পাইনি । সীমানা থেকে নেপালের পাহাড় , জন বসতি সব পরিষ্কার দেখা যায় । অসাধারণ ভিউ পয়েন্ট । মেঘ থাকাতে সীমানার অত ভাল ছবি আমরা পেলাম না । বেশ শীত শীত করছিল । এমনিতে একদম ফাঁকা জায়গা তবে কিছু স্থানীয় লোকদের কয়েকটা দোকান দেখলাম এবং স্থানীয় লোকদের দেখলাম সবাই গরম জামা পরে আছে । সুন্দর একটা দিন কাটিয়ে, প্রচুর বিশুদ্ধ বাতাসে বুক ভড়িয়ে ফিরে আসলাম শিলিগুড়ি ।