আন্দোলন – সুপ্রিয় রায়

আন্দোলন – সুপ্রিয় রায়





দেখতে দেখতে ৬৫ টা বছর অতিক্রম করে চলেছি । এই ছোট্ট জীবনে তিনটে আন্দোলন আমার মনে এখন পর্যন্ত দাগ কেটেছে । আমার মনে হয়েছে এই সব আন্দোলন যা শুধু দলীয় স্বার্থে আন্দোলন করার জন্য নয়  বা যাত্রাপালার মতো নাটকীয় লোক দেখানো আন্দোলন করার জন্য নয়, এই সব আন্দোলন সারা দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আন্দোলন ।আন্দোলনগুলি সঠিক না বেঠিক সে আলচনায় যাচ্ছি না । প্রথম যে আন্দোলন আমার মনে দাগ কেটেছিল তা ছিল আমার স্কুলে পড়ার সময় “ নকশাল আন্দোলন ”। 
এই নকশাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল উত্তর বঙ্গের নকশালবাড়ি তে এবং ধীরে ধীরে তা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন ছত্তিশগড় , উড়িষ্যা ,অন্ধ্রপ্রদেশ ,মহারাষ্ট্র ,ঝাড়খণ্ড , বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।এই আন্দলনের লক্ষ্য ছিল সশত্র বিপ্লবের মাধ্যমে এমন এক সমাজ তৈরি করা যা শ্রেণীহীন, শোষণহীন, ব্যক্তি মালিকানাহীন এমন একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবাদর্শ যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার স্থলে উৎপাদনের সকল মাধ্যম এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে। এই আন্দোলন ছিল  মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদে বিশ্বাসী । 
এর পর যে দ্বিতীয় আন্দোলন মনে দাগ কেটে ছিল তা হল “ ভারতে জরুরি অবস্থা ” বিরুদ্ধে জন আন্দোলন । এই জরুরি অবস্থা ভারতবর্ষের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে হরণ করেছিল। তাই বলা হয়, ভারতবর্ষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি প্রবর্তিত জরুরি অবস্থা এক কলঙ্কিত অধ্যায়। আর দীর্ঘ একুশ মাস ধরে চলতে থাকা এই জরুরি অবস্থার সূচনা হয়েছিলো ১৯৭৫ সালের ২৬-এ জুন সকালবেলায়। তবে এর প্রস্তুতি চলেছিল অনেক আগে থেকেই। 
এরপর যে তৃতীয় আন্দোলনটি মনে দাগ কেটেছে সেটা এখনও চলছে আর সেটা হোল “ কৃষি আইনে বিরুধে আন্দোলন ”। 

এই কৃষি বিলগুলি হল ‘অত্যাবশ্যক পণ্য আইন’ সংশোধন, ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ বিল। কেন্দ্রীয় সরকারের বা শাসক দলের দাবি, এই বিলগুলির জন্য কৃষকদের রোজগার বাড়বে এবং কৃষিক্ষেত্রের উন্নতি হবে। বিরোধীদলগুলির আপত্তি সত্বেও শুধু সংখ্যাধিক্যের কারণে এই বিলগুলি পাশ করাতে শাসক দলের কোন অসুবিধাই হয়নি । এই বিলগুলি সরকার নিয়ন্ত্রিত বাজারের নিয়ন্ত্রণ থেকে কৃষকদের মুক্ত করবে এবং কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন মান্ডির বাইরেই। কৃষকদের আশঙ্কা  বাজার থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণের হাত সরে গেলে ভারতের কৃষি বাজারে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। তারফলে ব্যবসায়ীরাই ধীরে ধীরে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে শুরু করবে। তখন কৃষকরা যোগ্য দাম চাইলেও তা পাবে না । বিভিন্ন কৃষিপণ্যের জন্য তারা যে এতদিন সরকারের বেঁধে দেওয়া ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্য’ পেতেন, এই বিলগুলো পাস হওয়ার পর সেই নিশ্চয়তা আর থাকবে না।

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s