সালটা ছিল ২০১১ আর তারিখ ছিল ১৮ ই সেপ্টেম্বর । সন্ধ্যাবেলা আমরা সবাই জড় হয়েছিলাম শিলিগুরির বিঁধান মার্কেটের কাছে একটা হোটেল । অল্পবয়সী একদল ছেলে মেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে পরেরদিন আমাদের অফিসে যোগদান করতে ।তাই আমরা এসেছি ওদের সাথে পরিচিত হতে এবং আমাদের অফিস সমন্ধে ওদের কিছুটা পরিচিত করাতে ।ভালই সময় কাটছিল । হটাৎই সবার কানে আসলো ঝনঝন আওয়াজ আর একটানা গোঁ গোঁ আওয়াজ ।সবাই বেড়িয়ে আসলাম রাস্তায় । কিছু বোঝার আগে দেখলাম সামনের বাড়িগুলো দুলছে । প্রবল ঝড়ে যেমন নারকেলগাছ বা তালগাছ দোলে সেরকম দোল খাচ্ছে সামনের বাড়িগুলো । একটানা ঝনঝন ও গোঁ গোঁ আওয়াজ হয়ে চলেছে । রাস্তাটা মনে হচ্ছে সমুদ্রের মতো ঢেউ খেলছে । চারপাশে মানুষজনের কানফাটা চীৎকার । বুঝতে পারছি প্রবল ভুমিকম্প শুরু হয়েছে ।মনে হচ্ছে পৃথিবী বোধহয় ধ্বংস হতে চলেছে । এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম । সম্বিৎ ফিরতেই মনে পড়ল ঘরে স্ত্রী একা । দুই ছেলেই তখন বাইরে । হটাৎ চারিদিকের সব আলো নিভে গেল । অন্ধকার রাস্তা দিয়ে ছুটে চললাম বাড়ির দিকে । বাড়ি যাওয়ার আগেই সব শান্ত হয়ে গেল । বাড়ি পৌছাতেই দেখি পাড়ার সবাই রাস্তায় এসে জড় হয়েছে । আমাকে দেখে আমার স্ত্রী এগিয়ে আসলো । তখনও দেখি ওর চোখে মুখে ভয়ের চিহ্ন । ঘরে বসে বই পড়ছিল হটাৎ দেখে সামনের সব কিছু নড়ছে । মাথার উপর পাখাটা রীতিমতো দোল খাচ্ছে । যে বিছানায় বসে ছিল সেটা নড়ছে । তাড়াতাড়ি চাবি নিয়ে কোনরকমে দরজা বন্ধ করে বাইরে বেড়িয়ে এসেছে । তিনতলা থেকে একতলায় কি করে যে ও নেমেছে সেটা ভাবতেই ওর গায়ে জ্বর এসে যাচ্ছে । উপর থেকে নামবে কি সিঁড়িগুলো সব দোল খাচ্ছে । নৌকার মতো নাগরদোলা যেমন দোলে তেমনি দুলছিল সিঁড়িগুলো । ভুমিকম্পের পরে কেউ আর বাড়ি ঢুকছে না । আমরাও রাস্তায় ঘুরতে লাগলাম । দেখি আমাদের পাড়ার একটা বাড়ি তার পাশের বাড়ির প্রায় উপর হেলে পড়েছে । সবাই একে একে যে যার বাড়িতে ফিরতে লাগলো । আমরাও ফিরলাম । আবার আলো জ্বলে উঠল পাড়ায় পাড়ায় । টিভি খুলে জানতে পাড়লাম “ ভারতীয় স্থানীয় সময় অনুযায়ী সন্ধ্যে ৬ টা ১০ মিনিটে ৬.৯ (Mw) তীব্রতাসহ নেপাল সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চল ও ভারতের সিকিম রাজ্যে অনুভুত হয় যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা সংরক্ষণ অঞ্চল । ভূমিকম্পের প্রভাব উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ তিব্বত জুড়ে অনুভূত হয়েছিল।এই ভূ-প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কমপক্ষে ১১১ জন নিহত হওয়ার কথা জানা যায়৷ সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির খবর পাওয়া যায় সিকিম থেকে এবং পূর্ব সিকিমের সিংতাম জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সিকিমের প্রধান শহর গ্যাংটক্ -এর অনেক বহুতল ভেঙে পরে৷ নেপালে সর্বমোট ৬ জন নিহত হওয়ার কথা জানা যায় যার মধ্যে তিনজন কাঠমান্ডুর ব্রিটিশ এমব্যাসির ভেঙে পড়া দেওয়ালে পিষ্ট হয়ে মারা যান৷ বাংলাদেশ, ভুটান এবং তিব্বত জুড়ে প্রাণহানি, ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি ও সম্পত্তি নাশের কথা জানা গেছে; উত্তরাঞ্চলেও সাতজনের প্রাণহানির কথা জানা যায়।” এর পর অনেকদিন আমরা সমস্ত দরকারি নথি , সার্টিফিকেট ও চাবি সাথে নিয়ে ঘুমাতাম ।
