দেখা যায় সার্থক জানলার ধারে চেয়ারে বসে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । সাথী চা নিয়ে আসে ,সার্থককে চা দেয় ।জিজ্ঞেস করে –
সাথী – কি ভাবছ ? এটা কি শুধুই ভাবনা নাকি সঙ্গে যাতনাও আছে ?
সার্থক – না , না , শুধুই ভাবনা ।
সাথী – তা ভাল ।
সার্থক – আরে নিত্য নতুন ভাবনা আর নিত্য নতুন যাতনা না থাকলে তো জীবনটাই থমকে যাবে ।
সাথী – নিত্য নতুন ভাবনা বেঁচে থাক ।তাই বলে নিত্য নতুন যাতনা চাই না ।
সার্থক – দেখো ভাবনা তো নিজের সৃষ্টি তাই তো সুন্দর , তাই ভাবতে ভাল লাগে কিন্তু যাতনা তো অন্যের দেওয়া আঘাত তাই অসুন্দর , তাই ভাবতে ভাল লাগেনা ।
সাথী – তা একমনে কি ভাবছিলে ?
সার্থক – বুঝলে , ভাবছিলাম জন্মদিন পালন করাটা কি ঠিক হচ্চে ?
সাথী – এ আবার কেমন কথা । সব্বাইই তো জন্মদিন পালন করে ।
সাথক – তা করে । বাবা -মারা তাদের সন্তানদের জন্মদিন পালন করে , তার পিছনে একটা আবেগ আছে , সেটা মানা যায় ।
সাথী – কারণ ঐদিনটা তাদের কাছে খুবই আনন্দের ।
সাথক – একদম ঠিক, কিন্তু এর বাইরে , বয়স, আর কিছুই নয় শুধু একটা সংখ্যা মাত্র ।
সাথী – কিন্তু বয়সের যে একটা গুরুত্ব আছে সেটা তুমি অস্বীকার করতে পারবে কি ?
সার্থক – না পারবো না । দেখো , যে সব কর্মজীবনে বয়সটা প্রধান মাপকাটি , সেখানে আমি বয়স নিয়ে কিছু বলতে চাই না । কিন্তু যেখানে অভিজ্ঞতা , কর্মক্ষমতাই একমাত্র মাপকাটি সেখানে বয়সের কি কোন গুরত্ব আছে ?
সাথী – এর সাথে জন্মদিন পালন করা বা না করার কি সম্পর্ক আছে সেটা বাপু আমি বুঝলাম না ।
সার্থক – আমার মনে হয় জন্মদিন শুধু বয়স বাড়াটাকে মনে করিয়ে দেয় , সবাই ডেকে ডেকে বলে এই মানুষটার একটা বছর বয়স বেড়ে গেল । তাতে ঘণ্টা কার কি লাভ হল ?
সাথী – সবাই মিলে জন্মদিন উদযাপন করাটা সেটা কত আনন্দের বল । সবাই শুভেচ্ছা জানায় সেটাও তো খুব ভাল লাগে ।
সার্থক – যাদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা আশা করো , তারা যদি শুভেচ্ছা না জানায় তাহলে সেটাতো খারাপও লাগে ।
সাথী – এটা যাতনা তাই তো । ঐ যে তুমি বললে ভাবনা আর যাতনা না থাকলে জীবন থেমে যাবে ।
সার্থক – ( হেসে ওঠে ) দেখো অনেকে জন্মদিনটা একটা উদ্দেশ্যে পালন করে ।
সাথী – তা ঠিক । আজকাল তো ফেসবুক , হোয়াটস এপের দৌলতে জন্মদিন উপলক্ষে ঐ একটা দিন অনেকের কাছ থেকে শুভেচ্ছা , ভালবাসা পাওয়া যায় ।
সার্থক – তা ঠিক কিন্তু আমার মনে হয় জন্মদিন মানুষকে বয়সের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভুল করছে । মানুষ যদি বয়সকে ভুলে থাকতে পারে তাহলে অনেক বেশী মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারবে । বয়স মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তার সীমানা ।
সাথী – ঠিক বলেছ । জন্মদিন মনে না থাকলে বয়সের কথা সত্যি মনে থাকে না । আমি অনেক গরীব পরিশ্রমী মানুষ দেখেছি তারা জানেই না তাদের জন্মদিন । তাই মানসিকভাবে তাদের বয়সও বাড়ে না ।
সার্থক – ইউরোপ , আমেরিকার অনেক দেশেই তো দেখেছি বয়স্ক মানুষেরা বয়সকে জয় করেছে ।অবশ্য আমাদের দেশে বেশীরভাগ মেয়েরাও তাদের বয়সকে জয় করেছে ।তাই তাদের বয়স খুব ধীরে ধীরে বাড়ে ।
সাথী – আমাদের দেশের খারাপটা কি জানো ?
সার্থক – কি ?
সাথী – এখানে সবাই বলে বলে মানুষকে বুড়ো বা বুড়ি বানিয়ে দেয় । শুনতে হয় এই বয়সে এটা করা উচিৎ , এটা করা উচিৎ নয় আরও কতকি যেমন এই বয়সে গারো রঙের জামা -কাপড় পড়া উচিৎ না । এই সব আর কি ।
সার্থক – ঠিক । তাই আমার মনে হয় বয়স্কদের জন্মদিনটা ভুলে যাওয়াই উচিৎ । তাহলে নিজেদেরকে কক্ষনই বুড়ো বা বুড়ি বলে মনে হবে না । মনটাও সব সময় সতেজ থাকবে ।
সাথী – তোমার ভাবনাটা আমি উপলব্ধি করতে পারছি । কিন্তু ছোটবেলা থেকে জন্মদিনের তারিখটা ব্যবহার করতে করতে মনের মধ্যে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারবো না ।
সার্থক – সেটাই তো মুশকিল । যারা বয়সটাকে ভুলতে পারে তারা অনেক ভাল থাকে । আর যারা ভুলতে পারে না তাদের প্রতিটা জন্মদিনে বলা উচিৎ – “ এবছরের জন্মদিনটা মানছি না , মানবো না ।”
সাথী – তাহলে তো আরও বলতে হয় – “ এবছরের বয়সটাকে রুখছি , রুখবো ।”
সার্থক – তবে আর একটা কাজ করলেও অবশ্য হয় ।
সাথী – কি ? সালটা ভুলে যাওয়া আর শুধু তারিখ আর মাসটাকে মনে রাখা । দেখবে অনেকেরই ফেসবুকে জন্মদিনের তারিখে দিন আর মাস দেওয়া আছে । সালটা দেওয়া নেই ।
সার্থক – ঠিক । তাহলে জন্মদিনটাও পালন করা হবে অথচ বয়সটা বাড়বে না ।
দুজনে একসাথে হাসতে থাকে ।