অলীক বাবু – সুপ্রিয় রায়

অলীক বাবু – সুপ্রিয় রায়

অলীক বাবু ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের ভাল ছাত্র ছিলেন । চাকরীও করতেন বিজ্ঞানী হিসাবে । কিছুদিন হলো চাকরী থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন । একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকে । ভাল চাকরী করে । আর ওনার স্ত্রী কলেজে অধ্যাপনা করেন । তাই অবসর সময়ের অনেকটা সময়ই ওনাকে একা কাটাতে হয় । তার জন্য অবশ্য ওনার কোন অসুবিধা বা একাকীত্ব বোধ করার ব্যাপার নেই । যাদের বই পড়ার নেশা আছে তারা কক্ষনই একাকীত্ব বোধ করে না । অলীক বাবু তো বইয়ের পোকা । সারাদিন বই পড়ে কাটিয়ে দিতে পারেন । আর ওনার বাড়িতেও একটা ছোটখাটো লাইব্রেরী আছে ।সব বই খুব সুন্দর করে সাজানো ।নানা ধরনের বই আছে ওনাদের বাড়ির লাইব্রেরীতে । সমস্ত ধরণের বই পড়তেই ওনারা অভ্যস্ত ।সেদিন যে বইটা হাতে নিলেন তার নাম – “ মানুষ কখন ও কেন কথা বলতে শিখলো?”   বৌমা এই বইটা ওনার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল ।আগে  পড়া হয়ে উঠেনি । তাই ঠিক করলেন এই বইটাই ওনি পড়বেন । ভাবতে লাগলেন প্রথম কথা কে বলেছিল এবং কি বলেছিল । তখন তো ভাষা আবিস্কার হয় নি , কথা মানে নানারকম আওয়াজ আর তার সাথে অঙ্গভঙ্গি । বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষ সাড়ে ছ’হাজারের মতো ভাষায় কথা বলে। এই সব ভাষার উৎস কি ওই একজন পূর্বপুরুষের কাছ থেকেই এসেছিল? চিন্তা করতে খুব ভাল লাগছিল ।মনে পড়ল অধ্যাপক ফোলির লেখা – “এটাও সম্ভব যে বর্তমানে সব ভাষাই একজন পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এসেছে,” ।মনে মনে ভাবছিলেন যে জিন – বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী আমাদের প্রায় সবারই অরিজিন আফ্রিকার এক খুদ্র জনগোষ্ঠী থেকে ।তাহলে তো এই হাজার হাজার ভাষার উৎস ঐ আফ্রিকার খুদ্র জনগোষ্ঠী থেকে হওয়া উচিৎ । জীববিজ্ঞানের বিবর্তনের ইতিহাসের সূত্র ধরে বিজ্ঞানীরা ভাষা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার কাছাকাছি যেতে পেরেছেন ঠিকই এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম থেকে কিছু ধারণা পাওয়া যায় যে আমরা ঠিক কবে থেকে কথা বলতে শুরু করেছিলাম কিন্তু সেটা কি সুনিদিষ্ট করে এখনও কেউ বলতে পেরেছেন ?মানুষেরা প্রথমে নানা রকম আওয়াজ বা শব্দ বের করে তাদের ভাব আদান প্রদান করতো । তারপর নিজেদের প্রয়োজনে ভাষা সৃষ্টি করলো । ভাবতে অবাক লাগছিল অলীক বাবুর । ভাবছিলেন এ বিষয়ে তিনি তো আগে এতো গভীরভাবে ভাবেননি । ভাবতে ভাবতে চার্লস ডারউইন, নোয়াম চমস্কির  লেখা মনে পড়তে লাগলো । এক জায়গায় ভাষা নিয়ে চার্লস ডারউইন  লিখেছিলেন – ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শব্দের ইঙ্গিত, প্রাণীদের আওয়াজ ও মানুষের স্বভাবগত উচ্চারিত ধ্বনির অনুসরণ ও সংশোধন করে।’ আবার নোয়াম চমস্কির  লেখায় পাওয়া যায় – ‘ ভাষা কোনো যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। ভাষা মানুষের সৃজনী চেতনার সঙ্গে যুক্ত।’ সবচেয়ে বড় কথা পুরানো অনেক ভাষা আজ হারিয়ে গেছে এবং দিন দিন হারিয়েও যাচ্ছে আরও অনেক ভাষা । হটাৎ ওনি ভাবতে বসলেন , আচ্ছা আমরা যখন  কথা বলি তখন আমরা নানা রকমের শব্দ তৈরি করি । মানে এক একটা বর্ণের জন্য এক একরকম শব্দ । আকার , ইকার উকার প্রভৃতির  জন্য এক একরকম শব্দ । ২০ ডেসিবেলের উপরে বললে লোকে শুনতে পায় । তার নীচে আওয়াজ করলে লোকে বলে ফিসফিস করে কথা বলছি । আর মনে মনে যে সব কথা বলি তা  তো কেউ শুনতেই পায়না ।কিন্ত অনেক সময় কেউ কেউ বুঝতে পারে সামনের লোকটি মনে মনে কি বলছে মানে মনে মনে কি চিন্তা করছে ।আমরা যখন কথা বলি তখন তো একটা শব্দ তরঙ্গ তৈরি হয় এবং সেটা পরিষ্কার বোঝা যায়  কিন্তু যখন মনে মনে কথা বলি তখন কি কোনভাবে সেটাকে বোঝা যাবে । বিজ্ঞানী মানুষ । লেগে পড়লেন মানুষের মনের কথা উদ্বার করতে । ভাবতে লাগলেন  একবার যদি মানুষের মনের কথা ধরতে পারা যায় তাহলে কুকীর্তি করার আগে বা পরে দোষীকে ধরা সহজ হবে । আদা জল খেয়ে লেগে পড়লেন মনের কথা বোঝার যন্ত্র আবিষ্কারে ।দিন রাত এক করে দিলেন আবিস্কারের নেশায় । অবশেষে সুদিন আসলো ওনি সফল হলেন এমন একটা যন্ত্র আবিস্কার করতে যেটা কারও মনের কথা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবে দশ ফুট দূর থেকেও । যেহেতু যন্ত্রটি আকারে একটা পেনের মতো এবং সরু তার দিয়ে ইয়ার ফোনের সাথে যুক্ত তাই হটাৎ করে কেউ বুঝতে পারবে না । অলীক বাবু ঠিক করলেন প্রথমে তিনি পাড়ার রাজনৈতিক নেতার বাড়ি যাবেন যন্ত্রটি পরীক্ষা করতে ।কারণ সবাই জানে রাজনৈতিক নেতারা বাইরে যেটা বলেন মনে মনে অন্য কথা বলেন । যা ভাবা তাই কাজ । পৌঁছে গেলেন নেতার বাড়ি । ওনাকে দেখে নেতা একগাল হেসে বললেন – “ আরে আমার কি সৌভাগ্য যে আপনার মতো একজন বিজ্ঞানী আমার বাড়িতে পদধূলি দিয়েছেন”  ( আর মনে মনে বললেন  – ‘ কি ব্যাপার , সাতসকালে এই বুড়োটা আমার সাথে দেখা করতে আসলো কেন ?’ )। অলীক বাবু তো সব শুনতে পারছেন । তবু খুব বিনয়ের সাথে বললেন – “ এখন তো আমি অবসর গ্রহণ করেছি । হাতে অনেক সময় আছে । তাই ভাবলাম পাড়ায় যদি একটা বিজ্ঞান মঞ্চ খোলা যায় । সেই জন্যই আপনার কাছে আসা । আপনার একটু সহযোগিতার লাগবে ।” মুখের হাসিটা বজায় রেখে নেতা বললেন – “ আরে এ তো অতি উত্তম প্রস্তাব । আমি সবসময় আছি আপনাদের সঙ্গে । মাঝে মাঝে সময় পেলে আমিও যোগ দেবো । আমারও একটু শেখা হবে ।” (আর মনে মনে বললেন – ‘ না , না কোনমতেই বিজ্ঞান মঞ্চ খুলতে দেওয়া যাবে না । তাহলে সব যুক্তিবাদী তৈরি হাবে । আমার রাজনীতি করা মুশকিল হয়ে যাবে ’) । অলীক বাবু সবই বুঝলেন কিন্তু না বোঝার  ভান করে নমস্কার জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসলেন । বাড়ি এসেই তাড়াতাড়ি যন্ত্রটা স্পীকারে  লাগালেন । যন্ত্রটা সব ভালমতো রেকর্ড করতে পেরেছে কিনা দেখার জন্য । স্পীকারে নেতার প্রতিটা কথা পরিষ্কার ভাবে শোনা গেল । অলীক বাবুর আজ দারুণ আনন্দ হচ্ছে । এতদিনের পরিশ্রম সফল । চীৎকার করে ওনার স্ত্রীকে ডাকতে লাগলেন – “ কল্পনা , কল্পনা শিগগিরি এখানে এসো । দেখে যাও আমার নতুন আবিস্কার ।” আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না , দৌড়ে গিয়ে কল্পনাকে হাত ধরে  টানতে টানতে নিয়ে আসলেন । এক নিঃশ্বাসে কল্পনাকে সবকিছু বললেন , এমনকি নেতার বাড়ির সব কথোপকথনও বললেন । এইবার স্পীকার চালিয়ে নেতা মনে মনে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো সব শোনালেন । কল্পনা দারুণ খুশী । বললেন – “ এতো এক যুগান্তকারী আবিস্কার । এই প্রথম মনের কথা শোনার এক যন্ত্র আবিস্কার হল । এই যন্ত্রের কথা যখন সবাই জানতে পারবে পৃথিবী জুড়ে এক দারুণ আলোড়ন তৈরি হবে । কেননা এই যন্ত্র সব ভাষাই রেকর্ড করতে পারবে । এই যন্ত্রের দ্বারা না বলা অনেক কথাই জানতে পাড়া যাবে ।তবেই একটাই অনুরোধ বা শর্ত রেখো যাতে এই যন্ত্র ,  স্বামী -স্ত্রী যখন কথা বলবে তখন যেন কেউ ব্যবহার করতে না পারে । তাহলে স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ অনিবার্য । ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ার সম্ভবনা থাকবে প্রচুর ।” হো হো করে হাসতে হাসতে অলীক বাবু বললেন – “ OK , AGREED” ।          

2 thoughts on “অলীক বাবু – সুপ্রিয় রায়

  1. Shubhranshu Mohan Banerji
    চমৎকার লেখা উপহার পেলাম । আবার কবে পাব সেই অপেক্ষায় রইলাম ।
    সুপ্রভাত, ভালো থাকিস ।
    Himadri Majumdar
    Dada khub bhalo laglo, e rakom r o chai
    Swapan Dattaray
    Please carry on .
    Prasanta Chakraborty
    OK agreed😊😊😊😊😊😜
    Apurba Neogi
    Outstanding story .I liked it very much as it was written and described superbly
    Pratap Chatterjee
    Khub sundor lekha
    Sudhir Bagchi
    বা: বা: দারুণ হয়েছে সুপ্রিয়। তবে এরকম যন্ত্র আবিষ্কার হলে আর উপায় নাই। স্বামী স্ত্রী কেন সব সম্পর্কেই ফাটল ধরবে। প্লিজ ভাই এ রকম ভয়ংকর মেশিন তুমি আবিষ্কার কোরোনা।
    Partho Mukherjee
    Outstanding article.
    Swapnesh Ghosh
    darun mojar.valo laglo pore.
    Saktimay Chakraborty
    দারুণ খুব মজার এবং অর্থ বহ।আচ্ছা এই অবসরে আমার জানতে ইচ্ছে করছে আমরা যে ফলি artist দের কথা বলি সেটা কি অধ‍্যাপক ফলির নামানুসারে।ভাল থাকবি তা হলে আমরাও ভাল থাকবো।
    Naru Mahato
    খুব সুন্দর হয়েছে। একঘেয়েমি বন্দিদশায় একটি নতুন স্বাদ পেলাম।
    Jaba Sengupta Roy
    Nice. Noam Chomsky r ekta theory ache, amader words bolar dharane, tar artho alada bhabe prokash paye. Jemon lighthouse keeping, ba,light housekeeping. Tinte words, bolbar dharane, artho ekdum alada hoye geche. Ei rakam aro ache. Tuesday paper e foreign language learning e onar ekta baktobyo chilo.
    Tridib Mukherjee
    খুব সুন্দর লেখা। দারুণ লাগলো।
    Krishnasis Chatterjee
    Besh bhalo laglo.
    Amlan Roy Chowdhuri
    Besh laglo. Chalie ja.
    Pk Bhattacharjee
    পড়লাম খুব ভালো লাগলো তবে ভাষা সৃষ্টি থেকে ” Ok, AGREED ” এর সৃষ্টি সুন্দর মিশ্রন ।
    Papia Kargupta
    দারুন লাগলো রে গল্পঃ টা শেষ টা বেশ মজার
    Dulal Dasgupta
    Khoob bhalo laglo lekhata
    Pradip Kumar Das
    খুব সুন্দর, এই রকম মজার যন্ত্র আবিষ্কার হলে সমাজের অনেক উপকার হতে পারে, অনেক মানুষের মুখোশ খুলে যাবে ।খুব ভালো লিখেছিস
    Bimal Krishna Saha
    খুব ভালো লাগল গল্প টা পড়ে..খুব সুন্দর হয়েছে।👌👌
    Tapash Banerjee
    এই যন্ত্রের মাধ্যমে অনেক সমস্যার
    সুরাহা হবে। লেখা টা ভালো লাগলো।
    Aparajita Sengupta
    Khub bhalo laglo lekhata pore.onek kichhu janlam.
    Arindam Das
    সুপ্রিয় দা দারুন লাগলো।
    Swapna Sen Gupta
    দারুন লাগলো।এই রকম যন্ত্র বেরোলে জ্যোতিষী বিজনেস দারুন চলবে।
    Tapasi Banerjee
    Bah! Khub valo laglo.
    Bani Paul
    Besh bhalo lekha mojar bapar.
    Suman Bose
    বাঃ খুব সুন্দর ভেবেছো, এরকম যন্ত্র হলে কেউ কোন খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে, পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে যাবে।
    Sarat Mullick
    বেশ ভাল লাগল।
    Reena Dasgupta
    Darun
    Rina Ray
    Oh! Lal da ; tomar tulona nei: kolomer ki dhar go
    Abhijit Samadder
    দারুণ লাগল।
    Surajit Das Gupta
    খুব ভালো লাগলো, আবার খুব ভয়ের ব্যাপার ও বটে
    Mallika Bhattacharjee
    খুবই ভালো তিলকদা । সত্যি যদি এমনটা হতো তাহলে বুদ্ধিদিয়ে আন্দাজ করতে হতো না ।
    Aditya Sukumar
    Bah supriyo golpota bhalo laglo. Tomar lekhar haat besh bhalo.
    Ranjan Goswami
    Are bhai lege thako agami dine amader ek bandhu lekhak hisabe swikriti pabe. Good luck.
    Rinki Sen
    Khub bhalo laglo — ei bhabei amader anondo diye jeo
    Mita Sengupta
    Darun…
    Samar Ghosh
    Fantastic
    Thank You
    Runu Subhash
    Bah! Khoob sundor lekhoniti👌👍🙏🏻

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s