(১)
বয়স ৬৬ বা ৬৭ বছর , পেশা -ব্যবসা , রাজনীতির সাথে সরাসরিভাবে যুক্ত । বাড়ি দক্ষিণ কলিকাতা । নিজেদের বাড়ি , যৌথ পরিবার । ডাইবেটিস আছে , প্রত্যেকদিন ইনসুলিন নিতে হয় । হটাৎ করে খাওয়ার ইচ্ছাটা কমে গেল । শক্ত খাবার খেতে একদমই ইচ্ছা করছিল না । তার ফলে শরীর দুর্বল লাগতে লাগলো । ডাক্তার দেখাতে ওনি কিছু রুটিন টেস্ট করতে বললেন । কিন্তু টেস্টের রিপোর্টে কিছুই পাওয়া গেল না । শরীর বেশ দুর্বল হতে লাগলো ।ডাক্তার এবার কোভিড টেস্ট করতে বললেন । বেলভিউতে জানা শোনা ছিল তাই টেস্টের জন্য ওখানেই বলা হলো । ২/৬ তারিখ বেলভিউ লোক পাঠিয়ে বাড়ি থেকে লালারস সংগ্রহ করে নিয়ে গেল । তারজন্য চার্জ নিল ৪৫০০ টাকা । ৫/৬ তারিখ মেল করে ওরা জানিয়ে দিল রিপোর্ট পজিটিভ । এবার আসলো থানার থেকে ফোন আর আসলো স্বাস্থ্যভবন থেকে । জানাশোনা থাকায় সেদিনই ভর্তি হয়ে গেল বাঙ্গুর হসপিটালে । হসপিটাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে গেল। চলল চিকিৎসা । ঔষধের সাথে সাথে মাঝে মাঝেই চললো গরম জল খওয়া । এখানেও অন্য ঔষধের সাথে রইলো ভিটামিন ট্যাবলেট । কিন্তু একটা ছোট্ট সমস্যা দেখা দিল । বাঙ্গুর হসপিটালে বিকালে সবাইকে চা দিত কিন্তু সকাল বেলা চা দিত না । সকালে চা না পেলে অনেকেরই হয় পটি করার সমস্যা , আর যাদের একটু চায়ের নেশা আছে তাদেরও সকালবেলার চা চাই । সব সমস্যারই আছে সমাধান । ওনি একটা ইলেকট্রিক কেটলি আনালেন । ব্যাস হয়ে গেল সমস্যার সমাধান । ওনার ওয়ার্ডে ২৮ টা বেড ছিল । ওনি নিজেও চা খেতেন আর অনেককে খাওয়াতেন । গরম জল দিতে দেরী করলে ওনার কেটলি করতো সেই সমাধান । শুধু নিজের জন্য না , ওনি যার প্রয়োজন তার জন্যই করতেন । সবাই সাথে ভালই সময় কাটছিল । যেহেতু ওনার কোন উপসর্গ ছিল না , ১০ দিন বাদে হসপিটাল থেকে ছেড়ে দিল । রিপোর্ট আসলো নেগেটিভ । সবচেয়ে যেটা ভাল খবর তা হলো বাড়ির আর কাউকেই এই ভাইরাস আক্রমণ করতে পারেনি বা আক্রমণ করে কাবু করতে পারেনি ।
(২)
বয়স ৩৮ , ব্যাঙ্ক কর্মী , স্বামী - স্ত্রী ভাড়া থাকেন দক্ষিণ কলকাতার এক আবাসনে । গত ২০ শে জুন শনিবার দেখা দিল সর্দিকাশি সাথে জ্বর ( ১০০ ডিগ্রি থেকে ১০১ ডিগ্রি ) । ঘরে ছিল ক্যালপল । খেয়ে নিলেন । কিছুক্ষণের জন্য জ্বর কমলো কিন্তু আবার আসলো । সঙ্গে মাথা ব্যাথা , গা হাত পা ব্যাথা , সর্দিকাশি এবং দুর্বলতা । এইভাবে চলল রবিবার অবধি । সোমবার সকালে অর্থাৎ ২১/৬ তারিখ পাড়ার ক্লিনিকের এক ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলো ।ওনি পাঁচ দিনের ঔষধ দিলেন আর বললেন যদি উপসর্গ না কমে তাহলে ছয় দিনের মাথায় কোভিড টেস্ট করাতে ।যেহেতু জ্বর ১০২ ডিগ্রি থেকে কিছুতেই নামছিল না তাই বাধ্য হয়ে ওনারা ২৭/৬ তারিখ এলগিন রোডে সুরক্ষাতে যান কোভিড টেস্ট করাতে । আধঘণ্টা সময় লাগলো আর টেস্টের জন্য লাগলো ২২৫০ টাকা।পরেরদিন মেলে রিপোর্ট আসলো - পজিটিভ । কিন্তু একটা ভাল জ্বর কমে আসলো । অবশ্য মাথা ব্যাথা , গা হাত পা ব্যাথা , সর্দিকাশি এবং দুর্বলতা রয়ে গেল ।রিপোর্ট পাওয়ার পর ডাক্তার বাবুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হল এবং রিপোর্টটা ওয়াটস অ্যাপে ডাক্তার বাবুকে পাঠিয়ে দেওয়া হল । ডাক্তারবাবু অ্যান্টিবায়োটিক , ক্রোসিন , ভিটামিন আর সর্দিকাশির জন্য ঔষধ দিলেন । যেহেতু শ্বাসকষ্টের কোন অসুবিধা ছিল না তাই ডাক্তারবাবু ১২/৭ অবধি বাড়িতেই থাকার জন্য লিখে দিলেন । ২৯/৬ তারিখ স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফোন করে সব জানতে চাইলো - যেমন বাড়িতে কে কে আছে , কটা ঘর , আলাদা টয়লেট আছে কিনা , শরীরে কি কি অসুবিধা আছে এইসব । যেহেতু ওনারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই থাকেন , আলাদা ঘর এবং আলাদা টয়লেটের সুবিধা আছে তাই স্বাস্থ্য ভবন , কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের মাধ্যমে ওনাদের মেসেজ করে অনুমতি দিলেন বাড়িতে থাকার । পরেরদিন অর্থাৎ ৩০/৬ তারিখ লোকাল মিউনিসিপালিটি থেকে বাড়িতে লোক আসলো খোঁজ নিতে আর তখনই সবাই জানতে পারলো । বাকি আবাসিকরা শুরু করলো ঝামেলা করতে যাতে ওনি ওখান থেকে চলে যান । ওনার কাছে বাড়িতে থাকার অফিশিয়াল অনুমতি থাকাতে ঝামেলাটা বেশি দূর গড়ালো না । পাড়ার ছেলেরা এসে কিছু বাজার করে দিয়ে গেল । ভদ্রলোক তো প্রথম থেকেই আলাদা ঘরেই থাকছিলেন , আলাদা টয়লেটও ব্যবহার করছিলেন এবং নিষ্পত্তিযোগ্য ( disposable ) থালা ,বাসনে খাওয়া দাওয়া করছিলেন ।কিন্তু একটা অসুবিধা হচ্ছিল যে ওনাদের বাড়ির ময়লাটা কর্পোরেশনের গাড়িতে ফেলার জন্য কেউ নিতে চাইছিল না । যদিও প্রতিদিন সবার বাড়ির থেকে ময়লা নিয়ে গিয়ে কর্পোরেশনের গাড়িতে ফেলার জন্য আবাসন থেকে লোক ঠিক করা ছিল । যাইহোক এক্সট্রা চার্জ নিয়ে কর্পোরেশন থেকে নিয়ে যেতে রাজি হলো ।কষ্ট করে কোনরকমে ১৪ দিন কাটল । তারপর ওনার আর কোন উপসর্গ ছিল না ।১৩/৭ তারিখ কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন ও লোকাল থানার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে সব জানানো হলো । দুই জায়গার থেকেই ওনাকে অনুমতি দেওয়া হোল বাইরে বেড়নোর । ১৪/৭ ওনি পিয়ারলেস হসপিটাল থেকে আবার টেস্ট করলেন নেগেটিভ আসলো । যদিও ICMR এর নির্দেশ মতো আর টেস্ট করার দরকার ছিল না । এর মাঝে সবচেয়ে যেটা ভাল খবর তা হলো ওনার স্ত্রী বরাবরই সুস্থ ছিলেন এবং এখনও আছেন । এবার আসি ওনার হোল কি করে ? ব্যাঙ্কে কাজ , বিভিন্ন লোক আসছে কাজে , বুঝতেও পারেননি কখন কার থেকে সংক্রমিত হলেন ।কাজের মাঝে সবসময় খেয়ালও থাকে না স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ।