সালটা ১৯৮৬ , আমি তখন থাকতাম কলকাতাতে । সেই সময় সমগ্র দার্জিলিং পাহাড় জুড়ে সুবাস ঘিসিঙ্গের নেতৃত্বে রাজনৈতিক লড়াই চলছিল । প্রায়ই শোনা যাচ্ছিল সরকারী সম্পত্তির অগ্নিসংযোগের ঘটনা আর মৃত্যুর ঘটনা । কোন পর্যটকই তখন দার্জিলিঙে যেতে চাইছিল না । তারমধ্যে আমরা দুই বন্ধু ঠিক করলাম সান্দাকফু যাব । আমরা জানি যেহেতু গণ্ডগোলের ভয়ে পর্যটকদের কোন ভিড় নেই পাহাড়ে, তাই পাহাড়ের সব জায়গায় থাকার জায়গা পেতে কোন অসুবিধাই হাবে না । কেননা কোন জায়গাই আগে থেকে আমাদের বুক করা ছিল না । ব্যাস দুই বন্ধু পিঠে ব্যাগ চাপিয়ে উঠে বসলাম উত্তরবঙ্গের বাসে, গন্তব্য শিলিগুড়ি । ট্রেনে যেতে গেলে অনেক আগে থেকে রিজার্ভেশন করতে হতো । আর তখন উত্তরবঙ্গ যাওয়ার এতো ট্রেনও ছিল না । শিলিগুড়ি পৌছাতে দুপুর হয়ে গেল । দুপুরে কিছু খেয়ে নিয়ে তিনটে নাগাদ বাসে করে রওনা দিলাম দার্জিলিং । দার্জিলিং পৌছালাম তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে । অন্ধকার নেমে এসেছে পাহাড় জুড়ে । ঠিক করলাম গভর্নর হাউসের পাশে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের হলিডে হোমে প্রথমে যাব । কারণ আমি তখন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে কাজ করি যদিও আগে থেকে বুকিং করার সময় পাইনি । বাসস্ট্যান্ডের গা দিয়ে বাঁদিকে পাহাড়ে উঠতে লাগলাম দুই বন্ধু । কিছুটা যাওয়ার পর পুলিশ আটকাল । শুনলাম সামনের রাস্তায় মার্ডার হয়েছে । দেখলাম পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ । একজন বাঙালি পুলিশ আমাদের কাছে জানতে চাইলো আমরা কোথায় যাব , কেন এসেছি এইসব । আমরা সান্দাকফু ট্রেক করতে এসেছি শুনে আমাদের মুখের দিকে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো । তারপর কি মনে হল আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের হলিডে হোম যাওয়ার সহজ রাস্তা বলে দিল । আমরাও ধন্যবাদ জানিয়ে হালকা আলোর মধ্যে চড়াই উৎরাই পাহাড়ি রাস্তায় এগিয়ে চললাম । আগে থেকে বুকিং না থাকায় হলিডেহোমে জায়গা পেলাম না তবে ওনারা পাশেরই একটা হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিল । একদম খালি হোটেল । খুব সুন্দর একটা ঘর পেলাম সামান্য ভাড়ায় । হোটেলের মালিক খুব যত্ন সহকারে আমাদের ডিনার করালেন এবং অনেকক্ষণ কাটালেন আমাদের সাথে গল্প করে । সান্দাকফু যাব শুনে খুব উৎসাহিত করলেন । মানেভঞ্জন যাওয়ার বাস কখন গেলে পাবো সব বলে দিলেন । পরেরদিন প্রাতঃরাশ সেরে বাসে করে রওনা হলাম মানেভঞ্জন ।
বাসে করে ঘুমে আসার পর দেখলাম সামনে তিনটে রাস্তা , একটা গেছে বামদিকে সোজা তিস্তাবাজার , আর যেটা সোজা গেছে সেটা যাচ্ছে শিলিগুড়ি , আমরা যাব ডানদিকে সুখিয়াপোখরি হয়ে মানেভঞ্জন । দার্জিলিং থেকে মানেভঞ্জন ২৬ কিমি, সময় লাগে দেড় ঘণ্টা মতো । আমাদের ইচ্ছা ছিল রাত্রে মানেভঞ্জনে থাকবো । পরেরদিন সান্দাকফুর পথে রওনা হবো । মানেভঞ্জনের উচ্চতা ৭০৫৩ ফুট , ঘুম থেকে কিছুটা কম। মানেভঞ্জনের ট্রেকারস হাট একদম খালি । তাই জায়গা পেতে কোন অসুবিধাই হল না । মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু ৩২ কিমি আর মানেভঞ্জন হল সিঙ্গালিলা পাহাড়ের গেটওয়ে । নেপালি ভাষায় মনে মানে বৌদ্ধ স্তূপ আর ভঞ্জয়ং অর্থ জংশন ।সুতরাং মানেভঞ্জন মানে হলো junction of Stupas । নেপাল আর ভারতের বর্ডার এই মানেভঞ্জন । ।হাতে অনেক সময় তাই দুজনে চারিদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম ।সকাল সকাল রুটি , আলুর তরকারী আর চা খেয়ে উঠতে লাগলাম পাহাড়ে । মাটি আর পাথর দিয়ে বানানো পাহাড়ি রাস্তা । চারিদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা পাহাড়ের চড়াই ভাঙতে লাগলাম । আমরা প্রথম দিন যাব মেঘমা হয়ে গৈরিবাস (৮৫৯৯ ফুট) । ওখানকার ট্রেকারস হাটে রাত কাটিয়ে পরেরদিন যাব সান্দাকফু । সান্দাকফু (১১,৯৩০ ফুট) হলো পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার সিঙ্গালিলা পর্বতের সর্বোচ্চ শিখর।বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি পর্বতের চারটি এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে এবং মাকালুকে এর উপর থেকে দেখা যায়।তাই এর আকর্ষণে পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসে এখানে ।এখন তো গাড়ি করে পর্যটকেরা সোজা চলে যাচ্ছে সান্দাকফু ।আর যারা ট্রেক করতে ভালবাসে তারা এখনও ট্রেক করেই যাচ্ছে । এখনও মনে আছে রাত্রে গৈরিবাসে বনমুর্গির ঝোল আর রুটি খেয়েছিলাম যার স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে । পরেরদিন সকালে জলখাবার খেয়ে রওনা দিলাম কালা পোখরি হয়ে সান্দাকফু । রাস্তায় আমাদের সাথী হয়েছিল এক কাল রঙের পাহাড়ি কুকুর । আমরা যেহেতু আমাদের সাথে থাকা হালকা খাবার ওর সাথে শেয়ার করছিলাম তাই ও মনের আনন্দে আমাদের সাথে সাথেই চলছিল । রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে । একটা জায়গায় এসে আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোন দিকে যাবো , রাস্তায় কাউকে দেখাও যাচ্ছিল না । কিন্তু কুকুরটা আমাদের রাস্তা চিনিয়ে দিল । ও আগে আগে যে রাস্তা দিয়ে চললো আমরাও চললাম ওর পিছু পিছু । দেখলাম ঠিক এসেছি । সান্দাকফু পৌঁছে দেখি অনেকটা সমান জায়গা । বেশ কটা বাড়ি রয়েছে । যথারিথি আমরা ট্রেকারস হাটে জায়গা পেয়ে গেলাম । আমরা দুজন আর দুজন অস্ট্রেলিয়ান ।আকাশে ভালই মেঘ ছিল । তাই চিন্তা হচ্ছিল কাল সব শৃঙ্গগুলো দেখতে পাবো তো । নইলে আসাটা বিফলে যাবে । রাত্রে খাওয়দাওয়ার পর চারজনে আড্ডা দিচ্ছিলাম । অনেক রাত অবধি গল্প চলছিল তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিজেই জানি না । খুব ভোরেই সবার ঘুম ভাঙল । বেড়িয়ে আসলাম বাইরে । দারুণ ঠাণ্ডা । আমাদের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম তুষার ধবল এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে এবং মাকালুকে । ডান দিক থেকে সূর্য উঠছিল । তার আলো গিয়ে পড়ছিল বরফে ঢাকা সব পাহাড়ের চুড়ায় । সোনার রঙের মতো চকচক করছিল চুড়াগুলি । আমরা যে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার সামনে ছিল আরেকটা পাহাড় । মধ্যেখানে গভীর খাদ। খাদের মধ্যে দিয়ে মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছিল ।সূর্যের সাতটা রঙের সাথে সাথে মেঘের রঙেরও পরিবর্তন হচ্ছিল । যেন এক স্বর্গীয় রূপ । মনে হচ্ছিল মেঘগুলো গায়ে গোলাপি আবির মেখে ভেসে বেড়াচ্ছে । এই রূপ ভুলিয়ে দেবে সব দুঃখ , কষ্ট , টাকা -পয়সা , সম্পত্তি । এ এক আলাদা অনুভুতি ।তাই এখনও সান্দাকফু সবসময় আমায় পিছু ডাকে । – সুপ্রিয় রায়
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
Sujoy Banerjee
সকালটা ভীষণ সুন্দর হলো আমার.
Apurba Neogi
Superbly described amazing Tour.
Tapasi Banerjee
Nice description.
Krishnasis Chatterjee
Tor lekha sab samay khub bhaloi hoy Chobi gulo daarun laglo Oi jibon aar phire parbona. Khub apshosh hoy je char bachar North Bengal thekeo Sandakhphu dekha hoy ni. Jor Pokhri Sukhia Pokhri Manebhanjan porjonta dekhechi okhan theke Mirik er pothe chole gechi. Miriam jabar raastatao khub sundar.Je samayer kotha lekhechis se samay ki tui RO South e posted chilo?
Partho Mukherjee
Well described.momta kore uruuru??
Biplab Guha
Nicely described….
Pratap Chatterjee
Khub sundar prakash
Aindrila Roy
Khub bhalo laglo !🙂
Passang Doma Bhutia
Supriyo sir …u r a hero then and a hero now too
Sarat Mullick
অনবদ্য লেখা। নিজেদের খুব বঞ্চিত মনে হয়।
Leena Hazra
আমরা ২০০৬ এ সন্দকফু-ফালুট ট্রেক করে ছিলাম।মানেভন্জ থেকে টুমলিং একরাত থেকে সন্দকফু তার পরদিন ফালুট। temperature -2… একদিকে কান্চনজঙ্গা আর একদিকে এভারেস্ট। কি অপূর্ব দৃশ্য।এর সাথে বরফের বৃষ্টি। সত্যি যারা না যাবে ঠিক উপলব্ধি করতে পারবে না । গৈরিনিবাস হয়ে ফিরেছি। খুব সুন্দর দৃশ্য 👌👌👌
Tapan Kumar Sarkar
✅ beautiful description
Kanti S
Sotti pahar khub sundar
Bani Paul
Superb described,amader jaoa hoyni etai apsosh
Uttam Dey
Khub sundar barnona.Mane hochhe chokher samne sab dekhte pachhi.Tachara tomar prottekta lekha khub upobhog kori.Bhalo theko Suoriyoda.
Chanchal Bhattacharya
বাহ্, খুব সুন্দর উপস্থাপনা।
সত্যিই, হারিয়ে যাওয়া সময় আর স্মৃতি, সব সময়েই ‘পিছু ডাকে’।।
Chinmoy Goswami
Sundar
Basabdatta Lahiri
এই গল্পগুলো সামনাসামনি শুনেছি রিজিওনাল অফিস এ থাকতে,নতুন করে খুব ভালো লাগলো, হিমালয়ের গল্পও প্রচুর শুনেছি
Ritinkar Sarkar
Asadharon. ❤️
Dekhei abar jete ichhe korlo.
Jhumi Sengupta
Khub shundor 👌👌
Swapna Sen Gupta
কি সুন্দর বর্ণনা।খুব ভালো লাগলো।আমরা অনেক বার দার্জিলিং গেছি ঘুম এও গেছি। ওখনে আমার মামা ছিলেন ভেটে নারি সার্জেন ছিলেন।তবে সন্দাক পুর যেতে পারিনি।ট্রেকিং করার সাহস ছিল না।
Mita Sengupta
Bah!!khub bhalo laglo.
Probir Das
অসাধারণ উপস্থাপনা।খুব ভালো লাগল
Soma Dasgupta
তোমার বেড়ানোর অভিজ্ঞতা এত সুন্দর করে আমাদের জানাও পরে ভীষণ ভালো লাগে । টাইগারহিল ঘুম সহ দর্জিলিং সবটাই ঘুরেছি কিন্তু সান্দাকফু আর যাওয়া হয়নি তাই বর্ণনা পরে খুব ভালো লাগল ।
Bijaya Chatterjee
Purano sriti vision soundor
Priyabrata Panja
মনে হল ঘুরে এলাম।
Sudipto Sen
Tomar aar amar experienced ta almost similar. Ami Madhyamik dilam 1984 e. Parikhha sesh hotei Sandakfu r phan chhilo. Ami Subhash Ghising ke chithi likhechhilam. He replied and invited us to visit – promised us security. And, he kept his words. Ashombhob bhalo experience sob miley.
Ranjan Goswami
Tahankar chehera ta ekdom Nayak er moto lagche. Sadakphu jaoa Hoi ni
Pk Bhattacharjee
Darun
Samarendra Nath Sarkar
Nice recalled old memories 👌 good morning 👏
Churka Murmu
Darun
Abani Banerjee
এককথায় দারুন।
Suman Bose
বাঃ খুব ভালো লাগলো , সুপ্রিয় তুমি এখন তো গড়িয়াতেই থাক, আমার সান্দাকফু যাওয়া হয়নি, খুব ইচ্ছে আছে, এখন তো আর ট্রেক করতে পারব না,মানেভন্জন থেক গাড়িতেই যাব, যাওয়ার আগে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে দিও, ভালো থেকো।
Tanima Goswami
Khub sundor khub valo laglo.
Prasanta Chakraborty
সকাল বেলা সানদাকফু ঘুরে এলাম। 👍👍👍👍👍
Ashis Dutta
Nice one.
Asit Saha
Lovely ,suprio da,
Tapasi Sengupta
Tomer lekha to bhalo natun kore are ke bolbo
LikeLiked by 1 person
THANKS TO ALL
LikeLike