বিচ্ছেদ নয় মিলন চাই – সুপ্রিয় রায়

বিচ্ছেদ নয় মিলন চাই – সুপ্রিয় রায়

ছোটবেলা থেকেই সার্থকের গল্পের বই পড়ার দিকে খুব ঝোঁক । সুযোগ পেলেই বসে পড়তো গল্পের বই বা ম্যাগাজিন নিয়ে । কতদিন পড়ার বইয়ের মধ্যে গল্পের বই নিয়ে পড়েছে যাতে বাবা – মা টের না পায় । যাতে বাবা, মা ভাবে ও পড়ার বই পড়ছে । আগে তো খাওয়ার সময় আর শোবার সময় ওর হাতে বই চাইই চাই । যতদিন ছাত্র ছিল এই অভ্যাসটা বজায় ছিল । চাকরী পাবার পর অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়ে গেল । কিন্তু কিছুটা সময় বের করে নিচ্ছিল গল্পের বই পড়ার জন্য । নতুন নতুন বই কেনার অভ্যাসটা ধরে রেখে ছিল । বাদ সাধল  বিয়ে করার পর । অফিস থেকে আসার পর যদি বই নিয়ে বসতো তাহলে সাথীর মুখ ভার হতো । ওর কথা অনুযায়ী সারাদিন ও অপেক্ষা করে থাকে সার্থক কখন অফিস থেকে ফিরেব আর ও সার্থকের সাথে গল্প করবে বা একসাথে কোথাও কাছাকাছি ঘুরতে যাবে । সত্যিই তো অফিসে যাওয়ার সময় সার্থকের তারা থাকে আর ওকেও সব রেডি করতে হয় । কথা বলার সময় কোথায় । সুতরাং ও তো আশা করতেই পারে সার্থক অফিস থেকে এসে ওকে সময় দেবে । তাই সার্থক বই পড়ার সময় অনেকটাই কমিয়ে দেয় । এরপর সংসার বাড়ার সাথে সাথে বই পড়ার সময়টাও অনেক সময় সার্থক পেতোনা ।এমনি করেই চলছিল । আবার পুরানোদিন ফিরে আসলো নতুন রুপে । না আছে পড়াশুনা করার চাপ আর না আছে কাজের চাপ আছে শধুই অবসর । বই এখন নিত্য সঙ্গী , সারাক্ষণের বন্ধু । ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানায় বসে বই পরছিল সার্থক । আর সাথী ফোনে ওর এক বান্ধবীর সাথে কথা বলছিল । এতো আস্তে কথা বলছিল যে সার্থক অন্য ঘরে  থেকেও ওর কথা মাঝে মাঝেই কানে আসছিল । হঠাৎ সব শব্দ থেমে গেল ।সাথী ঘরে ঢুকল । ওকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছিল । বইয়ের থেকে মুখ তুলে সার্থক দেখল সাথীকে আর বুঝতে পারলো কোন একটা বিষয় নিয়ে ও খুব ভাবছে । চুপচাপ মোবাইলটা নিয়ে সাথী বিছানার এক পাশে বসলো ।

“ আরে কি ব্যাপার ? এতো মন দিয়ে কি ভাবছ ?” – সার্থক জিজ্ঞেস করলো ।  

-অপরাজিতা ফোন করে ছিল ।

“ অপরাজিতা , মানে তোমার সেই বান্ধবী যার ছেলের বিয়েতে কিছুদিন আগে আমরা ঘুরে আসলাম ।”

-হ্যাঁ গো । এই তো কদিন আগে বিয়ে হল । আর এর মধ্যেই ওর ছেলে আর বৌমাকে ওরা ওদের থেকে আলাদা করে দিতে চাইছে ।

“ কেন ? ওদের তো বেশ বড় বাড়ি । কোন ঝামেলা হয়েছে নাকি ?”

-না না । ওরা নিজেরাই ছেলে -বৌমাকে আলাদা করে দিতে চাইছে । ওদের মত অনুযায়ী আলাদা থাকলে নাকি সম্পর্ক ভাল থাকবে । যদি বৌমার সামনে ছেলে, অপরাজিতা বা ওর স্বামিকে রাগ করে কিছু বলে তাহলে ওদের প্রেস্টিজে খুব লাগবে । ওদের সহ্য করা খুব মুশকিল হবে । তাই যাতে এইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতে হয় তাই আগেই আলাদা করে দিয়েছে ।

“আমার মনে হয় ওদের এখনও ম্যাচিউরিটি আসেনি । আরে বাবা প্রিয়জনদের সাথে মতান্তর হতেই পারে কিন্তু মনান্তর কেন হবে ? এতো বছর একসাথে সুখে দুঃখে থাকার ফলাফল কি তাহলে জিরো ।বাবা , মা আর ছেলের সম্পর্কের গভীরতা এতো কম ?  বাবা , মা অনেক সময় ছেলেকে বকাবকি করে তাতে স্বাভাবিকভাবে ছেলেরও খুব খারাপ লাগে। কিন্তু বল সেটা কেউ মনে রাখে । পর মুহূর্তেই হয়তো ছেলে এসে মাকে বলে  – “ মা । খেতে দাও” । যেখানে সম্পর্ক দৃঢ় সেখানে কেউ কোন কথা নিয়ে বসে থাকে না ।  আর ছেলের বৌ ওদের পর নাকি । সেও তো ছেলের মতই আপন । বাড়ির মধ্যে সব কিছু জানার অধিকার সবার আছে । আর যেকোন ঘটনা সামনেই হওয়া ভাল , পিঠ – পিছে নয় ।তাহলেই সম্পর্ক ঠিক থাকে ।সম্পর্ক খারাপ হয় কিছু লোকের ফিসফিসানিতে আর অহেতুক সমালোচনায়। সেটা কাছে থাকলেও হতে পারে বা দূরে থাকলেও । আন্তরিকতার অভাব থাকলে সম্পর্ক উপর থেকে যতই দৃঢ় মনে হোক আসলে সেটা মেকী । ”

-তোমার কথা আমি মানছি । আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু অপরাজিতা কোন কথাই শুনতে চায় না । ওর একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে যা আলাদা থাকলে  সম্পর্ক ভাল থাকবে ।

“ আরে বাবা ছেলেদের সামনেও তো আমাদের কম ঝগড়া হয়নি । বাইরের লোকের সামনেও মাঝে মাঝে হয়েছে । তাতে কি আমাদের সম্পর্কের চিড় ধরেছে ? ভিতরের টান বা একসাথে থাকার ইচ্ছাটাই আসল । সেটা যে কোন সম্পর্কই হোক না কেন ?”

-আমি অপরাজিতাকে বললাম তোর তো একটাই ছেলে । কেন শুধু শুধু আলাদা করে দিচ্ছিস । তোর ছেলে আর বৌমা কি বলছে? ওরাও কি আলাদা হতে চাইছে ?

“ তা কি বলল ?”

-না , ছেলে আর বৌমা আলাদা হতে চাইছে না । কিন্তু ওরা চাইছে ।ওদের কথা,  সম্পর্ক একবার খারাপ হয়ে যাওয়ার থেকে আগেই আলাদা হয়ে যাওয়া ভাল । এক জায়গায় থাকলে ঠোকাঠুকি লাগার সম্ভবনা বেশী তাই আগেই আলাদা করে দিতে চাইছে ।

“ কত পরিবার একসাথে আছে এবং বেশ আনন্দেই আছে । সেটা কি ওরা দেখতে পারছে না । এর পর যখন নাতি , নাতনি হবে তখন সবসময় তাদেরকে কাছে পেতে ইচ্ছা করবে না ?একটু পজিটিভ চিন্তাধারায় বিশ্বাসী হতে বল । আরে বাবা প্রত্যেক সংসারেই ঝগড়া হয় । সবার তো একটা নিজস্ব চিন্তাধারা আছে । একজনের চিন্তাধারা অন্যজনের চিন্তাধারার সাথে অমিল হতেই পারে । একটা কথা জেনে রাখ যেখানে আন্তরিকতা আছে সেখানে ঝগড়া আছে, মান – অভিমান আছে আর যেখানে আন্তরিকতা নেই সেখানে ঝগড়াও নেই , মান – অভিমানও নেই । বাইরে তো আমরা প্রতি নিয়ত অভিনয় করি । একটা জায়গা অন্তত আমাদের থাকা দরকার যেখানে আমরা সবসময় ওরিজিনাল , অভিনয় সেখানে থাকবে না । আর সেটা হল আমাদের সংসার । বাইরের লোকের সাথে সেন্টিমেন্টাল হতে বল , নিজেদের লোকের সাথে না । বিয়ের পর ছেলেকে আলাদা করে দেওয়ার অর্থই হল বৌমাকে নিজেদের মেয়ে হিসাবে না মেনে নেওয়া । বিয়ের পর বৌমাকে যদি আপন করে না নেওয়া যায় তাহলে ও কি করে স্বামীর বাবা,মা কে আপন করে নেবে । যদি ওকে ছেলের সাথে আলাদা করে দেওয়া হয় , তাহলে ও কোনদিনই ওর শ্বশুর শাশুড়ির সংসারটাকে নিজের বলে ভাবতে পারবে না ।ছেলেরও ধীরে ধীরে এই সংসারটাকে আর নিজের বলে  মনে হবেনা ।” 

-ঠিক বলেছো । কাল সকালেই চলো অপরাজিতাদের বাড়ি গিয়ে ওদের বোঝাই । কিছুতেই একটা সংসারকে দুইভাগ হতে দেওয়া যাবে না ।

  

   Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos   

3 thoughts on “বিচ্ছেদ নয় মিলন চাই – সুপ্রিয় রায়

  1. Tapasi Banerjee
    Darun laglo.
    Naru Mahato
    খুব সুন্দর লিখছেন । যদিও এখন বেশিরভাগ সংসার ভেঙ্গে যায় । তবুও আপনার সুন্দর যুক্তি দিয়ে যদি অপরাজিতাকে বোঝানো যায় । পরের অধ্যায় শেষ করুন ।
    Papia Kargupta
    ভীষন ভালো গল্পঃ টা পড়তে 👌
    Swapnesh Ghosh
    darun laglo .golpo holeo etai amader roj namca .
    Jaba Sengupta Roy
    Khub bhalo
    Mita Sengupta
    Bhalo laglo.
    Chanchal Bhattacharya
    বাস্তব সমস‍্যার বর্ণনা।
    ভালো লাগলো।।
    Swapna Sen Gupta
    খুব ভালো লাগলো
    Mita Sengupta
    very nice.erokom jodi sobai bhabhto tahole prithibi ta kato sundor hoto
    Reena Dasgupta
    Khub bhalo
    Sucheta Sen
    এবার তো চিন্তা ভাবনা করে ছেলের বিয়ে দিতে হবে….
    Pk Bhattacharjee
    Darun laglo.
    Soma Dasgupta
    দারুন লিখছো খুব ভালো লাগলো ।আজকাল প্রায়ই এইসব সমস্যার কথা শোনা যায় ।এই সব পরিস্থিতি যেন কারো সংসারে না আসে ।আর অপরাজিতা কি বুঝতে পারবে ?
    Rinki Sen
    Khub bastob purno lekha ta —
    Kanti S
    Khub sundar galpo vabnay goverata ache
    Parimal Guha
    Beautiful
    Tanima Goswami
    Darun laglo
    Tapash Banerjee
    Excellent

    Liked by 1 person

Leave a comment