— এই কাগজটা শাক সবজির দোকানে দিবি আর এই কাগজটা দিবি মুদিখনার দোকানে।দুটো ব্যাগ দিয়ে দিলাম , একটাতে শাক সবজি আর আরেকটাতে মুদিখনার জিনিস আনবি । দোকানদারের থেকে তিন ফুট দূরে দাঁড়াবি ।মুখে মাস্কটা পরে যাবি ।কিরে বুঝলি তো । তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবি । জানিস তো চারিদিকে লকডাউন চলছে । এদিক ওদিক ঘুরলে কিন্তু পুলিশ ধরবে ।বাড়ি এসে বাইরের কল থেকে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত,পা ধুয়ে তারপর ঘরে ঢুকবি । মনে থাকবে তো ! এইনে টাকাটা ভাল করে রাখ । হারাস না আবার ।
কর্তামার হাত থেকে সব নিয়ে বাড়ির বাইরে আসল কমলা । কমলার বাড়ি সুন্দরবনে । তিন বছর হল কোলকাতায় এই বাবুদের বাড়িতে কাজ করছে । এতদিন সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু করোনা নামে কি একটা রোগ এসেছে তার ফলে সব ওলট পালট হয়ে গেছে ।এতদিন কর্তাবাবুই বাজারে যেত ।কিন্তু এখন কর্তামা , কর্তাবাবু বা দাদাবাবুকে বাড়ির বাইরে বেড়তে দেন না । দাদাবাবু তো ঘরে বসেই অফিস করছে । বাড়ির কাজ ও বাইরের সব কাজ এখন কমলাকেই করতে হচ্ছে । ছোটবেলা থেকে কোনদিনই সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস ছিল না কমলার । এখন যখন কর্তামা বার বার বলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জন্য তখন ওর একদম ইচ্ছা করে না । এইসব চিন্তা করতে করতে কমলা এগিয়ে চলল বাজারের দিকে । একটু এগোতেই ফুলির সাথে দেখা । ফুলি কমলারই বয়সী এই ১৬ -১৭ বছর হবে ।কাছের বস্তিতে থাকে । কমলার সাথে বেশ ভাব ।
— কি রে ফুলি কোথায় চললি ।
— আর বলিস না কমলা । আমি যে বাড়িতে কাজ করি সে বাড়ির দাদাবাবু দুদিন হল বিদেশ থেকে এসেছে ।আজ হঠাৎ জ্বর এসেছে । তাই কর্তামা আর কর্তাবাবু , দাদাবাবুকে নিয়ে হসপিটালে গেছে । আমায় ছুটি দিয়েছে । বলেছে কালকে এসে একবার খোঁজ নিতে ।
— তাহলে তো ভালই হল । চল আমার সাথে ।
দুজনের খুব ভাব । হাসতে হাসতে হাত ধরা ধরি করে গল্প করতে করতে দুজনে চলল বাজারের দিকে । রাস্তায় দশ টাকা দিয়ে একটা চিপসের প্যাকেট কিনে দুজনে মিলে তৃপ্তি করে খেল । তারপর বাজার থেকে ফেরার পথে ফুলি ওর বাড়ি চলে গেল । আর কমলা মুদিখানার জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরল । ঘরে ঢুকতেই কর্তামার চীৎকার শুনতে পেল ।
– কখন গেছে আর এই আসলো । ফাকি দিতে পারলে আর কি । ঘরে কত কাজ পরে আছে । যা ভাল করে হাত পা ধুয়ে আগে বাসন গুলো মেজে ফেল ।
মাঝে মাঝে কমলার বিদ্রোহ করতে ইচ্ছা করে । সবার চাকরীর একটা নিদিষ্ট সময় আছে কিন্তু ওদের নেই । ওরা ২৪ ঘণ্টার কাজের লোক । আর কথা না বাড়িয়ে ও কাজে মন দিল । এমনি করেই চলছিল ।কিন্তু বেশী দিন চলল না । তিন চারদিন পরে একদিন বেশ সকাল হয়ে গেছে কিন্তু কমলা ছাদ থেকে কিছুতেই নামছে না । ছাদের একটা ছোট ঘরে কমলা থাকে । মাথাটা খুব ধরেছে, আর মনে হচ্ছে গায়ে জ্বর এসেছে । কিছুতেই উঠতে ইচ্ছা করছে না । খালি শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে । কর্তামার চীৎকার কানে আসছে । কর্তামা চীৎকার করে ওকে ডাকছে আর বলছে –
– এতো সকাল হয়ে গেল কিন্তু মাহারানির হুস নেই । ঘরে কত কাজ পরে আছে , আর মাহারানির ঘুমই ভাঙছে না ।
বুঝতে পারলো কর্তামা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছে । খুব বকাবকি করবে ও জানে তবুও ওর উঠতে ইচ্ছা করছে না । চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ।মাঝে মাঝে হটাৎ আবার শুকনো কাশি আরম্ভ হয়েছে । কমলা বুঝতে পারলো ঘরের দরজার সামনে কর্তামা এসেছে । তারপর ওর কানে আসলো কর্তামা, কর্তাবাবুকে ডাকছে । কর্তাবাবু এসে দাঁড়ালো সেটাও কমলা বুঝতে পারলো কিন্তু চোখ খুলতে কিছুতেই ইচ্ছা করছে না । শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে । কানে আসলো কর্তামা কর্তাবাবুকে বলছে – আমার ভাল ঠেকছে না ।ওকে দেখে বুঝতে পারছি ওর জ্বর এসেছে । যদি করোনা ভাইরাস এসে থাকে তাহলে তো আমাদের সর্বনাশ । পাড়ায় জানাজানি হলে আমাদের এক ঘরে করে দেবে । কোথায় নিয়ে গিয়ে কোয়রানটিন রাখবে কে জানে । ইচ্ছা মতো কিছুই করতে পারবো না । শোন ওর হাতে কিছু টাকা দিয়ে বেলেঘাটা আই ডি হসপিটালে পাঠিয়ে দাও ।
–ও তো রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না । ও একা একা যাবে কি করে ?
— কাগজে বেলেঘাটা আই ডি হসপিটালের নাম আর ঠিকানা লিখে দাও ।আর ওকে ট্যাক্সির ভাড়া দিয়ে দাও । তাহলেই ও চলে যেতে পারবে । আর ও চলে গেলেই পুরো সিঁড়ি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে । ওকে ডেকে একটা প্যারাসিটামল দাও তাহলেই জ্বরটা কমে যাবে এবং গায়ে কিছুটা জোড় পাবে ।
কিছুক্ষণ চুপচাপ । তারপর কর্তাবাবু জোরে জোরে কমলা কমলা করে ডাকতে লাগলো । কমলা চোখ খুলতেই কর্তাবাবু একটা ওষুধ ছুঁড়ে দিল ।বলল ওটা খেয়ে নিতে । কমলা ওষুধটা খেল । একটু বাদে ও উঠল , মনে হচ্ছে জ্বরটা এখন অনেকটা কম । ওকে উঠতে দেখে কর্তামা বলে উঠল –
–নে নে , তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে । তোকে হসপিটালে যেতে হবে । তাহলেই ভাল হয়ে যাবি । তোকে একটা কাগজে হসপিটালের নাম আর ঠিকানা লিখে দিচ্ছি , আর সাথে টাকা দিয়ে দিচ্ছি ।বাড়ির থেকে বেড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলে যে বড় রাস্তাটা পাবি ওখানে ট্যাক্সি পাবি । ঐ ট্যাক্সির ড্রাইভারকে এই কাগজটা দেখাবি তোকে হসপিটালে পৌঁছে দেবে । আর এখানে কোথায় থাকিস কাউকে কিছু বলবি না । আমরা পরে তোর সাথে যোগাযোগ করে নেব । আর যদি কাউকে কিছু বলিস তাহলে আর তোকে রাখবো না ।
অগ্যতা কমলা বেড়িয়ে আসলো বাড়ির থেকে । শরীর আর চলছে না । তবুও জোড় করে চলল বড় রাস্তার দিকে । বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটা ট্যাক্সি পেল । ট্যাক্সির ড্রাইভার ওকে কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করাতে ও কাগজটা দেখাল । তখন ট্যাক্সির ড্রাইভার ওকে ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে চলে গেল । কমলা বুঝতে পারলো না কি হল । কেন ওকে দাঁড়াতে বলে চলে গেল । যাইহোক কমলা দাঁড়িয়ে রইলো । একটু পরে সেই ট্যাক্সির ড্রাইভারের সাথে একজন সাদা পোশাকের পুলিশ আসলো । এইবার কমলা একটু ভয় পেয়ে গেল । ও ভাবল ওই যে কর্তামা বলেছিল লকডাউনে এমনি এমনি বেরলে পুলিশ ধরতে পারে তাই বোধহয় ওকে ধরতে এসেছে । ও পুলিশকে দেখে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো – আমার জ্বর হয়েছে তাই আমি হসপিটাল যাব বলে বেড়িয়েছি । পুলিশটা ওকে বলল – তোমার কোন ভয় নেই । আমি অ্যাম্বুল্যান্সকে খবর পাঠিয়েছি , এখুনি এসে যাবে।আমি তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাব । তুমি একটু দাড়াও ।
একটু বাদেই অ্যাম্বুল্যান্স চলে আসলো । সারা শরীর ঢাকা এমন পোশাক পরে দুজন অ্যাম্বুল্যান্স থেকে একটা বিছানা নিয়ে নামল আর ওকে বলল ওর মধ্যে শুয়ে পড়তে । কমলার একটুও দাঁড়াতে ইচ্ছা করছিল না । ও তাড়াতাড়ি ওই বিছানায় ভয়ে ভয়ে শুয়ে পড়ল । তারপর ওকে নিয়ে গাড়িটা রওনা দিল । অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতর শুয়ে শুয়ে ও ভাবছিল সব পরিচিত লোকগুলো এক মুহূর্তে কেমন অপরিচিত হয়ে গেল আর অপরিচিত লোকগুলো কেমন আপন হয়ে উঠল । ওর বাবা মার কথা খুব মনে হচ্ছিল । খুব কষ্ট হচ্ছিল এই ভেবে যে বাবুদের বাড়ির জন্য ও দিনরাত পরিশ্রম করে আর ওর শরীর খারাপ হওয়াতে বাড়ির থেকে বেড় করে দিল । ওদের বাড়ির যদি কারও শরীর খারাপ হতো তাহলে কি এমনি করে বেড় করে দিতে পারতো । ভাবতে ভাবতে ওর দুচোখের পাতা জড়িয়ে আসলো ।আর ও হারিয়ে গেল ঘুমের দেশে ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
Gautam Chaki
Khub sundor
Prasanta Chaki
সুন্দর লিখেছেন। আরোও লিখুন।
Chanchal Bhattacharya
ভালো উপস্থাপনা।
এমন অনেক ঘটনাই আমাদের চারদিকে ঘটে চলেছে।
Dipak De
Awesome Supriyoda. Er pore Kobe
Swapnesh Ghosh
pore khub valo laglo dada.bastob ghotona.
Kalyan Brata Sarkar
তিলক রে – অসাধারণ অথচ সহজ সরল বাস্তব – সম্পূর্ণ ভাবে আজকের দিনে’র প্রাসঙ্গিক। এই রকম’ই চারিদিকে ঘটে চলেছে – কেউ কেউ ভাগ্যের জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে – কেউ নিয়তির পরিহাসে হারিয়ে যাচ্ছে – না ইতিহাসের পাতায়ও তাদের পাওয়া যাবে না 😥
Priyanka Barman
Reality check! Darun👏
Soumendra Shome
এটা কঠিন বাস্তব।
Biman Kumar Chatterjee
লেখাটি ভালোই তো লাগলো!!🌹🌷
Nalini Ranjan Chakraborty
সভ্যতার এমন নিদর্শন আমাদের আর কতকাল কলঙ্কিত করতে থাকবে?
আপনার লেখনী বেশ জীবন্ত লাগল।
Papia Kargupta
বাহ চমৎকার একটা লেখা হয়েছে রে লালদা
Pradip Kumar Das
খুব সুন্দর লেখা
Tapasi Banerjee
Khub valo laglo.ekta bastob ke tule dhorecho.
Chinmoy Goswami
খুব ভালো মন ছুঁয়ে যায় কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ি
Partho Mukherjee
Etai ekhon bastab poristhiti.
Bani Paul
খুব সুন্দর লেখা, আমরাও এরকম করতে পারি পরিস্থিতি টাই এমন
Alpana Munshi
এটাই বাস্তব।
Sucheta Sen
সত্যি কি ভয়ানক পরিস্থিতি কী যে হবে কে জানে….. সারাক্ষণ শুধু ভয় ভয় দিন কাটছে
Sailesh Kumar Rai
Khub bhalo
Churka Murmu
Moner kotha
ললিতা রায়
Asadaran tomer lekha lalda.bastob ke tule dhorecho
Gobinda Chakravarty
লেখা অবশ্যই খুব ভালো হয়েছে / বাস্তবের সঙ্গে আপনার কল্পনা যে পরিবার নিয়ে তার প্রতিনিধিত্ব কিন্তু করি আপনি আমি দুজনেই / আমরা মধ্যবিত্ত সমাজ মধ্যচিত্তও / হয়তো শিক্ষাক্ষেত্রের মতো শ্রেণীভাগ করলে অর্থনৈতিক বিচারে আমরাও ওই প্রথম প্রজন্ম বাঁ দ্বিতীয় / তাই কমলাদের কথা আমাদের ভাবায় , কিন্তু ওই একটু , ওই বিষয় নিয়ে ফেস বুক হোয়াটস্যাপ করে আমাদের মনের টানাপোড়েন থেকে আমরা মুক্ত পেতে চাই , কিন্তু একইরকম ঘটনা বাস্তবে আমাদের জীবনে ঘটলে আমাদের পরিবারও হয়তো এমনই অমানবিক আচরণ করবে / আমাদের দ্বায়িত্ব নিজেদের সঙ্গে আমাদের পূরো পরিবারগুলোকেও যেন সত্যিকারের উদার শিক্ষিত করে তুলতে পারি /
জানি না আপনার কাছে পৌঁছতে পারলাম কি না ?
Naru Mahato
গল্প হলেও একেবারে বাস্তব জীবনের সাথে মিশে গেছে লেখনীর গুণে । অসাধারণ মর্মস্পর্শী কাহিনী ।
Swapna Sen Gupta
ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছি।এর পর কি হবে। গল্পটা খুব ভালো লাগলো।কি অন্যায় করলো ওর সাথ এ।কাজের লোক বলে।
Jaba Sengupta Roy
Khub bhalo legeche
Tanima Goswami
Khub valo laglo. Ata e bastob.
Biswambhar Bose
ভালো লাগলো। শেয়ার করলাম।
Pk Bhattacharjee
Bha darun. Thik ai samoy ja hachhe.
Apurba Neogi
Outstanding story which is very much appropriate and matching under the present situation..
Jhumi Sengupta
Khub shundor
Soma Dasgupta
দারুন ভালো লাগল । এটা একেবারেই সত্যি ।এরকম ঘটনাই হয় ।তার পর এখন তো করনার আতঙ্ক , মনুষ কি করবে বুঝতে পারছে না ।ভয়ে সবাই ঘর বন্দি কে আর কাকে সাহায্য করবে ।
Tapas Das
Bhalo laglo.
Kanti S
Bartoman poresthetite manus aro amanobek hoye gache sundar galpo
Reena Dasgupta
Darun lalda
Suranjan Chatterjee
Superb
Rinki Sen
Khub bhalo laglo lekha ta
Asit Saha
Bhalo laglo,Mon bharakrantp holo
Amlan Roy Chowdhuri
Darun.
Sharmistha Sengupta
Khub valo hoeche lekhata.
Priyabrata Panja
লেখাটা বেশ ভালো,তবে শেষে মনে হল এত শিক্ষিত,স্বার্থপর মানুষগুলো এটা বুঝতে পারলো না,যে বাড়িতে ঐ ভাইরাস ঢুকলে নিজেদের সচেতন হয়ে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া ও স্বাস্থ্য দপ্তরে খবর দেওয়া উচিত ছিল।কেমন আছো করোনা আবহাওয়ায়।
Rina Ray
Darun
Saktimay Chakraborty
অসাধারণ!! সবাই কে পড়ানোর অনুমতি চাই।
Timir Sarkar
সমাজের আসল ছবিটা তুলে ধরেছো ভাই।
Mita Sen
Khub sundor ar bastob
Swapna Sen Gupta
খুব ভালো লাগলো।এখন তো বই পড়ার সময়। আরো লিখ বে।
LikeLiked by 1 person
THANKS TO ALL
LikeLike