স্বভাব চোর – সুপ্রিয় রায়

স্বভাব চোর – সুপ্রিয় রায়

অলীক বাবুর স্ত্রী , তিন ছেলে , তিন বৌমা , এক নাতি ও এক নাতনি নিয়ে ভরা সংসার । সবসময়ের জন্য বাড়িতে থাকে একজন কাজের মহিলা । এছাড়া ঠিকা কাজ করে দুজন । একজন ঘরদোর পরিষ্কার রাখে আর একজন বাসন মাজে । সচ্ছল পরিবার । অলীক বাবুর বাড়িতে একটা নিয়ম অনেকদিন ধরেই চলে আসছে । ছুটির দিন সবাই খাওয়ার টেবিলে ব্রেকফাস্ট , লাঞ্চ , ডিনার একসাথে বসে খায় । এখন পর্যন্ত তা কক্ষন নড়চড় হয়নি ।তাই আজও সবাই বসেছে একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে । কিন্তু কোথায় যেন মনে হচ্ছে একটা তাল কেটেছে । মেজছেলে ও মেজবৌমাকে আজ যেন বেশী গম্ভীর লাগছে । অন্যদিন সবাই কত হাসি মজা করে কিন্ত আজ মনে হচ্ছে মেজছেলে আর  মেজবৌমা জোড় করে কথা বলছে । খেতে খেতে এটা অলীক বাবুর নজরে আসে । তাই বাধ্য হয়েই ওনি মেজছেলেকে জিজ্ঞেস করেন – “ কি ব্যাপার মেজখোকা , তোমরা আজ এতো গম্ভীর কেন ?”

-“  কি আর বলবো বাবা , আমাদের বাড়িতে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যে আমরা দুজনেই খুব আপসেট । আমরা কল্পনায়ও এই ধরনের ঘটনা আশা করতে পারিনা ।”

বড় বৌমা বলে উঠলো – “ কি ব্যাপার একটু খুলে বল না । তাহলে হয়তো আমরা হেল্প করতে পারি।”

উত্তর দিল মেজ বৌমা – “আমাদের ঘর থেকে কিছু টাকা চুরি হয়েছে ।”

অলীক বাবুর স্ত্রী সাথে সাথে বলে উঠলেন –“ বলিস কিরে , আমাদের বাড়িতে চুরি ! আমাদের সব ঘরেই তো সব কিছু ছড়ান ছিটানো থাকে । আজ পর্যন্ত কখন কোনদিন কিছু চুরি যায়নি ।আমাদের বাড়িতে চুরি করার কেউ নেই । তোরা ভাল করে দেখেছিস তো ?” 

মেজছেলে উত্তর দিল –“হ্যাঁগো ভাল মতো দেখেই বলছি । আমরাও বিশ্বাস করতে পারছি না ।বৃহস্পতিবার আমি দশ হাজার টাকা আমাদের ঘরের তাকের উপর একটা ব্যাগের মধ্যে রাখি । কাঠের মিস্ত্রিকে টাকাটা দেবো বলে । শুক্রবার আর শনিবার একদম সময় পেলাম না । তাই আজ ব্রেকফাস্ট করে টাকাটা দিয়ে আসবো বলে ঠিক করলাম ।টাকাটা বের করে পকেটে রাখতে গেছি , দেখি ছয়টা পাঁচশো টাকার নোট নেই । ভাবলাম ও নিয়েছে কিন্তু ও বলল যে ও ওই টাকার ব্যাগটাতে হাতই দেয়নি ।”

মেজ বৌমা বলল –“ আমার তো খেয়ালই ছিল না টাকাটার কথা । ও জিজ্ঞেস করাতে আমি সতিই অবাক হয়ে যাই ।এর মধ্যে বাইরের লোক তো সেরকম আমাদের বাড়িতে কেউ আসেনি । ”

ছোট বৌমা বলে উঠল – “ আচ্ছা মেজদি , শুক্রবার তোমার ঘরে তোমার এন জি ওর তিনজন মহিলা এসেছিল না ?”

 “ হ্যাঁ ছোট , এসেছিল । তবে ওরা নিতেই পারেনা । ওদের সবারই সচ্ছল পরিবার । সবাই শিক্ষিতা ।কতদিন ধরে একসাথে এন জি ও করছি । ”

-“ একটা কথা না বলে পারছি না । কেউ কিছু মনে করোনা । শুক্রবার দিন মেজ যখন চা বানাতে বেড়লো তখন দেখলাম ওই এন জি ওর তিন মহিলার থেকে দুজন মেজোর সাথে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো । আর একজন মেজোর ঘরে বসে কি লিখছিল । আমি তখন মেজোর ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম । ওদের ঘরে সোফার পাশে যে আয়নাটা রাখা আছে সেটা দিয়ে ওদের ঘরের প্রায় অনেকটাই দেখা যায় । আমি ওর ঘরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে হটাৎ আমার চোখ পড়ল আয়নার উপরে । দেখি নীল সালয়ার পড়া এক মহিলা মেজোর তাকের সামনে দাঁড়িয়ে কি করছে । কি করছে সেটা দেখার আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না , তাই ভাল করে দেখিনি । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দেখলে ভাল হতো ।”- বড় বৌমা বলল ।

– “ ও ঘরে বসে একটা জিনিস লিখছিল । আর তাছাড়া ও নিতেই পারে না । কিসের অভাব ওদের ? তুমিও এই কথাটা কাউকে বল না বড়দি । ওরা শুনতে পেলে খুব খারাপ ভাববে আমাকে । যাকগে তোমরা ভুলে যাও চুরির কথা ।”

কেউ আর কথা বাড়াল না । সবাই চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়ল ।কিন্ত মেজ বৌমার মনে বড় বৌমার কথাগুলো বাজতে লাগলো । মেজ বৌমা ভাবল একবার পরীক্ষা করে দেখতে ক্ষতি কি ।কার যে কখন কি ভীমরতি হয় বলা মুশকিল । পরেরদিন ওই তিনজন মহিলাকে আবার বাড়িতে আসতে বলল । ওনাদের  বোঝাল যে এন জি ওর কাজে হটাৎ  খুব দরকার পড়েছে । একদম বুঝতে দিলনা যে মেজ বৌমার মনে ওদের একজনের প্রতি একটু সন্দেহ হয়েছে । অবশ্য ব্যাপারটা নাও হতে পারে । হয়তো অন্য কেউ টাকাটা সরিয়েছে । একটু ঝালাই করে নেওয়া দরকার । একা ওকে ডাকলে সন্দেহ করতে পারে , তাই তিনজনকেই ডাকল । বাড়ির কাউকে সে কিছু বলল না । তাকের ওপর ঐ ব্যাগটাকে আবার একই জায়গায় রাখল । ব্যাগের ভিতর একটা কাগজে লিখে রাখল ‘ আমি জেনে গিয়েছি যে টাকাটা তুমি নিয়েছ । আমি কাউকে বলবো না কিন্তু তুমি এই স্বভাব এখনই পরিত্যাগ কর নাহলে বাধ্য হবো সবাইকে জানাতে ।’ ও ভাবল যে, চুরি করে ধরা যে পড়েনি সে আবার চুরি করার চেষ্টা করবে । তাই একটা ফাঁদ পাতলো মেজ বৌ ।পরেরদিন ঠিক সময়েই ওরা তিনজন এসে উপস্থিত হল । মেজবৌমা ওদের আবার নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসাল । কাজের কথা ও নানা রকম গল্পে ওদের বুঝতেই দিল না আসল উদ্দেশ্য ।সবাই মন খুলে কথা বলছিল । কিছুক্ষণ পরে কল্পনাকে অর্থাৎ যাকে তাকের সামনে দেখা গেছিল তাকে ঘরের মধ্যে একটা কাজ দিয়ে , বাকী দুজনকে নিয়ে মেজ বৌমা  ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল । কল্পনাও ভাবল যখন টাকার কথা কিছু বলল না তখন নিশ্চয় কোন সন্দেহ করেনি ।  তারপর মেজ বৌমা  হটাৎই ওদের নিয়ে শ্বশুর- শ্বাশুরির ঘরে ঢুকল । ঘরে শ্বাশুরি ছিলেন । মেজ বৌমা ওদের বলল যে তোমরা আমার শ্বাশুরির সাথে  একটু গল্প কর , এরমধ্যে আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি । ওদের বসিয়ে রেখে মেজ বৌমা সোজা নিজের ঘরের দিকে গেল ।বাইরে থেকে আয়না দিয়ে ঘরের ভিতরটা দেখতে লাগলো ।দেখল কল্পনা আস্তে আস্তে ব্যাগটার সামনে গেল এবং ব্যাগটার চেনটা খুলে কিছু খুজতে লাগলো । কিছু না পেয়ে কাগজটা খুলে পড়তে লাগলো । এমন সময় মেজ বৌমা ঘরে ঢুকল । কল্পনাও ঘুরে তাকাল । কল্পনার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে । কল্পনা এগিয়ে এসে মেজ বৌমার হাত দুটি জড়িয়ে ধরল । বলল – “ প্লীজ কাউকে বোলো না আমি কালই  তোমার টাকাটা দিয়ে যাব ।এখন যাই । ওদের বোলো একটা আর্জেন্ট ফোন পেয়ে আমি চলে গেলাম । তুমি প্লীজ ওদের একটু বুঝিয়ে বোলো ।আর তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি জীবনে কোনদিন চুরি করবো না । একটা কথা , তোমাদের দেখেছি ইচ্ছা মতন খরচা করতে। তার মানে তোমরা হাতে টাকা পাও বা সংসারের টাকা থেকে তোমরা খরচা করতে পারো । কেউ আপত্তি করে না । কিন্তু আমি হাতে টাকাও পাইনা বা সংসারের টাকা থেকেও  নিজের খুশী মতন খরচা করতে পারি না । আমার কোন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই যেটা তোমাদের আছে । আমারও তো ইচ্ছা করে বল মাঝে মাঝে নিজের ইচ্ছায় খরচা করি । তাই লোভে পরে এই অভ্যাসটা নিজের অজান্তেই হয়ে গেছে । প্লীজ পারলে আমাকে ক্ষমা কর  । নইলে বল আমার কি চুরি করার কোন দরকার আছে । যাক আজ চলি । কাল এসে তোমার সাথে সব কথা বলবো ।”- এই বলে কল্পনা কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে ছুটে বেড়িয়ে গেল । অভাবে মানুষের স্বভাব অনেক সময় নষ্ট হয় জানি । তাহলে কি কল্পনাও মনে প্রানে অভাবী ?     

        Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

2 thoughts on “স্বভাব চোর – সুপ্রিয় রায়

  1. Priyanka Barman
    Excellent!
    Bani Paul
    Khub sundor akhon kichhu arokom Post koro besh bhalo
    Tapasi Banerjee
    Khub khub valo laglo.aro lekho. Excellent.
    Papia Kargupta
    Darun sundor lekhata hoaychhe রে lalda👌👌👍
    Sucheta Sen
    Bah! Khub sundor golpo….. Obhabe sabhab nosto kothatei ache
    Ruby Nandy
    Darun post
    Kanti S
    Besh sundar galpo
    Chanchal Bhattacharya
    বাহ্, ভালো লাগলো।
    Swapna Sen Gupta
    খুব ভালো লাগলো তিলক। গল্পও পড়তে খুব ভালো লাগে।বিশেষকরে ছোটো story
    Gautam Chaki
    Excellent
    Krishna Chaudhuri
    Excellent
    Tanima Goswami
    Excellent. Khub valo laglo.
    Bijoli Chowdhury
    Darun. Galpo. Khub. Valo. Laglo
    Prakash Chatterjee
    Darun golpo
    Ashim Kumar Dan
    Khoob bhalo laglo.
    Apurba Neogi
    Very nice creative story. Thanks a lot for giving us a new thought in our boring life .
    Mita Sengupta
    Khub bhalo laglo.
    Reena Dasgupta
    Lekhata khub bhalo hoeche
    Soma Dasgupta
    অসাধারণ লেখা ।আরো লিখে পাঠাও ।👌👌👌

    Liked by 1 person

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s