ভালবাসি পর্যটনে – সুপ্রিয় রায়

ভালবাসি পর্যটনে – সুপ্রিয় রায়

সন্ধ্যাবেলা সার্থক আর সাথী চা খেতে খেতে ল্যাপটপ খুলে দেখছে এর পর কোথায় যাওয়া যেতে পারে । হটাৎ সাথীর কি মনে হলো , সার্থককে জিজ্ঞেস করলো ।

সাথী – আচ্ছা , বিশ্ব পর্যটন সংস্থার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আমাদের দেশের স্থান এখন কত নম্বরে দেখতো ।

সার্থক – গত বছরে ৪০ এ ছিল । এবছর দেখলাম ৩৪ শে উঠে এসেছে।

সাথী – এই ১ নম্বরটা তুমি কি হিসাবে বলছ ?

সার্থক – যদি সবচেয়ে বেশি বিদেশী পর্যটক এক বছরে যে দেশে গেছে তার স্থান এক ধরা হয় তাহলে বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এর পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আমাদের দেশের স্থান ২০১৯ সালে ৩৪ নম্বরে । আমাদের দেশে ২০১৮ সালে বিদেশ থেকে মোট ১৭.৪ মিলিয়ন ( ১কোটি ৭৪ লক্ষ ) মানুষ এসেছিল যেটা ২০১৭ ছিল ১৫ .৫ মিলিয়ন ( ১কোটি ৫৫ লক্ষ ) ।

সাথী – এক নম্বরে কোন দেশ ?

সার্থক – ফ্রান্স ৮৯.৪ মিলিয়ন ( ৮কোটি ৯৪ লক্ষ ) ।

সাথী – অনেক ছোট ছোট দেশ আছে যারা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে আছে । তাই না ? আমাদের দেশ যদি আন্তরিক ভাবে চায় তাহলে ১ নম্বরে উঠে আসা কোন ব্যাপারই না । কি বল ?

সার্থক – ঠিক বলেছ । আমাদের কি নেই পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত । আমাদের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সাতটি পর্বতমালা যাদের ১০০ টার উপর চুঁড়া আছে এবং যার প্রত্যেকের উচ্চতা ৭২০০ মিটারেরও বেশি । বরফে ঢাকা এই চুড়াগুলোর উপর যখন সূর্যের সাতটা আলো পড়ে তখন এই চুড়াগুলোর স্বর্গীয় রূপ দেখার মতো । এক এক সময়ে এক এক রূপ । আমাদের একদিকে পাহাড় আর তিন দিকে সমুদ্র । কি অসাধারণ দৃশ্পট ।এছাড়া আমাদের সাতটি প্রধান নদী , তাদের অসংখ্য শাখা – প্রশাখা নিয়ে আমদের মাতৃভুমিকে সবসময় সতেজ করে রেখছে ।

সাথী – যেমন আমাদের শরীরে অসংখ্য নাড়ি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়ে শরীরকে সজীব করে রাখছে । ঠিক তেমনি । তাই তো ? আছে মরুভূমি , আছে অগুনতি অরন্য যেখানে বিভিন্ন জন্তু – জানোয়ার বিচরণ করছে । পাহাড়ে ও সমতলে দুই জায়গায়তেই আছে অনেক দীঘি বা লেক যা আকর্ষণ করে পর্যটকদের । আর সেই লেকের জলে আসে নানা দেশ থেকে নাম না জানা কত পাখি যাদের লাগে না কোন ভিসা ।পুরো পৃথিবীটাই তাদের দেশ ।নেই কোন জাতি , বর্ণ , ধর্মের বিভেদ । যত বাজে জিনিসগুলো মানুষের অধিকারে ।

সার্থক (হাসতে হাসতে ) – একদম ঠিক বলেছ । কয়েকটা দেশ শুধু সামান্য কটা সমুদ্র সৈকত নিয়ে চুটিয়ে পর্যটন ব্যবসা করছে । আর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে । আর আমরা এত সুন্দর সুন্দর সমুদ্র সৈকত,পাহাড় , জঙ্গল নিয়ে পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছি ।

সাথী – আচ্ছা , ধর কোন এক জায়গায় বড় বা মাঝারি শিল্প গড়ে উঠলো না , কিন্তু পর্যটন শিল্পের খুব প্রসার ঘটলো । তাহলে কি সে জায়গার অর্থনৈতিক প্রসার ঘটবে ?

সার্থক – দেখ , কোনো এক বড় বা মাঝারি শিল্পে নির্দিস্ট করে বলা যেতে পারে যে তার কতটা বিনিয়োগ বা কত কর্মসংস্থান হতে পারে । কিন্তু পর্যটন শিল্পের পরিধি বিশাল । স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে এই পর্যটন শিল্প । যে পরিমান কর্মসংস্থান হয় তা অনেক শিল্পেই হয়না । এছাড়া ঘটে মানসিক বিকাশ । নানা জাতির সংস্কৃতি আদান প্রদানের এক মিলন ক্ষেত্র এই পর্যটন । সবচেয়ে বেশি প্রচার হয় স্থানীয় সংস্কৃতির , আতিথেয়তার । সর্বপরি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে সেই দেশের নাম ।

সাথী – দেখ, ভ্রমণ বলতে আমরা বুঝি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গমন আর পর্যটনেও তাই হয় । তাহলে কি ভ্রমণ আর পর্যটনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই?

সার্থক – ঠিক বলেছ – ভ্রমন বলতে আমরা বুঝি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গমন । সেটা অনেক কারণেই ঘটতে পারে । (১) ব্যবসা (২) শিক্ষা (৩) কর্ম (৪) চিকিৎসা (৫) ধর্মীয় ব্যাপার (৬) সামাজিক ব্যাপার (৭) কেনাকাটা (৮) অবসর বিনোদন ইত্যাদি । আর এই অবসর বিনোদনের জন্য ভ্রমনকেই আমরা বলি পর্যটন । আবার এই অবসর বিনোদন এক এক মানুষের কাছে এক একরকম । (১)একটি শহর বা দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে বা সেখানে বসবাসকারীদের অথবা তাদের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে জানতে ভ্রমণ (২) ঠাণ্ডা জায়গা থেকে উষ্ণতর স্থানে ভ্রমন (৩) আবার উল্টোটা, উষ্ণতর স্থান থেকে শীতলতম স্থানে (৪) দুঃসাহসিক কিছু খেলার আকর্ষণে যেমন স্কিইং ইত্যাদি (৫) সুন্দর দৃশের আকর্ষণে (৬) সমুদ্র সৈকতে আনন্দ করার আকর্ষণে (৭) শুধু সময় কাটানোর জন্য । ইত্যাদি ।

সাথী – সত্যিই তো সবকটি কারণের সাথেই জড়িয়ে আছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ । জড়িয়ে আছে মানুষের কর্ম সংস্থান । এক জায়গার মানুষের সাথে আরেক জায়গার মানুষের ভাবের আদান প্রদান ।

সার্থক – পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য তোমার মতে কি কি জিনিসের আবশ্যকতা আছে ?

সাথী – আমার মনে হয় যারা পর্যটন শিল্পের পরিসেবার সাথে যুক্ত তাদের উপর যেন করা যায় একটু নির্ভরতা ।অনায়েষে তাদেরকে যেন বিশ্বাস করা যায় । এককথায় যারা পর্যটন শিল্পের পরিসেবার সাথে যুক্ত তাদের মধ্যে যেন থাকে স্বচ্ছতা । পরিসেবার মূল্য যেন সবার জন্য থাকে একরকম । পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য খুবই আবশ্যিক – (১) নিরাপত্তা (২) পরিকাঠামো (৩) পরিস্কার পরিচ্ছনতা (৪) সততা । আর চাই পর্যটন শিল্পের উন্নতিসাধনে সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা ।

সার্থক – তোমার সাথে আমি পুরোপুরি এক মত । আজ, পর্যটন ব্যবসা অনেক ব্যবসাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পর্যটন এখন প্রধান খেলোয়াড় এবং একই সময় অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রধান আয়ের উৎস ।

সাথী – দেখ আমার মনে হয় পর্যটনের জন্য পর্যটকদের কাছে চারটি প্রশ্ন থাকে ।(১) কোথায় যাবো – জায়গা সন্মধ্যে (২) কিভাবে যাব – যানবহন সন্মধ্যে (৩) কোথায় থাকবো – হোটেল সন্মধ্যে (৪) কি করব – কোথায় খাবো , কোথায় ঘুরবো ইত্যাদি ।

সার্থক – ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব খবরাখবর ঘরে বসেই পাওয়া যায় । এছাড়া ঘরে বসেই ঠিক করা যায় যাতায়াত , হোটেল । এছাড়া আছে প্রচুর পর্যটন সংস্থা যারা মূল্যের বিনিময়ে সব ব্যবস্থা করে দেয় ।শুধু চাই মনের ইচ্ছা আর সময় ।

সাথী – কোনো স্থানকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষিত করতে হলে সবচেয়ে আগে দরকার সেই স্থানের পরিকাঠামোর উন্নতি । আর পর্যটক আকর্ষিত হলেই সেই স্থানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন অবশম্ভাবী । যানবহন , হোটেল , খাবার দোকানের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে আরও নানাবিধ ব্যবসা । ক্রমে ক্রমে সেটা শিল্পতে রূপান্তরিত হবে ।

সার্থক – প্রতি বছর ১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা ২৭ শে সেপ্টেম্বর তারিখটাকে বিশ্ব পর্যটন দিবস হিসাবে পালন করে আসছে । প্রতি বছর নিয়ে আসছে এক একটা নতুন থিম বা বিষয় যার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে করে তুলছে আরো আকর্ষনীয় পর্যটকদের কাছে । যার মধ্যে একবার থিম ছিল -“পর্যটন: দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য একটি চালিকা শক্তি

সাথী – সামাজিক সম্প্রীতির জন্য এই পর্যটন শিল্পের কিন্তু এক দারুন ভুমিকা আছে । সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশে এই পর্যটন শিল্পের জুরি মেলা ভার ।

সার্থক – আমাদের যা জনসংখ্যা তার ১০ % কেও যদি পর্যটনে আকৃষ্ট করা যায় তাহলেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয় । এছাড়া যদি পর্যটন শিল্পের সাথে NRI দের যুক্ত করা যায় তাহলেও বৈদেশিক মুদ্রাও যেমন আসবে তেমনি বাড়বে অর্থনৈতিক বিকাশ ।

সাথী – ঠিক বলেছ । যারা দেশ চালাচ্ছে তাদের আন্তরিক সদিচ্ছা কতটুকু তার উপরেই সব নির্ভর করছে । সবচেয়ে বড় কথা পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এই প্রকৃতিকে যদি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখা যায় , দূষণ মুক্ত আকাশ দেওয়া যায় তাহলে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী সবসময় সজীব থাকবে । পর্যটন শিল্পের প্রসারই পারে সবাইকে বাচিয়ে রাখতে সাথে আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীটাকে । যাইহোক আজকের মতো ওঠো । রাত্রের খাবার খেতে হবে তো ।

দুজনে চলে যায় ।

Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

4 thoughts on “ভালবাসি পর্যটনে – সুপ্রিয় রায়

  1. Kumkum Dutta
    Monn taai bhalo hoe….❤❤
    Bani Paul
    Khub sundor
    Kalpana Mukherjee
    Darun hoyeche ekdom satti
    Amitava Biswas
    কেন যে ব্যাংকে ছিলেন
    Apurba Neogi
    Wonderful and very inspiring post..
    Kanti S
    Parjotan ar janno ato sundar lekha khub bhalo laglo
    Chanchal Bhattacharya
    খুব সুন্দর লেখা।
    ভালো লাগলো।।
    Probir Das
    অসাধারণ একটা লেখা ।আমি গর্বিত আপনি বাঙ্ক কর্মচারী ছিলেন ।
    Priyabrata Panja
    সুপ্রিয় দা সাথী ও সার্থকের আলোচনার মাধ্যমে,তোমার আইডিয়া ভালভাবেই তুলে ধরেছ।পর্যটন এক নতুন শিল্প,এর মাধ্যমে,বিপুল কর্ম সংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব।এর জন্য পরিবেশকে উন্নত করা ও তার রক্ষা করা দরকার,এর জন্য সরকারী ও বেসরকারি এবং এন. জি. ও দের সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।সর্বোপরি মানুষকে সচেতন হতে হবে।যে ভাবে,নদী,নালা,পুকুর এবং বনাঞ্চল কলুষিত হচ্ছে, এবং চাষবাসের জন্য যে পরিমান কেমিক্যাল প্রয়োগ বেড়েছে এবং কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী ও মানুষ পরিবেশকে কলুষিত করছে,তার যথাযত আটকাতে না পারলে,আমাদের রাজ্য বা দেশের আধুনিক পর্য্যটন শিল্পকে সারা বিশ্বের প্রথম সারিতে নিয়ে আসা অসম্ভব।
    Swapan Dattaray
    Nice .
    Aparajita Sengupta
    “দেখা হয় নাই চক্ষু মিলিয়া , ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু” ।অনেক তথ্য পেলাম।ভালো লাগলো ।

    Liked by 1 person

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s