সকালে চা খেতে খেতে নিশ্চিন্তে খবরের কাগজ পরছিল সার্থক । এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো । দেখল ছোটবেলার বন্ধু সৌম্যর ফোন । তাড়াতাড়ি ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপার থেকে সৌম্যর গলা ভেসে উঠলো – Happy marriage anniversary . তা এটা কত বছরের ?
– আর বলিস না , তোকেও ফোন করে জানিয়েছে । তা এবার ৩৫ বছরে পড়বে । তুই কি কলকাতাতেই আছিস ? সন্ধ্যাবেলা Princeton club আসছিস তো ?
– না এসে পারি । তোর ছেলে এমন করে বলল । আচ্ছা Princeton club টা তো প্রিন্স আনায়র শা রোডে , তাই না ?
– হ্যাঁরে । নবীনা সিনেমার ঠিক উল্টোদিকে । সাতটার মধ্যে চলে আসিস । ঠিক সাতটায় ওরা প্রোগ্রাম শুরু করবে বলছে ।
– তার আগেই আসবো । আচ্ছা তোর ছেলে এখন কোথায় থাকে ?
– সাম্য এখন কলকাতাতে । গত বছর ওর বিয়ে হল । ও বৌ নিয়ে এখানেই থাকে । আরে টেলিফোনেই কি সব কথা বলবি ? তাড়াতাড়ি আয় । সব কথা হবে ।
খবরের কাগজটা পড়তে আর ভাল লাগছিল না । কাগজটা রেখে মাথাটা সোফায় এলিয়ে দিলাম আমি । আর সাথে সাথেই আমার ছোটবেলার কত ঘটনা চোখের সামনে ভেষে উঠলো । আমার ছোটবেলা কেটেছে কলকাতাতে । আমি এক ছেলে । বাবা একটা প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরী করত । বেহালাতে আমাদের নিজেদের একটা ছোট একতলা বাড়ি ছিল । আমার যখন দুবছর বয়স তখন আমার ঠাকুমার মুখে সুকুমার রায়ের কবিতা শুনে শুনে সব কবিতা মুখস্ত করে ফেলেছিলাম । ক্লাস এইট অবধি মা এর কাছেই পড়েছি । অঙ্ক আর ইংরাজী বাবা দেখাতো । ছোটবেলাটা আমার ঠাকুমা , দাদুর কাছেই বেশী কেটেছে । আমার যত আবদার ছিল ঠাকুমা , দাদুর কাছে । মা সারাদিন রান্না আর ঘরদোরের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকতো । আর বাবা সকাল আটটা – সাড়ে আটটায় অফিস বেড়িয়ে যেত আর ফিরতে ফিরতে সেই আটটা -নটা । রবিবার দিনটা সারাদিন বাবা বাড়িতে থাকতো । মনে আছে প্রত্যেক রবিবার বাবা পাঁঠার মাংস নিয়ে আসতো আর মা খুব কষা করে রান্না করত । মনে পড়ে মাংসতে মা বড় বড় আলু দিত । আমার খুব ভাল লাগত মাংসের আলু খেতে । যেহেতু আমার ঠাম্মা মুরগির মাংস খেত না তাই প্রতি রবিবার বাবা পাঁঠার মাংসই নিয়ে আসতো । আর বিকাল বেলা আমরা সবাই মিলে কোন না কোন আত্মীয়র বাড়ি বেড়াতে যেতাম বা কোন আত্মীয় আমাদের বাড়িতে আসতো । মা , বাবা আর ঠাকুমা মাঝে মাঝে সিনেমা দেখতে যেত আর দাদু আমায় নিয়ে বিকালে ঘুরতে বেরত । ঘুরতে ঘুরতে আমারা মিষ্টির দোকানে যেতাম । কোনদিন সিঙ্গারা বা কোনদিন ভেজিটেবিল চপের সাথে রসগোল্লা খেতাম দাদুর সঙ্গে । তখন টিভি আসেনি তাই বসার ঘরে বসেই পড়াশুনা করতাম । দাদু আমার পাশে বসে গল্পের বই পরত । মা আর ঠাম্মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত থাকতো । ঠাম্মা যখন বই পাল্টাতে পাঠাগার যেত আমিও মাঝে মাঝে ঠাম্মার সাথে যেতাম । রাস্তায় যেতে যেতে কত জনের সাথে কথা বলত ঠাম্মা । সবাই আমায় কত আদর করত । আমার বাবা , মা , ঠাম্মা , দাদুকে আমাদের পাড়ার সবাই চিনত । ছোটবেলাটা সবার সাথে মিলে কি আনন্দেই না কাটতো ।
তারপর আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম । পড়াশুনার চাপ বাড়ল । যদিও আমার বাবা , মা কখনও চায়নি আমি স্কুলের পরীক্ষায় ১ম ,২য় বা ৩য় হই । ওনারা চাইতেন আমি যেন ভালভাবে পাশ করে উঠি । খেলাধুলা , গল্পের বই পড়া এসব দিকেই ওনাদের বেশী উৎসাহ ছিল। ক্লাস এইট অবধি আমার পড়াশুনায় কোন চাপ ছিল না । প্রত্যেক বছর আমরা বইমেলা থেকে অনেক বই কিনতাম । এছাড়া প্রত্যেক মাসে বাড়িতে আসতো ছোটদের পত্রিকা । পুজো সংখ্যাও আসতো দুটো । বাবা , মা , দাদু আর ঠাম্মা খুব গল্পের বই পরত । মার আবার বিভিন্ন হাতের কাজ করতে ও গান শুনতে খুব ভাল বাসতো । আমাদের বাড়িটা মার হাতের কাজে ভর্তি ছিল। শুনেছি মা ভাল নাচ জানত । কিন্তু বিয়ের পর নাচ নিয়ে কোনদিন থাকেনি । প্রত্যেক বছর শীতকালে আমরা সবাই মিলে দূরে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে যেতাম । নাইনে উঠার পর থেকে বেড়াতে যাওয়াটা একটু কমে গেছিল । কেননা টিউশন শুরু হয়ে গেছিল । তারপর আস্তে আস্তে স্কুল পেরিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হলাম । ছোটবেলা থেকে কলেজ লাইফ অবধি দারুন কাটছিল । তারপর চাকরি পেতেই জীবনটা অনেকটা বদলে গেল । বাড়ির থেকে সবাই চাপ দিতে লাগলো বিয়ে করার জন্য । এর মধ্যে ঠাম্মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে । দাদুরও বয়স হয়েছে তাই দাদুর খুব ইচ্ছা নাতির বিয়ে দেখে যাবে । অগত্যা বাবা , মা আমার জন্য ভাল মেয়ের খোঁজ করতে শুরু করলো । আমি তখন ভালই চাকরী করি । বাবাও চাকরি করে । নিজেদের বাড়ি । কোন অভাব ছিল না । ভাল ভাল সম্বন্ধ আস্তে লাগলো । কিন্তু দাদুর আর নাতির বৌ দেখা হোল না । দাদুও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ।ঠাম্মাকে বড় ভালোবাসতো দাদু । তাই ঠাম্মাকে ছেড়ে আর বেশিদিন বাঁচল না । এর জন্য আমার বিয়ের ব্যাপারটা কিছুটা ভাটা পড়ল । আমিও বাবা – মার সাথে খুব আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলাম । অবশেষে মা , বাবারা সাথীকে পছন্দ করলো আমার বৌ হিসাবে ।
সাথীর ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম ।
-কি গো , ঘুমিয়ে পরলে নাকি ? যাও তাড়াতাড়ি স্নান করে খেয়ে নাও । আজ আবার অনুষ্ঠান আছে না ? সবাই আসবে । আমাকে তৈরি হবার সময় দিতে হবে না ? দুপুরে একটু না ঘুমালে দেখতে ভাল লাগবে না । তাই বলছি চল , তাড়াতাড়ি কাজ গুলো সেরে নিই ।
– সাম্য ফিরেছে ? ও তো আবার ক্লাবে গেল সব আয়োজন ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে । খুব ঘটা করে আয়োজন করছে ।
– কার ছেলে দেখতে হবে না । বউমা বললো ও এখনই এসে পড়বে । তুমি উঠে পর ।
সাম্য তাড়া লাগাচ্ছে – মা, আর দেরী করোনা , তাড়াতাড়ি রেডি হও । এরপর সব নিমন্ত্রিতরা এসে পড়বে আর অভ্যর্থনা করার কেউ থাকবে না । আমরা সবাই রেডি । শুধু তোমার জন্য দেরী হচ্ছে ।
– আরে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী , একটু ভাল করে সাজব না । বৌমার বাপের বাড়ির লোকজন আসবে আর আমি যদি একটু ভাল করে ড্রেস না করি তোর প্রেস্টিজে লাগবে না ?
– তোমার ড্রেসের থেকে তোমার পরিচয়টাই আসল ।সাম্য বললো ।- আর সাজতে হবে না , চল এবার ।
খুব সুন্দর করে ক্লাবটা সাজিয়েছে সাম্য । ঝলমল করছে চারিদিক । আমার আর সাথীর আলাদা বসার একটা জায়গা করেছে । সেটাও চারিদিকে ফুল দিয়ে সাজিয়েছে । বন্ধু – বান্ধব , আত্মীয় স্বজন অনেকের সাথে কতদিন পরে দেখা হচ্ছে । আজকাল তো আর কারও বাড়ি যাওয়া হয়না । সবাই খুব ব্যাস্ত । অনুষ্ঠানেই একে অপরের সাথে দেখা হয় । আমাকেও মাঝে মাঝে অফিসের কাজে বাইরে গিয়ে থাকতে হতো । সাথীর সাথে আমার অনেক আত্মীয়র পরিচয় পর্যন্ত নেই । সাম্য আর আমার বউমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে ওরা আমাদের বেশিরভাগ আত্মিয়দের সাথে ঠিক যোগাযোগ করেছে । আমার ছোটবেলার বন্ধুদের খুজে খুজে নিমন্ত্রণ করেছে । আবার মনে হচ্ছে ছোটবেলাটা ফিরে পেয়েছি । যাইহোক খুব আনন্দে কাটতে লাগলো মুহূর্তগুলো । রাত গড়াতে লাগলো , একে একে নিমন্ত্রিতরা বিদায় জানিয়ে যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিল । রইলাম শুধু আমরা চারজন – আমি , সাথী , সাম্য আর আমার বৌমা । বৌমা আমায় জিজ্ঞেস করলো – বাপি আপনি মাম্মাকে কি দিলেন ? বললাম – এখনও কিছু দিইনি , বাড়ি গিয়ে দেব । বাড়িতে রাখা আছে । চল এখন বাড়ি যাওয়া যাক ।
সবাই খুব ক্লান্ত । তাই বাড়ি ফিরে যে যার ঘরে ঢুকে পড়লাম । সাথীও অপেক্ষা করছিলো আমার উপহারের জন্য । পকেট থেকে একটা সাদা খাম বের করে ওর হাতে দিলাম ।
– কি আছে ? চেক নিশ্চয় । কম টাকায় হবে না । আমি যাতে ভাল একটা সোনার গহনা কিনে সবাইকে দেখাতে পারি । জানো গতবছর বিবাহ বার্ষিকীতে বোন কি পেয়েছে ? কি সুন্দর একটা সোনার গহনা । ওর বর তো তোমার থেকে অনেক কম মাহিনা পেত । কিন্তু দেখ ।
আমি চুপ করে রইলাম । সাথী আস্তে আস্তে খামটা খুলতে লাগলো । মুখটা ওর আরও চকচক করছিলো । খামটা খুলতেই বেড়লো একটা চিঠি ।
– এটা কি ? শুধুই চিঠি ?
আমি বললাম – খুলে দেখ কি লেখা আছে ।
সাথী পরতে লাগলো –
সাথী ,
আজ আমাদের এই ৩৫ বৎসরের বিবাহ বার্ষিকীতে আমি তোমায় ,আমার এতদিন ধরে একান্তভাবে মনের মধ্যে থাকা সমস্ত কথা তোমায় উজার করে বলতে চাই । মুখে বললে নানাভাবে বাঁধা আসবে জানি তাই এই লেখনী । আশা করবো তুমি শান্তভাবে আমার প্রতিটি মনের কথা অনুভব করার চেষ্টা করবে । আমাদের এই দীর্ঘ বৈবাহিক জীবনের প্রতিটি ঘটনার সাক্ষী শুধুমাত্র আমরা দুজন । এতদিন ধরে সঠিক সময়ের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম । আজ আমি অবসর গ্রহণ করেছি। অবসরকালীন ভাতা হিসাবে যা পেয়েছি তা আমাদের পক্ষে যথেষ্ট । আমাদের একমাত্র ছেলে সাম্য এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের বউমাকে নিয়ে আমাদের এই কলকাতার বাড়িতে ভালই আনন্দের সাথে আছে । কারণ আমাদের বৌমা এই কদিনেই সকলের সাথে কি সুন্দর মিশে গেছে । আমাদের সবাইকে দারুন সন্মান দেয় । এইকদিনেই সংসারটাকে একদম আগলে রেখেছে । আমি লক্ষ্য করছি যে তোমার মতকে ও সবসময় গুরুত্ব দেয় । যেটা তুমি কোনদিনই দিতে না । আর আমার বাবা মা তোমার কাছে ছিল একটা বোঝা । আমার কাছে এই বাড়িটার অনেক কষ্টের স্মৃতি আছে যেটা আমায় সবসময় পীড়া দেয় । আমাদের বিয়ের কিছুদিন পরই বুঝতে পারলাম আমার বাবা- মার যে সন্মানটা পাওয়া দরকার সেটা তোমার কাছে পাচ্ছেনা । যদিও আমার বাবা মা সবসময় তোমার সাথে সহযোগিতা করছিলো । তোমার কি ভাল লাগে সেদিকেই ছিল আমার বাবা মার সবসময় নজর । সেদিনের কথাটা আমার স্পষ্ট মনে আছে । আমি ঘরে বসে কাজ করছিলাম । তোমরা বসার ঘরে ছিলে । আমার বাবা হাসতে হাসতে তোমায় বললো – বৌমা প্রায় সাত -আট মাস হয়ে গেল তোমার হাতের রান্নার স্বাদ এখনও পেলাম না । এতো বছর তোমার শাশুড়ির হাতে রান্না খেয়ে খেয়ে একঘেয়ে হয়ে গেছে । তুমি তোমার পছন্দ মত যা খুশি একটা রান্না কর । মুখের স্বাদটা একটু পাল্টাই । তুমি বসার ঘরে বসে সকাল বেলা হাতে নেল পালিশ লাগাচ্ছিলে ।আমার কানে আসলো তুমি বলে উঠলে – আমার মা আমাকে বিয়ের আগে কোনদিন রান্না করতে দেয়নি । আমি পড়াশুনা করেছি , গান শিখেছি । আমি এসব নিয়েই থাকবো । আমি রান্না করবো এই রকম আশা করবেন না । একান্তই যদি স্বাদ পাল্টাতে হয় রান্নার লোক রাখুন । আপনার ছেলে তার খরচা দেবে ।
বাবা বা মা কেউ কিছু বললো না ।কারণ আমি কষ্ট পাই সেটা বাবা বা মা চাইছিল না । উঠে নিজেদের ঘরে চলে গেল । আমিও চুপ করে রইলাম কারণ আমি জানতাম আমি কিছু বললেই তুমি বাবা মাকে নিয়ে কিছু অপমানজনক কটু কথা বলবে । তাতে বাবা মা আরও দুঃখ পাবে । কষ্টটাকে মনের মধ্যে চেপে রাখলাম । ভাবলাম তোমার সন্তান হোলে সব ঠিক হয়ে যাবে । বাবা মাকে বুঝিয়ে একটা রান্না করার লোক ঠিক করা হল । কেননা মায়ের ও বয়স বাড়ছিলো । আরেকদিনের কথা আমার খুব ভাল করে মনে পড়ছে । রাত্রিবেলা শোয়ার আগে তুমি বললে যে তোমার বোন তার বরকে নিয়ে কদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে আসতে চায় । আমি বললাম – খুব ভাল কথা , আসুক । তা কবে আসবে ?
তুমি বললে – একটা অসুবিধা আছে ।
আমি বুঝতে না পেরে জানতে চাইলাম – কি অসুবিধা ?
তুমি বলেছিলে যে আমাদের তো দুটো ঘর ওরা শোবে কোথায় ? বাবা -মা যদি কদিনের জন্য অন্য কোথায় গিয়ে থাকে , তাহলে ঐ সময়টা ওদের আসতে বলতাম ।
আমি তোমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম । আমাদের বাড়িতে কত আত্মীয় স্বজন এসেছে আমার দাদু -ঠাম্মাকে তো আমার বাবা মা কোনদিন বলেনি অন্য কোথায় থাকতে । এই দুটো ঘরেই সবাই মিলে কি আনন্দে কাটাতাম ।এইরকম চিন্তা যে মাথায় আসতে পারে আমি ভাবতেই পারি না । আমি তোমায় বলেছিলাম যে ওদের আসতে বল , আমরা ঠিক adjust করে নেব । বাবা , মা থাকলে ওদেরও ভাল লাগবে ।
– না ভাল লাগবে না । ওরা আমাদের সাথে কদিন খুব আনন্দে কাটাতে চায় । বাবা মা থাকলে সেটা হবে না ।
– কেন হবে না ? আমার বাবা মা তো সবার সাথেই দারুন মিশতে পারে । আমার সাথে তো বাবা মা একদম আমার বন্ধুর মতো ।
– ঠিক আছে , আমি ওদের মানা করে দিচ্ছি । তুমি রাগ করে শুয়ে পরলে । আমি ভাবছিলাম যে তোমার এখনও সাংসারিক বুদ্ধি আসেনি , তাই এমনি করছ । আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে । এরপর আমাদের মাঝে সাম্য আসলো । বাবা – মার আর আনন্দ ধরেনা । সাম্যকে নিয়ে বাবা মার সারাদিন কেটে যায় । তোমাকে সাম্যর জন্য কিছুই করতে হয় না । ভাবলাম এবার সব ঠিক হয়ে যাবে । অপেক্ষায় আছি সব ভাল হওয়ার । কারণ বাবা -মা আর তোমার উপর আমি দায়বদ্ধ । কারও দিক থেকেই আমি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারব না । সাম্যর যখন ২ বৎসর বয়স আমার মা ওকে আমার মতো সুকুমার রায়ের কবিতা শেখাতে লাগলো । সাম্যও ওর দাদু ঠাম্মা ছাড়া থাকতেই চায়না । কিন্তু তোমার ভীষণ আপত্তি । তুমি ওকে বাংলা কবিতা না শিখিয়ে ইংরাজি কবিতা শেখাতে চাও । তুমি চাও সাম্য ছোটবেলা থেকে খালি ইংরাজিতেই কথা বলুক । মা বাবার জন্য তোমার ইচ্ছাটা নাকি পূরণ হচ্ছে না । আমি তোমায় কত বোঝানর চেষ্টা করেছি । বলেছি আরে ইংরাজি তো শিখবেই কিন্তু বাঙ্গালির ছেলে বাংলাটা শিখবে না ? বাংলা কত সমৃদ্ধ একটা ভাষা । বাংলা না শিখলে বাংলা সাহিত্য থেকে ওকে বঞ্চিত করা হবে । দুটো ভাষাই শিখুক । আমরা যেমন শিখেছি । আমরা বাংলা , ইংরাজি দুটো ভাষাতেই সাছন্দ বোধ করি । তুমি নাছোড়বান্দা । ওকে শুধু ইংরাজিই শেখাবে । বাব ,মা তোমায় কত বুঝিয়েছে যে বৌমা আমাদের অনেক আত্মীয় বা পাড়া প্রতিবেশী আছেন যারা ইংরাজি ভাল করে বলতে পারে না । সাম্য তো তাদের সাথে মিশতেই পারবে না । তুমি কোন কথাই কানে নিতে চাইছিলে না ।বাবা – মার সাথে সাম্যকে নিয়ে তোমার একটা সংঘাত তৈরি হচ্ছিল । সাম্যকে তুমি বাবা – মার থেকে দূরে রাখছিলে । তাতে বাবা , মা ও সাম্যর খুব কষ্ট হচ্ছিল । আমি তোমায় কত বুঝিয়েছি কিন্তু তুমি শুধু আমার সাথে ঝগড়া করেছো । আমি নাকি আমাদের ছেলের কথা একদম ভাবিনা । তোমার জন্য সুন্দর একটা ছোটবেলা সাম্যর থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল । বাবা মার কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না । বাবা মার প্রতি অশ্রদ্ধা তোমার দিন দিন বৃদ্ধি পেতে লাগছিল । বাবা মা এতদিনের নিজের সংসারে পর হয়ে যাচ্ছিল । আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা মা সব কিছু মানিয়ে নিচ্ছিল । ধীরে ধীরে বাবা মার সংসার থেকে মোহ উঠে যাচ্ছিল । বুঝতে পারছিলাম ভিতর থেকে ওনাদের শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিল । ইচ্ছা করছিলো তোমার থেকে আলাদা হয়ে যাই । কিন্তু সাম্য তো একটা শিশু । ওর মনের উপর যাতে কোন চাপ না পরে তারজন্য আমি বাড়িটাকে দোতালা করে নিলাম । বাবা , মা একতলায় থাকতে চাইলেন । আমি জানি তুমিও তাই চাইছিলে । বাবা , মার যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য সব ব্যবস্থা করলাম । রান্নার লোক এবং সবসময়ের জন্য একজন কাজের লোক রাখা হোল বাবা মার জন্য ।তুমি যাতে কোনরকম চিৎকার করতে না পার , দোতালার জন্যও রান্নার ও সব সময়ের জন্য কাজের লোক ঠিক করে দিলাম । বরাবরের একটা সংসার ভেঙে দুটো সংসার হোল । একতলায় বাবা মা আর দোতলায় তাদের একমাত্র ছেলে আর বৌমা ।বাবা , মা বাধ্য হয়ে সব মেনে নিয়ে ছিলেন । সাম্য কিছুতেই দোতলায় থাকতে চাইছিল না , ও চাইছিল ওর ঠাম্মা , দাদুর কাছে থাকতে । তুমি জোর করে ওকে দোতলায় নিয়ে যাচ্ছিলে । তোমার মনে আছে কিনা জানিনা যাওয়ার দিন সাম্য ওর দাদু , ঠাম্মাকে জড়িয়ে কি কান্না আর বাবা , মার চোখ থেকে অঝরে জল ঝরে পড়ছিল । আমি সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে এর প্রতিশোধ আমি একদিন নেব । আজ সেই দিন্ এসেছে । আজ আমার বাবা মা বেঁচে নেই কিন্তু এই বাড়িতেই তুমি যেমন আমার বাবা মার থেকে আমাকে আলাদা করেছিলে আমিও তোমাকে তোমার ছেলের থেকে আলাদা করে দেব । এক সংসারে থাকতে দেব না । একটা কথা জেনে রাখ তুমি না চাইলেও সাম্য আর আমি বাবা , মার সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখতাম । আজ সাম্য সাবালক এবং আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি ও একজন বাস্তবধর্মী মানুষ । ছোটবেলার প্রতিটি কথা ওর মনে দাগ কেটে আছে । তুমি আর ওকে অন্য কিছু বোঝাতে পারবে না । আমি জানি ও ওর দাদু , ঠাম্মাকে খুব ভাল বাসতো । তুমি শুধু আমাকেই আমার বাবা , মার থেকে শারিরীক ভাবে আলাদা কর নি , সাম্য অতটুকু একটা শিশু তাকেও তার দাদু , ঠাম্মার প্রতিদিনকার স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছো ।তাই আমি কোনদিনই তোমায় ক্ষমা করতে পারিনি । শুধু আমার যা দায়িত্ব – কর্তব্য পালন করে গেছি । আজও আমি আমার বিয়ের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে নিজেকে বিরত করবো না । কিন্তু আমি মনে প্রানে তোমার শাস্তি চাই ।
এই চিঠির আরও দুটো কপি আমি সাম্য আর বউমাকে দিয়েছি ।এখন ওরা সব জেনে ঠিক করুক ওরা কি চায় । আমি ওদের ওপর কোন জোড় করবা না । ওদের ইচ্ছার অনুগ্রহে তোমায় বেঁচে থাকতে হবে এবং সেটাই হবে তোমার চরম শাস্তি । -ইতি সার্থক
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
সমাপ্ত
মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটা গল্প পড়লাম। অসাধারন।
LikeLiked by 1 person
অসংখ্য ধন্যবাদ
LikeLiked by 1 person
Sucheta Sen
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো একেবারে বাস্তব
Rupa Bhattacharjee
👏 👏লেখকের প্রশংসা না করে থাকতে পারলাম না। অসাধারণ। একেবারে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা এবং এই গল্পে শিক্ষনীয় একটা ব্যাপার আমাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল উওরসূরী র প্রতি আমার দায়বদ্ধতা।
Mousumi Dasgupta
Bhison bhalo laglo..
Mita Sengupta
Khub bhalo.
Krishnasis Chatterjee
Bangla te likhte parlam n.a.. Tor lekhata asadharan. Bhalo thakis r aro ei rakam lekh.
Bani Paul
👏👏khub valo laglo
Tapasi Banerjee
Beautiful. Darun laglo.
Abhijit Samadder
খুবই মর্মশ্পর্শী এবং বাস্তব ঘটনা।
Kanti S
Asadharon khub bhalo galpo
Krishna Chaudhuri
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।
Mita Sengupta
Very well written.
Tapasi Sarkar
অসাধারণ লেখা ।খুব সুন্দর ।লেখক সত্যিই প্রশংসনীয় ।
Papia Kargupta
Osadharon hoaychhe re lekhata 1tu onno dhoroner darun laglo golpota pore r ha purotai porechhi
Pradip Kumar Das
Very nice practical n mind blowing
Bidyut Chakraborty
পাবলিক খুব পড়ছে.
Deboshree Dasgupta
অপুর্ব
Manatosh Baroi
খুব ভালো লাগলো ,
Prasanta Chakraborty
এ রকম ধরনের সম্পর্কের টানাপোড়েন একপক্ষের নীরবে মেনে নেয়া অনেক বাড়ীতেই হয়। সেটা এরকম সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা! অসাধারণ।✔️✔️
NisithenduBikas Lodh
খুবই ভালো হয়েছে লেখাটা। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত এই যে শাস্তি একটু বেশি মাত্রায় হয়ে গেছে যেটা কিনা প্রতিহিংসায় পর্যায়ে চলে গেছে। আবারও বলছি এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।
Partho Mukherjee
Lekhata khub sundar, but amio lodh babur sathe ekmot na hoye parlamna..
Biplabshankar Mazumder
আমার গল্পটি ভালো লেগেছে । আর শাস্তিও পরিমিত সার্থকের বিগত জীবনের হতাশা ও পিতামাতার প্রতি অবহেলার দূঃখ র তুলনায়।
Juthika Sinha
Galpo ta valo laglo
Suvendu Basu
Bhaloi Supriyoda kintu apnar Sarthak aro agei protibad korte parto
Rinki Sen
khub sundor hoeche lekha ta — pore khub valo laglo
Mita Sen
Khub sundori
Nilu Biswas
Mone dag kata glpo apurbo
Mihir Guha
গল্পে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা আমি জানিনা, তবে এটা জানি বাবা মায়ের কষ্ট দেখে অনেক ছেলেই কিছু করতে পারে না বৌদির সঙ্গে আপাত সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য. তাদের কষ্টের কোন শেষ নেই. তারা না পারে বাবা মাকে খুসি করতে বা তাদের কষ্টের প্রতিদান দিতে না পারে বউয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মন থেকে সহ্য করতে . ধন্যবাদ সুপ্রিয় বাবু এরকম একটা লেখার জন্য .
Reena Dasgupta
Khub bhalo laglo ektu akada tobe best laglo
Dilip Saha
অসাধারণ
Anup Singha
খুব ভালো লাগলো, অভিজ্ঞতা প্রসূত গল্প! শিক্ষনীয় ।
Provat Kumar Mitra
লেখাটা পড়ার পর এক অবক্ত যন্ত্রণা মনকে গ্রাস করে।মা- বাবার প্রতি জীবন সঙ্গিনীর দীর্ঘ দিনের অবহেলা ও অশ্রদ্ধার বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও মানসিক যন্ত্রণার সম্মিলিত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে চরমপন্থা হিসাবে ‘শাস্তি’র মাধ্যমে।
আমরা যারা মরমী ও দরদী পাঠক – তারাও ‘ সাথী’র এই চরম দণ্ডের বিকল্প খুঁজছি নিজেদের অজান্তেই।
অনুভূতিপ্রবণ মন ছাড়া এ লেখা অসম্ভব!লেখাটির সবচেয়ে বড় গুণ – পড়া শেষ করার পরও সারা মনপ্রাণ জুড়ে চলতে থাকে তার অনুরণন – চোখের দৃষ্টিও বোধহয় ঝাপসা হয়ে আসে!!!
Prosanta Saha
Thanks.It is a n untold history which is known to almost all.
Apurba Neogi
Amazing.
LikeLiked by 1 person
THANKS TO ALL
LikeLike