কোচবিহার – জয়ন্তী – বক্সা – রাজাভাতখাওয়া

কোচবিহার – জয়ন্তী – বক্সা – রাজাভাতখাওয়া

এক নিকট আত্মীয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে কদিনের জন্য গেছিলাম উত্তরবাঙলার কোচবিহার শহরে । এর আগেও অনেকবার কোচবিহার গিয়েছি বিভিন্ন কাজে । কিন্তু এমন করে কোচবিহারকে আগে কখনও এতটা ভাল লাগেনি । হাতে অফুরন্ত সময় আর সাথে ছিল প্রিয়জনেরা। বেড়িয়ে পড়লাম শহর ও তার আশপাশ ঘুরতে । ভোরবেলা হাঁটতে হাঁটতে গেলাম বাঁধে । নীচ দিয়ে তরতর করে বয়ে চলেছে তোরষা নদী আর তার উল্টোদিকে দেখলাম কোচবিহার রাজাদের সমাধি । সকাল ১০ টায় রাজবাড়ী জনগনের জন্য খুলে যায় । তাই প্রাতরাশ সেরে চললাম রাজবাড়ী দেখতে । ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদের আদলে এখানকার রাজবাড়ীটি তৈরি হয়েছিল যার অপর নাম ভিক্টর জুবিলি প্যালেস । তারপর সাগর দীঘি হয়ে মদন মোহন মন্দির । ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ।এখানকার বিগ্রহটি ছিল কোচবিহারের মহারাজের গৃহদেবতা।কোচ বিহারের মদনমোহন মন্দিরে আছে মোট পাঁচটি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে একটি করে বিগ্রহ রয়েছে।এক সময় রাসচক্র ঘুরিয়ে রাজারা রাসমেলার সূচনা করতেন। এখন রাজার পরিবর্তে মন্দিরের ট্রাস্টি এবং জেলাশাসক এই রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস মেলার সূচনা করেন। সন্ধ্যাবেলা আবার এই মন্দিরে আসলাম আরতি দেখতে । আলোয় মদনমোহন মন্দিরের চেহারাই অন্যরকম । পরেরদিন গোসানিমারী গেলাম রাজপাট ঢিবি দেখতে । ভারতীয় পুরাতত্বের দুবছরে চেষ্টায় এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে বিশাল ইটের প্রাচীর, পাতকুয়া, ইটের তৈরি সমান্তরাল দুটি দেওয়াল , একটি পুকুর এবং পাথরের তৈরি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ । ওখান থেকে গেলাম চৌধুরীহাট, বাংলাদেশ দেখতে । রাস্তার পাশেই কাঁটাতার । ওপাশেই বাংলাদেশ । এক মাটি , এক আবহাওয়া , এক ভাষা , এক আকাশ কিন্তু দুটো আলাদা দেশ ।

যেহেতু বক্সা , জয়ন্তী আমাদের আগে দেখা হয়নি তাই কোচবিহার থেকে আমরা একটা গাড়ি নিয়ে চললাম জয়ন্তীর উদ্দেশে । গাড়ি আমদের রাজভাতখাওয়া হয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে জয়ন্তীর রিভারবেডে নামিয়ে দিল । লাটাগুড়ির মতো দুপাশে জঙ্গল আর তার মধ্যে দিয়ে রাস্তা । গাড়ি থেকে নামতেই ইচ্ছা করছিলো না । সামনেই বিশাল পাহাড় । জয়ন্তীর রিভারবেডের ধারে বেশ অনেকগুলো হোটেল বা হোমসটে আছে । আমরাও পছন্দ করে নিলাম আমাদের মতো । কোচবিহার থেকে সকাল সাড়ে আটটায় রওনা হয়ে জয়ন্তী পৌছাতে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় লাগলো । হাতে প্রচুর সময় তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট সেরে একটা জীপ ভাড়া করে মহাকাল মন্দির দেখতে গেলাম । ছোট মহাকাল মন্দিরের একটু উপরে দারুন সুন্দর একটা ঝরনা দেখলাম । জয়ন্তী নদীর ঠাণ্ডা পরশে মন , প্রান জুরিয়ে গেল । পাহাড়ের কোলে জয়ন্তী নদীর জলে কাটালাম অনেকক্ষন । হোটেল লাঞ্চ সেরে সাড়ে তিনটে চারটা নাগাদ একটা জিপসি নিয়ে ভুটিয়া বস্তি ছাড়িয়ে গেলাম চুনিয়া ঝোরার ওয়াচ টাওয়ারে যদি জঙ্গলের জীবদের দেখা যায় । শুনলাম চিতা ও হাতির দেখা নাকি পাওয়া যেতে পারে । কিছু ময়ূর , হরিণ আর বানর চোখে পড়ল । এর আগে অনেক জঙ্গলে গেছি , অনেক জন্তু জানোয়ার দেখেছি । তাই জঙ্গল দেখার ইচ্ছাটাই আমাদের বেশী ছিল । কেননা এক এক জাগার অরন্য এক এক রকম । পরদিন ভোর ছটায় বক্সার কোর বা ঘন জঙ্গলের ভিতরে গেলাম । জঙ্গলের একদম গভীরে গভীরে ঘুরে বেড়ালাম । জোড়ায় জোড়ায় বেশ কটা ধনেশ পাখি দেখলাম । ওরা নাকি জোড়ায় জোড়ায় থাকে । হাতি দেখতে পাইনি কিন্তু খুব কাছ থেকে হাতির ডাক শুনেছি । একটা আলাদা অনুভুতি । হরিন দেখার থেকে জঙ্গলের মধ্যে হরিণের ডাক শুনতে খুব ভাল লাগছিল । বাঘের ডাক শুনতে পারলে জানিনা কেমন অনুভুতি হতো । যাইহোক গভীর জঙ্গলে তিনঘণ্টা কাটিয়ে হোটেলে ফিরে জলখাবার খেয়ে একটা গাড়ি নিয়ে রাজভাতখাওয়ার মিউজিয়াম দেখে ফিরলাম কোচবিহার । রাজভাতখাওয়ার মিউজিয়াম খুব ভাল লাগলো । ভুটান রাজার হাতে বন্দী দশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর কোচবিহারের রাজা এখানে এসে ভাত খেয়ে ছিলেন তাই এই জায়গার নাম রাজভাতখাওয়া । অনেক আনন্দ আর সুন্দর স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসলাম ।

Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

2 thoughts on “কোচবিহার – জয়ন্তী – বক্সা – রাজাভাতখাওয়া

  1. Sanjukta Mohanty
    So nice
    Mita Sengupta
    Great writing.
    Biplab Guha
    Great outing
    Naru Mahato
    অপূর্ব সুন্দর উত্তর বঙ্গ ।
    Surajit Das Gupta
    Apurbo chabi ar bornona…darun laglo, ekbar jabar icche railo
    Chanchal Bhattacharya
    খুব সুন্দর লিখেছেন।
    ভালো লাগলো।।
    Tapasi Banerjee
    Photo gulo khub bhalo laglo.
    Tapas.
    Mousumi Ghosh
    Khub sundor chobi..
    Abhijit Samadder
    অবসর জীবনটা কিভাবে সুন্দর ভাবে কাটানো যায় সেটা তোমার থেকে শিখতে হয়‌।দারুন ভাবে সুন্দর জায়গাগুলোর বিবরন দিয়েছো।ধন্যবাদ।
    Swapan Dattaray
    khub sundor .
    Pradip Kumar Das
    Khub bhalo laglo.Bhalo lekhechis .Chabi gulo sudor
    Abani Banerjee
    ছবিগুলো ভারী সুন্দর হয়েছে!তবে জয়ন্তী ইত্যাদির একটাও নেই !
    Mitali Chaki
    Apurvo pic
    Pranab Banerjee
    Khub bhalo description Supriya tomar. Amar saisaber jaiga e sob. Khub bhalo lage.
    Jaba Sengupta Roy
    Amader khanik ta Berano hoye gelo. Jungal safari pore etoo bhalo lagche, khub bhalo.
    Mamata Sengupta
    Khub bhalo laglo pore dada, Amra o giyechilam, Raja bhat khawate bhat kheyechish. Apnar lekha theke jante parlam namkoroner kotha👍
    Apurba Neogi
    Superbly described with photographs which enriched us a lot. Great enjoyable outing experience for you.
    Kajal Kumar Das
    Superb Shots.Apurbo Chobigulo.
    Rupa Bhattacharjee
    হেব্বি জমাটি টু্্যর করলে তোমরা 💝💝😘😘
    Nirmal Dey
    I have just now completed my coochbihar tour by reading your descriptions
    Provat Kumar Mitra
    তোমার কোচবিহার ভ্রমণের সুখ স্মৃতি অনুভব করলাম, দারুণ!
    Sucheta Sen
    অদ্ভূত লেখনী দাদা মুগ্ধ হলাম পড়ে ধন্যবাদ
    Gobinda Chakravarty
    পুরানো সেই দিনের কথা
    ভুলব কিরে হায় ..
    Priyabrata Panja
    তোমার চোখে ও বর্নানায় ডুয়ার্স এককথায় অনবদ্য।কোচবিহার ও তার চার পাশের ছবিগুলো খুউব ভালো হয়েছে।জয়ন্তীর আরও ফটো হলে ভাল লাগত।মহাকালের মূর্তি দারুন হয়েছে।আরও কিছু পাবার আশায় রইলাম।তোমার ময়ূরকণ্ঠী কালারের পাঞ্জাবীটা যে তেমার খুব প্রিয় তা বেশ বোঝা যায়,তোমাকে মানায় ও বেশ।খুব আনন্দ কর।
    Kanti S
    Khub sundar pic
    Prema Majumder
    ভালো লাগলো । এবার কোথায় যাবে
    Sanjay Sengupta
    Excellent
    Biswambhar Bose
    কুচবিহার থেকে জয়ন্তী অবধি আমরা গিয়েছিলাম ২০০৫-২০০৬ এর ডিসেম্বর – জানুয়ারী তে। সেই স্মৃতিকে উসকে দিলে তুমি।
    Chaitalee Roy
    Excellent
    Juthika Sinha
    Baby khub Sunder lagche
    Aloka Mitra
    Tour description reading kare mane koachbihar manas Vaman Karlam, Bangladesh dekhe nostalgic lagchilo
    Aparajita Sengupta
    Tomader trip khub enjoy korlam Lalda,chobigulo sundar hoyache.

    Liked by 1 person

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s