রক্তচাপ আমাদের শরীরের জীবনী শক্তি । আমাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গ এবং টিসু খাবার পায় এই রক্তচাপের ফলে । স্বাভাবিক অব্যস্থায় হৃদপিন্ড, রক্ত সঞ্চালন করার সময় , শিরা ও ধমনীর উপর যে চাপ দেয় তার থেকে বেশি থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে । হৃদপিন্ড সংকোচনের সময় যে চাপে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সারা শরীরে পাঠায় তাকে সিস্টোলিক বা systolic রক্তচাপ বা উপরের সংখ্যা বলে এবং হৃদপিন্ডের প্রসারনশীল বা শিথিল অবস্থাকে ( দুই স্পন্দনের মাঝের অবস্থা ) ডায়াস্টলিক বা diastolic রক্তচাপ বা নীচের সংখ্যা বলে । এই অবস্থায় কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত শরীর থেকে হৃদপিন্ডে প্রবেশ করে । এই দুই সংখ্যার দ্বারা রক্তচাপ নির্ধারণ করা হয় । বিভিন্ন সময়ের রক্তচাপ পরিমাপ করে তার গড় করলে প্রকৃত রক্তচাপ পাওয়া যায় ।
প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের রক্তচাপ
অবস্থা | সিস্টোলিক রক্তচাপ | ডায়াস্টলিক রক্তচাপ | |
সাধারনত | ১২০ থেকে ১৩৯ | এবং | ৮০ থেকে ৮৯ |
উচ্চ রক্তচাপ প্রাথমিক অবস্থা | ১৪০ থেকে ১৫৯ | অথবা | ৯০ থেকে ৯৯ |
উচ্চ রক্তচাপ দ্বিতীয় অবস্থা | ১৬০ বা তার বেশি | অথবা | ১০০ বা তার বেশি |
- যদি সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ বা তার থেকে বেশি হয় , ডায়াস্টলিক রক্তচাপ যাইহোক না কেন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হবে ।
- যদি ডায়াস্টলিক রক্তচাপ ৯০ বা তার থেকে বেশি হয় , সিস্টোলিক রক্তচাপ যাইহোক না কেন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হবে ।
- যদি সিস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ বা তার থেকে কম হয় , ডায়াস্টলিক রক্তচাপ যাইহোক না কেন তাকে কম রক্তচাপ বলা হবে ।
- যদি ডায়াস্টলিক রক্তচাপ ৬০ বা তার থেকে কম হয় , সিস্টোলিক রক্তচাপ যাইহোক না কেন তাকে কম রক্তচাপ বলা হবে ।
সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টলিক দুই রক্তচাপই নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত তবুও সিস্টোলিক রক্তচাপের দিকে বেশি নজর দেওয়া ভালো কারণ হার্টের রোগের ঝুকি থাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ বেশি থাকলে ।
মানুষের বিভিন্ন অবস্থায় রক্তচাপের পার্থক্য হয় । ঘুমানোর সময় একরকম , ঘুম থেকে উঠার পর আরেকরকম , পরিশ্রম করার সময় একরকম আবার শান্তভাবে বসে থাকলে আরেকরকম। মানুষের ক্রিয়াকলাপ বন্ধ হলে আস্তে আস্তে রক্তচাপ সাধারণ অবস্থায় চলে আসে । উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরী নাহলে কোন খবর না দিয়েই শরীরের প্রচুর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ।
উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের জীবন যাত্রার উপর অনেকটাই নির্ভর করে । ঔষধ না খাওয়া বা ঔষধের মাত্রা কমিয়ে আনা নির্ভর করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার উপর ।
ভাল থাকতে হলে :-
- ওজন ও কোমরের পরিধি কমানোর চেষ্টা করা :- রক্তচাপ প্রায়ই বাড়তে দেখা যায় ওজন বাড়ার সাথে সাথে । কোমরের চারপাশের ওজন বৃদ্ধিও রক্তচাপ বাড়ায় । ছেলেদের কোমর ৪০ ইঞ্চি বা ১০২ সেন্টিমিটার এবং মেয়েদের কোমর ৩৫ ইঞ্চি বা ৮৯ সেন্টিমিটার বেশি হলে রক্তচাপ বাড়ার ঝুকি বেশি থাকে
- প্রতিদিন নিয়মিত শরীর চর্চ্চা :– প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ মিনিট শরীর চর্চ্চা করলে রক্তচাপ ৪ থেকে ৯ mmHg পর্যন্ত কমানো যেতে পারে । শরীর চর্চ্চা মানে হাঁটা , জগিং , সাইকেল চালানো , সাঁতার কাটা, নাচ করা ইত্যাদি । শরীর চর্চ্চা বন্ধ করলে আবার রক্তচাপ বাড়ার সম্বভানা থাকে
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া : – শস্যদানাযুক্ত খাবার ,ফল , শাকসব্জি ,কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধাজাতীয় খাবার ,সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার কম খেলে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় । স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে প্রায় ১৪ mmHg অবধি রক্তচাপ কমানো যায় । পটাসিয়াম যুক্ত খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে কারণ অতিরিক্ত সোডিয়ামের ক্ষতিকে আটকায়। ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পটাসিয়াম পাওয়া যায় ।
- লবনের পরিমান কম : এক চা চামচ লবনে ২৩০০ মিলি গ্রাম সোডিয়াম থাকে। সারাদিনে আমাদের রক্তচাপ কমানোর জন্য লবন ১৫০০ মিলি গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয় । সোডিয়ামের পরিমান একটু কম করলে রক্তচাপ ২ থেকে ৮ mmHg কমতে পারে । খাবারের স্বাদের জন্য ভেষজ বা মশলা ব্যবহার করা যেতে পারে
- আলকোহলের মাত্রা ঠিক করা : আলকোহল শরীরের জন্য ভাল ও খারাপ দুটোই হতে পারে । কম মাত্রায় আলকোহল রক্তচাপ ২ থেকে ৪ mmHg অবধি কমাতে সাহায্য করে । দিনে একটা ড্রিংক মেয়েদের জন্য এবং ৬৫ এর উপর যে লোকেদের বয়স তাদের জন্য আর যেসব ছেলেদের বা লোকেদের বয়স ৬৫ য়ের কম তাদের জন্য দুটো ড্রিংক বা দুটো পেগ । একটা ড্রিংক ১২ আউন্স বিয়ারের ,৫ আউন্স ওয়াইনের সমান
- ধুমপান থেকে বিরত থাকা : প্রতেক সিগারেট অনেক সময়ের জন্য রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় । ধুমপান থেকে বিরত থাকলে শরীরের অহেতুক ক্ষতি হয় না
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা : মানসিক চাপ রক্তচাপকে বাড়িয়ে তোলে । মানসিক চাপের কারনটা খুঁজে সরিয়ে দিতে পারলে ভাল নাহলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট চুপচাপ বসে গভীরভাবে দীর্ঘশ্বাস নিলে মানসিক চাপকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় । গান শুনে, সিনেমা দেখে , বই পরে যেমনিভাবেই হোক মানসিকচাপকে সরিয়ে রাখতে পারলে শরীরের পক্ষে ভাল ।
- বেশি করে খাওয়া যে সব খাবারে বাজে কোলেস্টেরল নেই বলা যায়, সেই সব খাবার খাওয়া যেমন : ক্রিম যুক্ত দুধ ছাড়া চা বা কফি, সফট ড্রিংক, বিয়ার/জিন/রাম/হুয়েস্কি/ভদকা/ওয়াইন/ব্র্যান্ডি/স্যাম্পেন , স্কোয়াস, টমেটো, কমলা লেবু, লেবু, আপেল, নারিকেলের জল,কলা, আম, আঙ্গুর, নাশপাতি, খেঁজুর, পেপে, আনারস, লিচু, স্ট্রবেরি,চেরী, নারকেল, কচুরি, নিরামিষ পেটিস , আলুর বড়া, সিঙারা, ভেলপুরি, চাট , পপকর্ন, ঢোকলা, ক্রিম ক্র্যাকারস বিস্কুট , মেরি বিস্কুট, পাস্তুরিত দুধ, পাস্তুরিত বাটার দুধ, সয়াবিনের দুধ, রুটি, পরোটা, পুরি, ভাত, ইডলি, দোসা, উপমা, মিসি রুটি, নুডলস, মাক্রনি,পাওরুটি, কর্ন ফ্লেক্স , ওটস , বার্লি, ডাল , সাম্বার , আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, মটর শুঁটি, গাজর,বাঁধাকপি, ফুলকপি, কর্ন, শসা, কুমড়ো, বিন, বেগুন, ব্রকলি, লেটুস পাতা, বিট, মাসরুম, মুলো , শাক, ডিমের সাদা অংশ , আলমন্ড, কাজু, বাদাম, শস্যের তেল , বাদাম তেল, বীজ তেল , চিনি, মধু, জ্যাম/জেলি , জিলাবি ইত্যাদি ।
- কম করে খাওয়া যে সব খাবারে বাজে কোলেস্টেরল আছে : পিজা , হ্যামবার্গার, চিকেন নাগেটস, ক্রিমযুক্ত দুধ , ভ্যানিলা/চকলেট শেক , পনির (ক্রিমযুক্ত দুধের) , চিস , আইসক্রিম, কুলফি, কনডেন্স মিল্ক , স্পাগেটি বা মাংসের বল, কুসুম সহ ডিম বা ওমলেট , মাংস , মেটে, মাখন, ঘি , মেয়নিস , গুলাব জামুন , রসগোল্লা ইত্যাদি ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত
LikeLike
Excellent compilation Supriyo.Carry on.
LikeLiked by 1 person
thanks
LikeLiked by 1 person
Very useful notes. Thanks Suprio Da.
LikeLiked by 1 person
Thanks
LikeLike