আমাদের দেশে তখন ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন হয়েছে ব্যবসা করার জন্য। নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে কলিকাতা এবং বোম্বায়ের ইংলিশ এজেন্সী হাউস ,ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যাংকার হিসাবে কাজ করার মনস্থ করলো ।১৭৭০ সালে তৈরী হলো হিন্দুস্থান ব্যাংক কিন্তু বেশ কয়েক বছর চলার পর ১৮৩২ সালের মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য় হলো । ১৭৮৬ সালে এল জেনেরেল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, ১৭৯১ তে দেউলিয়া হলো । ১৮০৬ সালের জুন মাসে আবির্ভাব ঘটলো ব্যাংক অফ কলিকাতার , পরে ১৮০৯ সালে তার নুতন নাম হলো ব্যাংক অফ বেঙ্গল । এর সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আরো দুটো প্রেসিডেন্সী ব্যাংক তৈরী করলো – ব্যাংক অফ বোম্বে- ১৮৪০ সালে আর ব্যাংক অফ মাড্রাস্- ১৮৪৩ সালে । তখনকার সময়ে সমস্ত সরকারি কাজকর্ম হতো এই তিনটি স্বশাসিত প্রেসিডেন্সী ব্যাংক দ্বারা হতো । ১৯২১ সালে এই তিনটি ব্যাংক একত্রিত হয়ে তৈরী হলো ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া যার ১৯৫৫ তে নামকরণ হলো স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ।১৯৩৫ সালে রিজার্ভ ব্যাংক তৈরী হওয়ার আগে এই ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্কই ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক । ইম্পেরিয়াল ব্যাংক ছিল ব্যক্তিগত মালিকনাধীন । বেশিরভাগ শেয়ার ছিল ইউরোপিয়ানদের হাতে । যেহেতু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রধানত কলিকাতা বন্দর দিয়েই বেশি হতো তাই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কলিকাতাতে ১৮৩৯ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক স্থাপন করলো । কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের ফলে ১৮৪৮ সালে তা বন্ধ হয়ে গেল । ১৮৫৮ সালে শুরু হলো ব্রিটিশ শাসন । পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হলো আমাদের মাতৃভূমি । ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে অবধি দীর্ঘ সময় অনেক ব্যাংক আবির্ভূত হলো আবার অনেক ব্যাংক পাততারিও গুটিয়ে ফেললো । যেসব ব্যাংক টিকে থাকলো এবং পরবর্তীতে জাতীয়করণ হলো সেইসব সরকারি বা পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলির জন্মতারিখ নিচে দেওয়া হলো ।
ব্যাংকগুলির নাম | জন্মতারিখ এবং জাতীয়করণের বছর |
এলাহাবাদ ব্যাংক | ২৪ এপ্রিল ১৮৬৫, জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক | ১৯ মে ১৮৯৪, জাতীয়করণ ১৯৮০ |
ব্যাংক অব ইন্ডিয়া | ৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৬ ,জাতীয়করণ ১৯৮০ |
কর্পোরেশন ব্যাংক | ১২ মার্চ ১৯০৬, জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
কানাড়া ব্যাংক | ১ জুলাই ১৯০৬, জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক | ১৫ অগাস্ট ১৯০৭ ,জাতীয়করণ ১৯৮০ |
ব্যাংক অফ বরোদা | ২০ জুলাই ১৯০৮ , জাতীয়করণ ১৯৮০ |
পাঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাংক | ২৪ জুন ১৯০৮ ,জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া | ২১ডিসেম্বর১৯১১ (প্রথম স্বদেশী ব্যাংক ), জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
ইউনিয়ন ব্যাংক | ১১ নভেম্বর ১৯১৯,জাতীয়করণ ১৯৮০ |
অন্ধ্র ব্যাংক | ২০ নভেম্বর ১৯২৩, জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
সিন্ডিকেট ব্যাংক | ১৯২৫ , জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
বিজয়া ব্যাংক | ২৩ অক্টোবর ১৯৩১ , জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
ব্যাংক মহারাষ্ট্র | ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ , জাতীয়করণ
১৯৮০ |
ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক | ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৭ , জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
দেনা ব্যাংক | ২৬ মে ১৯৩৮ , জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স | ১৯ ফ্রেব্রুয়ারী ১৯৪৩ , জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
ইউকো ব্যাংক | ৬ জানুয়ারী ১৯৪৩ , জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া | ১৯৫০ , জাতীয়করণ ১৯৬৯ |
আইডিবিআই ব্যাঙ্ক | জুলাই ১৯৬৪,ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি |
ভারতীয় মহিলা ব্যাংক | ১৯ নভেম্বর ২০১৩ ,ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া | ২ জুন ১৮০৬,সরকারীকরণ ২ জুন ১৯৫৬ |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাতিয়ালা | ১৭ নভেম্বর ১৯১৭, সরকারীকরণ১৯ জুলাই ১৯৫৯ |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ মহীশূর | ২ অক্টোবর ১৯১৩ , সরকারীকরণ ১৯ জুলাই ১৯৫৯ |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ত্রিবাঙ্কুর | ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, সরকারীকরণ১৯ জুলাই ১৯৫৯ |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ বিকানের জয়পুর | ১৯৬৩ তে সংযুক্তিকরণ (স্টেট ব্যাঙ্ক অফ বিকানের ১৯৪৪ ও স্টেট ব্যাঙ্ক অফ জয়পুর ১৯৪৩ ), সরকারীকরণ ১৯ জুলাই ১৯৫৯ |
স্টেট ব্যাংক অফ হায়দ্রাবাদ | ৮ অগাস্ট ১৯৪১, সরকারীকরণ ১৯ জুলাই ১৯৫৯ |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ সৌরাষ্ট্র | ১৯০২ (১৩ আগস্ট ২০০৮ এসবিআই সঙ্গে মার্জ হয় ) |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্দোর | ১৯২০(১৫ জুলাই ২০১০ , এসবিআই সঙ্গে মার্জ হয় ) |
রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া | ১ এপ্রিল ১৯৩৫ ,জাতীয়করণ ১৯৪৯ |
ব্যাংক তৈরী হওয়ার সময় থেকে জাতীয়করণ অবধি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে অনেক ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেল । বিভিন্ন সময়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্যাংক শিল্পের ওপর আসলো আঘাত । মজবুত ভিতের অভাবে আসলো অর্থনৈতিক সংকট । ব্যক্তিগত মালিকাধীন ব্যাংক তার দায় নিতে চাইছিলনা । আমানতকারীরা তাদের আমানত পুরোপুরি ফেরত পেলনা । ১৯১৩ থেকে ১৯৪৮ সাল অবধি আনুমানিক ১১০০ মত ব্যাংক তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য় হয়েছিল । শুধু ভারতবর্ষে নয় বিদেশেও ১৯৩০ সালের প্রথম দশ মাসে প্রায় ৭৪৪ টা ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছিল এবং ১৯৩৩ সালে সারা বছরে প্রায় ৪০০০ এর বেশি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছিল সারা বিশ্বে । সমস্ত ব্যাংক ছিল ব্যক্তিগত মালিকাধীন । বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাজকর্ম ঠিক মতো চলার জন্য তদানীন্তন ভারত সরকার ব্যাংকিং কোম্পানি অ্যাক্ট ১৯৪৯ হাজির করলো । পরে এর নাম পরিবর্তন করে করা হলো ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৯ । এর দ্বারা রিজার্ভ ব্যাংকের হাতে ব্যাংকগুলো রক্ষনাবেক্ষণ করার প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া হলো । ব্যাংক শিল্প জাতীয়করণ হওয়ার আগে পর্যন্ত দেশের মানুষের ব্যাংকের প্রতি আস্থা ছিল কম । পোস্ট অফিসে অতিরিক্ত সঞ্চয় জমা করার প্রবনতা ছিল বেশি । তার ফলে ব্যাংক শিল্পে সেভিংসের বৃদ্ধির হার ছিল খুবই কম । স্টেট ব্যাংক এবং তার সহযোগী ব্যাংক ছাড়া প্রায় সমস্ত ব্যাংক ছিল ব্যক্তিগত মালিকনাধীন । বেশির ভাগই ছিল বড় বড় শিল্পপতিদের । সাধরণ মানুষের জমানো টাকা ভোগ করত তারাই বেশি । তাদের মূল লক্ষই ছিল লাভ । তার ফলে শহর অঞ্চলের বাইরে স্টেট ব্যাংক এবং তার সহযোগী ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকের পরিসেবা পাওয়াই যেত না । উচ্চ বিত্তের লোকেরাই ব্যাংকের সুবিধা ভোগ করতে পারতো । গ্রামের অর্থনীতির প্রসারে বা যে কোনো শিল্পের অগ্রগতিতে সাধরণ মানুষ ব্যাংককে কখনই পাশে পেত না । সুদখোর মহাজনদের কাছ থকে সাধারণ মানুষকে বেশি সুদে টাকা ধার করতে হত । স্বাধীনতার পরেও দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের গতি ছিল মন্থর । দেশের বেশিরভাগ মানুষের উপার্জন ছিল দ্রারিদ্র সীমার নিচে । দেশীয় অর্থনীতির সুবিধা ভোগ করত মুষ্টিমেয় মানুষ । দেশের অর্থনীতির উন্নতিতে ব্যাংক শিল্পের অবদান অপরিহার্য । তাই দেশের অর্থনীতির উন্নতি সাধনে ১৯৬৯ সালে ১৪ টা ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হয় এবং আরো ছটা ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হয় ১৯৮০ সালে । এর ফল সরূপ সরকারি ব্যাংকের শাখা প্রায় ৮০০% বৃদ্ধি পেল আর ব্যবসা বৃদ্ধি পেল ১১০০% । আজ সমস্ত পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের শাখা ৮৬০০০ এর ওপর আর এটিএম আছে সমগ্র দেশে ১৪২০০০ এর ওপর । সাধরণ মানুষ ভরসা করতে আরম্ভ করলো সরকারি মানে পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলোকে ।পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের লক্ষ্য আর শুধুমাত্র লাভ রইলো না , আসলো সামাজিক দায়িত্ব ।সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলো সরকারী নির্দেশ অনুসারে শুরু করলো :
- মোট ঋণের ১৮% কৃষি খাতে প্রদান করতে
- মোট ঋণের ৪০% প্রায়োরিটি সেক্টরকে (ছোট ,মাঝারি কল-কারখানা ,ছোট ব্যবসা , সমস্ত রকম কৃষি ঋণ, এক্সপোর্ট -ইম্পোর্ট , শিক্ষা- ঋণ,গৃহ – ঋণ ইত্যাদিকে প্রদান করতে
- ক্লাস ব্যাংকিং থেকে মাস ব্যাংকিং । কম টাকাতে ব্যাংকে খাতা খোলার সুযোগ
- অবসরকালীন ভাতা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান
- বিভিন্ন সরকারী ভাতা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান
- কম সুদে সরকারী ঋণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান
- দারিদ্র সীমার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সরকারী অনুদান প্রদান
- কম খরচে বিভিন্ন পরিসেবা প্রদান
- গ্রামে এবং আধা শহরে প্রচুর শাখা খোলা লাভের কথা চিন্তা না করে
- বোর্ড গঠন করে সরকারী নিয়ম অনুসারে কর্মী নিয়োগ
- নতুন নতুন শাখা খোলা আর দিন দিন কর্মী নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া
- এছাড়া দৈনন্দিন ব্যাংকিং
জাতীয়করণের ফলে ব্যবসায়িক ব্যাংকগুলো কয়টি ভাগে বিভক্ত হলো ।
(১) পাবলিক সেক্টর ব্যাংক
(২) প্রাইভেট সেক্টর ব্যাংক
(৩) ফরেন ব্যাংক
(৪) রিজনাল রুরাল ব্যাংক
(৫) কোপেরাটিভ ব্যাংক
পাবলিক সেক্টর ব্যাংক বলতে আমরা বুঝি যে সব ব্যাংকের শেয়ারের শতকরা ৫১ ভাগ ও তার বেশি রয়েছে সরকারের হাতে । সারা ভারতবর্ষে এই মুহুর্তে মোট ৫৬ টা রিজনাল রুরাল ব্যাংক আছে এবং সবাই সরকারী ।এদের ৫০% শেয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের , ১৫% শেয়ার রাজ্য সরকারের এবং ৩৫% শেয়ার স্পন্সর ব্যাংকের মানে পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের ।
উপরোক্ত সবকটি পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু একটি মাত্র ব্যংকের সরকারী শেয়ার শতকরা ৬০ ভাগের নিচে । সুচতুর ভাবে চেষ্টা চলছে সবকটি পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের সরকারী শেয়ার ক্রমশঃ নিচের দিকে নিয়ে আসা । এমন একটা সময় আসবে যখন দেখা যাবে পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলো প্রাইভেট সেক্টরে রূপান্তরিত হয়েছে । সমস্ত ব্যাংক শিল্পের কর্মচারীগণ এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালাছে । ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হয়েছে লড়াই LPG অর্থাৎ Liberalisation, Privatisation and Globalisation(উদারীকরণ , বেসরকারীকরণ ও বিশ্বায়ন ) এর বিরুদ্ধে । যখন ১৩ তম রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর Mr. M. Narasimhan কে দিয়ে একটা কমিটি গঠন করে সরকার ব্যাংক সংস্কারের দিকে নজর দেয় । বিস্তারিত রিপোর্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ হলো: –
- সুদের ব্যাপারে সরকারী নিয়ন্ত্রণ থাকবে না , বাজারের ওপর তা নির্ভর করবে
- সমস্ত ব্যাংকের ৮% ক্যাপিটাল এডিকুইসী (মূলধনের পর্যাপ্ততা ) থাকতে হবে
- সমস্ত ঋণকে চারভাগে ভাগ করতে হবে যথক্রমে স্ট্যান্ডার্ড , সাব স্ট্যান্ডার্ড , ডাউটফুল ও লস
- অনাদায়ে লভাংসো থেকে সংস্থান করে রাখতে হবে সম্পদের জন্য
- ব্যাংকগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে তাদের মূলধন বাড়াতে পারবে শেয়ার বিক্রি করে
- নতুন বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরবিআই নিয়মের কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে
- মোট ঋণের ৪০% – প্রায়োরিটি সেক্টরের পরিমান কমিয়ে ১০% করার কথা বলা হলো অর্থাৎ কৃষিক্ষেত্রেও ১৮% ঋণের পরিমান কমলো
- আন্তর্জাতিক স্তরে ৩ থেকে ৪ টা বড় ব্যাংক তৈরী করা , জাতীয় স্তরে ৮ থেকে ১০ টা এবং গ্রামীণ ব্যাংক শুধু গ্রামীণ এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে
- আর কোনো ব্যাংকের জাতীয়করণ নয় ,নতুন ব্যাংক হিসাবে প্রাইভেট সেক্টর ব্যাংককে স্বাগত জানানো ,ব্যাংকগুলির শাখা খোলার জন্য লাইসেন্সের বিলুপ্তিকরণ , বিদেশি ব্যাংক খোলার ব্যাপারে নীতি আরও উদার করা
- Assets Reconstruction Fund (ARF)নামে নতুন একটা সংস্থা খোলা যারা ব্যাংকগুলি থেকে doubtful assets কম দামে কিনে সেই ঋণ আদায় করবে
শুরু হয়ে গেল কমিটির সুপারিশ কার্যকর করার । ১৯৯২ থেকেই কার্যকর হলো নতুন নিয়ম ব্যাংকের সম্পদের জন্য -New prudential norms for income recognition, classification of assets and provisioning of bad debts এবং capital adequacy measure বা Capital to Risk Weighted Asset ratio । সমস্ত ঋণকে চারভাগে ভাগ করা হলো মুনাফা আদায়ের ভিত্তিতে যথাক্রমে স্ট্যান্ডার্ড , সাব স্ট্যান্ডার্ড , ডাউটফুল এবং লস । স্ট্যান্ডার্ড সম্পদের নাম হলো পারফর্মিং এসেট আর সাব স্ট্যান্ডার্ড , ডাউটফুল এবং লসের নাম হলো নন পারফর্মিং এসেট । মার্চ মাসে রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশ অনুসারে লভাংসো থেকে প্রভিশনিং বা সংস্থান করে রাখা হলো প্রথমে সমস্ত ঋণের জন্য় । তারপর সমস্ত সম্পদের জন্য় । যেসব ঋণে কোনো লিকুইড সিকিউরিটি নেই সেইসব ঋণ নন পারফর্মিং এসেট বা এন পি এ হলে তার প্রভিসনের পরিমান বেশি । এর ফলে প্রতিটা ব্যাংকের লাভ একধাক্কায় অনেকটা কমে গেল বা অনেক ব্যাংকের লাভের জায়গায় ক্ষতি হতে লাগলো । এছাড়াও সমস্ত সম্পদের ঝুঁকির পরিমান নির্ধারণ করা হলো রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশ অনুসারে । মূল সম্পদ থেকে ঝুঁকির পরিমান বাদ দিলে নিট সম্পদের মূল্য বেরোবে । যেমন ধরা যাক মোট গৃহ ঋণের পরিমান ১২০ টাকা , ব্যাংকের কাছে লিকুইড সিকিউরিটি বাবদ ধরা আছে ২০ টাকা আর ঝুঁকির গুনক ৪০% তাহলে ঐ সম্পদের নিট মূল্য দাঁড়াবে =[১২০ – {(১২০ -২০)*৪০ %}] =৮০ । এবার ব্যাংকগুলিকে বলা হলো ৮% মূলধন পর্যাপ্ততা বা capital adequacy রাখতে হবে । তারমানে এই দাঁড়ালো যে (৮০*৮%) বা ৬.৪ টাকা মূলধন হিসাবে ব্যাংককে রাখতে হবে । দিন দিন প্রভিশনিং বাড়ছে , ঝুঁকির গুনক বাড়ছে আর সাথে সাথে কমছে প্রফিট । ব্যাংকের মূলধন বাড়ছে না অথচ সম্পদের পরিমান বাড়ছে তাই সম্পদের ঝুঁকির পরিমানও বাড়তে বাধ্য় । capital adequacy এর মাত্রা(যেটা দিন দিন বাড়ছে, ব্যাসেল ৩ চালু হলে পরিমান আরো বাড়বে ) বজায় রাখতে ব্যাংকগুলিকে বাইরে থেকে মূলধন জোগার করতে হচ্ছে । শেয়ার বিক্রি করা ছাড়া ব্যাংকগুলির কাছে কোনো বিকল্প থাকছে না । বলা হচ্ছে capital adequacy এর মাত্রা ঠিক রাখলে ব্যাংক ফেল পড়বে না অথচ আমেরিকাতে ২০০৮ সালে বড় বড় ব্যাংক ফেল করলো যার মধ্যে অন্যতম লেহমন ব্রাদার্স যার capital adequacy আমাদের যে কোনো ব্যাংক থেকে বেশি । অর্থনৈতিক মন্দায় যখন ২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ টার ওপর ব্যাংক ফেল পড়ল, বিশিষ্ঠ অর্থনীতিবিদদের ভাষায় আমাদের দেশের অর্থনীতি মজবুত রইলো আমাদের পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের জন্য । ব্যাংক শিল্প জাতীয়করণের পর থেকে আজ অবধি প্রায় ৩৪ টার ওপর প্রাইভেট ব্যাংক ফেল পরার হাত থেকে বেঁচে যায় শুধুমাত্র অন্য ব্যাংকের সাথে মিলিত হওয়ার ফলে । এর মধ্যে বেশ কটি ব্যাংক তাদের কার্যভার শুরু করে ১৯৯২ সালের পর অর্থাৎ ব্যাংকিং রিফর্মের পর বা বলা যায় এরা সব নিউ জেনারেশন ব্যাংক ছিল । এদের মধ্যে অন্যতম গ্লোবাল ট্রাস্ট ব্যাংক যাকে ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স , একটা পাবলিক সেক্টর ব্যাংক অধিগ্রহণ করে । ব্যাসেল -১ , ব্যাসেল-২ ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলির ওপর প্রয়োগ করা হয়ে গেছে । সামনের বছর প্রয়োগ হবে ব্যাসেল -৩ , তারফলে ব্যাংকের মূলধন আরও বাড়াতে হবে । নানা কারণে ব্যাংকের এন পি এ দিন দিন বাড়ছে । অনাদায়ের অনেক কারণ আছে কিন্তু তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ বেশ কিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত ভাবে ঋণ পরিশোধ করছে না । যাদের বলা হয় উইলফুল ডিফলটার । পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলিতে মোট উইলফুল ডিফলটারের সংখ্যা ৩১৯২ এবং সম্পদের পরিমান ২৮৭৭৫ কোটি ,স্টেট ব্যাংক ও তার সহযোগী ব্যাংক মিলিয়ে উইলফুল ডিফলটারের সংখ্যা ১৫৪৬ এবং সম্পদের পরিমান ১৮৫৭৬ কোটি , প্রাইভেট ব্যাংকগুলিতে উইলফুল ডিফলটারের সংখ্যা ৭৯২ এবং সম্পদের পরিমান ১০২৫০ কোটি , অনান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উইলফুল ডিফলটারের সংখ্যা ৪২ এবং সম্পদের পরিমান ৭২৮ কোটি , ফরেন ব্যাংকগুলির উইলফুল ডিফলটারের সংখ্যা ৩৮ এবং সম্পদের পরিমান ৪৬৩ কোটি । মোট সমস্ত ব্যাংক মিলিয়ে উইলফুল ডিফলটারের সংখ্যা ৫৬১০ এবং সম্পদের পরিমান ৫৮৭৯২ কোটি । সরকারের আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে ব্যাংকগুলির পক্ষে এই অনাদায়ী সম্পদ আদায় করা কোনো ব্যাপারই না । এইসব সম্পদের সম পরিমান অর্থ প্রভিসন করে রাখার ফলে ব্যাংকের মুনাফা কমে যাচ্ছে । তারফলে ব্যাংকগুলির মূলধন তো বাড়ছে না বরং কমছে ক্ষতি হওয়ার জন্য । খরচা কমাবার জন্য ব্যাংকগুলি বিভিন্ন পদে প্রয়োজনের তুলনায় নিয়োগ করছে কম । যে সংখ্যক কর্মী প্রতি বছর অবসর গ্রহণ করছে সেই সংখ্যক কর্মীও ব্যাংকগুলি নিয়োগ করছে না । পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলির চরিত্র ধীরে ধীরে আবার বদলে যাচ্ছে , বদলে যাচ্ছে তার সামাজিক দায়িত্ববোধ । দেশীয় থেকে হয়ে যাচ্ছে অন্তর্দেশীয় । দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করছে উদারীকরণ , বেসরকারীকরণ ও বিশ্বায়নকে ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos